ঢাকা ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৪৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২৩
তালাশ প্রতিবেদক ॥
বরিশাল নগরীর ২৮ নং ওয়ার্ডস্থ শের-ই বাংলা সড়কের খাল পাড়ের সিটি করপোরেশনের জমির গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে আদনান-উল ইসলাম নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওয়েজ জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমজাদ হোসেনকে ভূল বুঝিয়ে তার স্বাক্ষরিত একটি নোটিশের ভিত্তিতে গাছগুলো কাটা হয়েছে বলে দাবি ওই কর্মকর্তার।
আদনান-উল ইসলাম প্রয়াত ডা. ক্যাপ্টেন সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
গত (১৩ জুলাই) বৃহস্পতিবার থেকে গাছ কাটা শুরু করে খালেদ নামের এক যুবক। ওখানকার ৬টি গাছ খালেদ ৪০ হাজার টাকায় কিনেছেন বলে দাবি তার। খালেদ নিজেই রুবেল, জয়নাল, তরিকুল নামে তিনজন শ্রমিক নিয়ে গাছ গুলো কেটে ফেলেন।
শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- শের-ই বাংলা সড়কের খাল পাড়ের সিটি করপোরেশনের জমির ৬টি গাছ কেটে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন খালেদ। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাৎক্ষনিক ছুটে আসেন খালেদ। এসেই নিজেকে গাছ কাটা শ্রমিক দাবি করে সংবাদকর্মীদের আসার কারন জানতে চান। গাছ কাটার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে প্রথমে তিনি বলেন- আদনান-উল ইসলাম স্যার আমাকে গাছ কাটতে বলেছেন। পরক্ষনে খালেদ সংবাদকর্মীদের কাছে গাছ কেনার বিষয়টি স্বিকার করে উচ্চস্বরে কেদে ফেলেন। কেদে কেদে বলেন- আমার দুইটা বাচ্চা আছে। আমি ঠিকভাবে খাওন-পড়ন দিতে পারিনা, আমার পেটে লাথি মাইরেন না। আমি শ্রমিকদের পিছনেও অনেক টাকা ব্যয় করেছি। আগে জানলে আমি এই গাছ কিনতাম না। এরপর নানা কৌশলে সংবাদকর্মীদের ম্যানেজ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন খালেদ। পরে ব্যর্থ হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
অভিযুক্ত খালেদ।
এ বিষয়ে নোটিশে উল্লেখিত নম্বরে কল দিলে তা রিসিভ করেন আদনান-উল ইসলামের এসিস্ট্যান্ট পরিচয়দানকারী মারিয়া নামের একজন। তিনি জানান- আদনান স্যার অসুস্থ হয়ে ঢাকায় আছেন। কি বিষয়ে কল করেছেন আমাকে বলুন, আমি স্যারের এসিস্ট্যান্ট, আমি স্যারের সব কিছু দেখাশুনা করি। পরে গাছ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- গাছগুলো আমাদের। ওয়েজ জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমজাদ হোসেন স্যার আমাদের গাছগুলো কাটতে বলেছেন। সিটি করপোরেশনের জমির গাছ সে কাটতে অনুমতি দেয়ার কে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- আমরা বিদ্যুৎ অফিসের অনুমতি এনেছি, আমাদের জানা ছিল না যে অন্য কারো অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি জমির গাছ আপনারা বিক্রি করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন- গাছ আমাদের অনেক আগে লাগানো, এই জমির সরকারি হওয়ারও আগে। পরক্ষনে তিনি বলেন- আমি স্যারের সাথে কথা বলে স্যারকে বিষয়টি জানাবো।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার বলেন- বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু দুই পাশে রাস্তা মাঝে খাল রয়েছে, সেহেতু ওই জমি মালিকানাধিন হওয়ার সুযোগ নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ওই ওয়ার্ডের সড়ক পরিদর্শক আশিক ইমাম বলেন- আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটার সত্যতা পেয়েছি। তাৎক্ষনিক গাছ কাটতে নিষেধ করে দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের নির্বাহী স্যারকেও জানিয়েছি। এখন স্যার ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে ওয়েজ জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন- বিদ্যুৎ লাইনের পাশে গাছ থাকলে বিদ্যুৎ লাইনের উপরে পড়ার ঝুঁকি থাকে। সেজন্য শের-ই বাংলা সড়কের কিছু গাছ অপসারনের জন্য একটি নোটিশ দিয়েছি। তবে গাছগুলো সরকারি জমির মধ্যে সেটা আমি জানতাম না। আদনান সাহেবের লোকজন ভূল বুঝিয়ে গাছ কেটে বিক্রি করেছে। সিটি করপোরেশনের জমির গাছ কাটতে আমি অনুমতি দিতে পারিনা। তারা গাছগুলো তাদের ব্যক্তি মালিকানাধিক বলে দাবি করেছিলেন।
Design and developed by Engineer BD Network