দেশজুড়ে

আট বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন মা

  প্রতিনিধি ৪ জুলাই ২০২০ , ৮:৫৯:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ ডেস্ক॥ নিখোঁজের দীর্ঘ আট বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন এক মা। মাইদুল ইসলাম সুজন (১৮) নামে ওই ছেলেটিকে শুক্রবার রাতে পটুয়াখালী সদর থানা থেকে বাড়ি নিয়ে যান তার মা বিলকিস বেগম।

 

জানা গেছ, ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাইদুল ইসলাম সুজন মামার বাসা থেকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তুরাগ থানায় তার মা বিলকিস বেগম জিডি করেন।

 

ইসলামী আন্দোলনের পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরআইএম অহিদুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার আমার এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে শহরে কলাতলা এলাকার প্রিয়জন কম্পিউটারে মাইদুলের সন্ধান পাই। মাইদুল বলেন, তার বাবার নাম মতিউর রহমান মুন্সি, মায়ের নাম বিলকিস, বাড়ি টেপুরা। এরপর আমতলী থানার হলুদিয়া ইউনিয়নের টেপুরার সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আবু সালেহকে মুঠোফোনে আমি বিষয়টি জানাই। পরে তিনি সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে ছেলেটিকে শনাক্ত করেন। শুক্রবার দুপুরে মাইদুলকে নিয়ে তার বাড়িতে উপস্থিত হই। এরপর তার মা, নানি ও মামারা দেখে মাইদুলকে শনাক্ত করেন। এ সময় ওই বাড়িতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

 

তিনি আরও বলেন, মাইদুলের খোঁজ পাওয়ার বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার মোরশেদকে জানাই। পরে পুলিশের মাধ্যমে মাইদুল তার পরিবারের কাছে ফিরে যায়।

 

দীর্ঘ আট বছর পরে মাইদুলকে ফিরে পেয়ে মা বিলকিস বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই। আমি এতো দিন মরার মতো বেঁচে ছিলাম। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার নাড়ী ছেঁড়া ধন আমি ফেরত পেয়েছি।

 

মাইদুলের মামা জসিম উদ্দিন মুন্সি বলেন, দীর্ঘ বছর পরে আমরা ভাগনেকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত। মাইদুলকে যে আর ফিরে পাবো আমরা কোনো দিন আশাও করিনি। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া।

 

শহরের কোর্ট এলাকার প্রিয়জন কম্পিউটারের পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, ২০১২ সালে মাইদুলকে পাই। তখন সে তার বাবা-মায়ের নাম বলতে পারছে। আর কিছু বলতে পারেনি। দীর্ঘদিন আমি তাকে নিজের ছেলের মতোই মানুষ করেছি। আজ সে তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। পরিবারের কাছে চলে গেছে। এতে অন্য রকম ভালো লাগছে।

 

মাইদুল ইসলাম সুজন বলেন, আমি আজ আনন্দিত। দীর্ঘ আট বছর পর আমি আমার পরিবার খুঁজে পেয়েছি।

 

বরগুনার আমতলী থানার হলুদিয়া ইউনিয়নের সাবেক সদস্য ও দক্ষিণ কাঁঠালিয়া তাজেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আবু সালেহ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে পটুয়াখালী ইসলামী আন্দোলনের সেক্রেটারি আরআইএম অহিদুজ্জামানের মাধ্যমে সংবাদ পাই- আমার ওয়ার্ডের এক ছেলে দীর্ঘদিন যাবৎ নিখোঁজ ছিল। তাকে পটুয়াখালীতে পাওয়া গেছে।

 

পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওই এলাকায় খোঁজ নিই। মাইদুলের ছোট নানা হলদিয়া টেপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে সব তথ্য পাই। এরপর সঠিক তথ্য দেয়ায় আমি বিষয়টি জানাই দীর্ঘ আট বছর পর টেপুরার এক মা তার সন্তান ফিরে পেয়েছে। টেপুরাবাসী আজ আনন্দিত।

 

এদিকে শুক্রবার রাত ১০টার পটুয়াখালী সদর থানা কম্পাউন্ডে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুকিত হাসান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার মোরশেদের উপস্থিতে মাইদুল ইসলাম সুজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মা বিলকিস বেগমের কাছে ফিরে দেয়া হয়। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

আরও খবর

Sponsered content