Uncategorized

কী ঘটেছিল সীমান্তে ?

  প্রতিনিধি ১৮ অক্টোবর ২০১৯ , ২:৫৬:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত

অবৈধভাবে শূন্যলাইন থেকে প্রায় সাড়ে ৬০০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে স্পিডবোট নিয়ে প্রবেশ করেন বিএসফ সদস্যরা। পাশে ডানদিকে দাঁড়িয়ে আছেন চারঘাট উপজেলা মৎস অধিদপ্তরের প্রতিনিধি,

ঢাকা:
বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিভিন্ন সময় জানিয়েছে উভয়পক্ষ। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দু’পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বিজিবি সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশ সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে বর্তমানে মাছটি আহরণ বন্ধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ আহরণের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচি’র আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করছিল বিজিবি।
সকাল ১০ টার পর সীমান্ত পিলার থেকে আনুমানিক ৬০০ মিটার বাংলাদেশের ভেতরে তিন জেলেকে মাছ শিকার করতে দেখে আটকের চেষ্টা করে বিজিবি। এদের মধ্যে দুই জেলে পালিয়ে যায় এবং একজনকে মাছ ধরার জালসহ আটক করে নদীর বাংলাদেশের দিকের পাড়ে আনা হয়। এরপর বিজিবি টহল টিম জানতে পারে, জেলেদের তিনজনই ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

এর কিছুক্ষণের মধ্যে ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারী ক্যাম্প থেকে চারজনের একটি টহল টিম স্পিডবোটে করে ঘটনাস্থলে আসে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবির অনুমতি নেননি।

বিএসএফ সদস্যরা শূন্যলাইন অতিক্রম করে অবৈধভাবে ৫০০ থেকে ৬০০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে নদীর পাড়ে বিজিবি সদস্যদের কাছে আসেন। এ সময় বিজিবি টহল টিমের সদস্যরা আটক ভারতীয় নাগরিককে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান।

কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা আটক জেলেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং সবার সামনেই তাকে মারধর করেন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা ওই জেলেকে মারধরে বাধা দেন।

বিএসএফ সদস্যদের জানানো হয়, বিজিবি কোনো ভারতীয় নাগরিককে মারধর করে না এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা এলে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আটক জেলেকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ফলে বিএসএফ সদস্যরা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন এবং ওই জেলেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা ছয় থেকে আট রাউন্ড গুলি ছোড়েন।

ঘটনাস্থলে বিজিবি সদস্য ছাড়াও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মতর্তারা ছিলেন। তখন আত্মরক্ষার্থে বিজিবি সদস্যরা পাল্টা গুলি ছোড়েন। এদিকে গুলি করতে করতে বিএসএফ সদস্যরা চলে যান।

পরে বিষয়টি নিয়ে ঘটনাস্থলে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিট থেকে ৫টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিজিবির রাজশাহী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও বিএসএফ ১১৭ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্টের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিএসএফ কমান্ডেন্ট দাবি করেন, তাদের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন এবং একজন সদস্য হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ বিষয়ে উভয়পক্ষ যার যার অবস্থান থেকে তদন্ত করবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।

ভরতীয় গণমাধ্যমে ‘পতাকা বৈঠকে ডেকে গুলি করা হয়েছে’ এমন খবর প্রচারের বিষয়ে রাজশাহী বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পতাকা বৈঠকের প্রশ্নই আসে না, কারণ সেটি করতে গেলে আনুষ্ঠানিকতার বিষয় আছে। এ বিষয়টি তাদের কমান্ড্যান্টও বলেননি। বৈঠক একটাই হয়েছে, সেটা বিকেলে আমার আর বিএসএফ কমান্ড্যান্টের মধ্যে।

তিনি বলেন, পতাকা বৈঠকে এত কিছু হওয়ার সুযোগ ছিল না। পতাকা বৈঠক স্বাধীনতার পর থেকে হয়ে আসছে। আর বিজিবি প্রায় আড়াইশ বছরের পুরাতন একটি বাহিনী। পতাকা বৈঠকে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ নেই। তারা পতাকা বৈঠকে আসবেন আর তাদের ওপর অতর্কিত হামলার কোনো কারণ নেই।

বিজিবির এক কর্মকর্তা বলেন, বিকেলে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিএসএফ কমান্ড্যান্ট বলার চেষ্টা করেছিলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফ সদস্যদের ডাকা হয়েছিল। এর জবাবে বিজিবি জানায়, বিষয়টি এভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তাদের ডেকে নিয়ে এসে গুলি করে মেরে ফেলার কোনো কারণ নেই। এরপরেও বিএসএফের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে বিজিবির গুলিতে বিএসএফের মেজর পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিবি সূত্র জানায়, বিএসএফে মেজর পদবির কোনো অফিসার নেই। মেজর বলতে কোনো শব্দই বিএসএফে নেই। পতাকা বৈঠকেও বিএসএফ কমান্ড্যান্ট মেজর নিহত হওয়ার প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। তিনি দাবি করেছেন, তাদের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন, আর একজন হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ঘটনাস্থলের একটি ছবিতে দেখা যায়, বিএসএফের চার সদস্য ইউনিফর্ম না পরেই স্পিডবোটে করে ঘটনাস্থলে আসেন। অবৈধভাবে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তাই এ সময় পতাকা বৈঠকের কথা বলায় তারা সম্ভবত তাৎক্ষণিক অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন এবং গুলি ছোড়েন।

বিজিবি জানায়, বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির অবকাশ নেই। পতাকা বৈঠকে যার যার অবস্থান থেকে বিষয়টি তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য আবারও পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। স্বাভাবিকভাবে সীমান্তে নিয়মিত টহল এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ বিজিবি-বিএসএফ সীমান্তে স্বাভাবিকভাবে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

এ বিষয়ে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ। কিন্তু এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। এতে আমরা মর্মাহত। বিজিবির মহাপরিচালক বিএসএফ প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। উভয়পক্ষ বসে বিষয়টির সমাধান করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content