ঢাকা ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:২৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০২৩
তালাশ প্রতিবেদক ॥ পশুর ডাক্তার হয়েও মানুষের চিকিৎসা দিচ্ছেন! অবাক হলেও সত্য, আধুনিক যুগে এসেও এ রকম বিরল ঘটনা ঘটেছে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের পানবাড়িয়া এলাকায়। পানবাড়িয়া বাজারে ফার্মেসী দিয়ে একপাশে পশু এবং অন্য পাশে মানুষের ঔষধ বিক্রি ও চিকিৎসা দিচ্ছেন মিজান শরিফ নামে এক পশুর ডাক্তার। তবে তিনি পশুর ডাক্তার হিসেবে খ্যাতি লাভ করলেও প্রাতিষ্ঠানিক কোন কাগজপত্র নেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , কোনো ধরনের সার্টিফিকেট ও অনুমোদন ছাড়াই মিজান পশু ও মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে। হরহামেসাই বিক্রি করছেন নানা জটিল রোগের ঔষধ। অভিযোগ রয়েছে- তার চিকিৎসায় প্রায় শতাধিক পশু মারা গেছে। এছাড়াও তিনি প্রসূতি ও গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
এমন খবর পেয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আজকের তালাশের অনুসন্ধানী টিম যায় পানবাড়িয়া বাজার এলাকায়। গিয়ে দেখা যায় তার ফার্মেসি খোলা রয়েছে। সেখানে বসা ‘মডার্ন ফার্মা’ ঔষধ কোম্পানির এক প্রতিনিধি। তিনি বলেন- মিজান ডাক্তারের ফার্মেসিতে নেই, সে বাসায় গেছে। পরে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আসতে সময় লাগবে বলে ফোন কেটে দেন। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী লোক পাঠিয়ে তাদেরকে হয়রানি করান। এদের মধ্যে মাসুম নামের এক লোক এসে সংবাদকর্মীদের সাথে বাজে ব্যবহার শুরু করেন। এমনকি সংবাদকর্মীদের গায়ে হাত তুলতে উদ্ধত হন। তখন সংবাদকর্মীরা ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন মাসুমসহ স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি।
এরপর প্রায় ২ ঘন্টা পর অর্ধশতাধিক লোক নিয়ে ফার্মেসিতে আসেন মিজান শরিফ। এরপর সংবাদকর্মীরা তার ফার্মেসী ব্যবসা ও ডাক্তারী পেশার অনুমোদন এবং সনদপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ সময় তার সাথে থাকা ব্যক্তিরাও সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্য করে নানা কটুক্তি করা শুরু করেন। তাৎক্ষনিক মিজান তার ফার্মেসীর ক্যাশ বাক্স খুলে একটি পত্রিকার আইডি কার্ড বের করে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। তবে সেটির মেয়াদ আরো ৪ বছর আগেই শেষ হয়েছে। এরপর বরিশালের কয়েকজন সাংবাদিককে ফোন করে ধরিয়ে দেন মিজান। সাংবাদিকরা সকলেই তার পক্ষে ছাফাই গেয়ে সংবাদ প্রকাশ না জন্য অনুরোধ করেন।
সূত্র জানায়, মিজান শরিফ পেশাগত ভাবে একজন পশুর ডাক্তার হিসেবেই পরিচিত। বাজারে তার ফার্মেসি এবং সেখানে তিনি মানুষ ও পশুর ঔষধ বিক্রি করেন। তার ফার্মেসী থেকে বিভিন্ন রকম হাই পাওয়ার এন্টিবায়োটিক ও স্যালাইন বিক্রি হয়। সাধারণত প্রেসক্রিপশন ছাড়াই তিনি এ সব ঔষধ দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ বলেন, তার কাছে সব ধরনের চিকিৎসাই পাওয়া যায়, হোক সেটা মানুষ কিংবা পশু। গ্রামের মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তিনি এই এলাকায় চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তার চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পরে বরিশালে এসে চিকিৎসা নেন। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান- মিজান শরীফ আগে গ্রামে গ্রামে ঘুড়ে পশুর চিকিৎসা দিতেন। হঠাৎ কয়েক বছর যাবত তিনি মানুষের চিকিৎসাও করছেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেই সেখানে ছুটে গিয়ে তিনি নিজেকে মস্তবড় ডাক্তার দাবি করে মনগড়া চিকিৎসা দেন।
তিনি ঠিকভাবে এসএসসি পাশও করেননি, তিনি কিভাবে ডাক্তারি করেন। তার ভাইয়ের বরিশাল শহরে একটি ফার্মেসী রয়েছে। সেখানেও নাকি তিনি রোগী দেখেন এ কথা মিজান সবার কাছে বলে বেরান। স্থানীয়রা আরও বলেন- আমাদের গ্রামে তেমন কোন ডাক্তার নেই। চিকিৎসা নিতে হলে বরিশালে যেতে হয়। গ্রামের অধিকাংশ লোক গরীব হওয়ায় বরিশাল গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিজান পশুর ডাক্তার থেকে মানুষের ডাক্তার হয়ে উঠেছেন।
এ বিষয়ে বরিশালের সিভিল সার্জন ডাঃ মারিয়া হাসান বলেন- পশুর ডাক্তার হয়ে মানুষের চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Design and developed by Engineer BD Network