প্রতিনিধি ৩ এপ্রিল ২০২০ , ৩:৪৯:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক কলাপাড়া ।।।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নে বেতমোড় গ্রামের খালের পাড়েই বসবাস করে লুছিয়া বেগম। প্রতিদিন শহরে অলিগলিতে
ভিক্ষাবৃত্তি করে দুবেলা-দু’মুঠো অন্নের যোগান দিতেন। করোনার বিস্তার রোধে দোকানপাট বন্ধে এখন লুছিয়ার নেই কোন উপার্জন। অন্যের দেয়া
এক/দুই মুঠো ভাত জুটলে নুন আর মরিচে পিষে পেটে দেন। কিন্তু এখন আর
চলে না। এ বয়সে চলনহীন মানুষটির কাছে নেই কোন স্বজন পর্যন্ত।
স্বামী জয়নাল গাজী অনেক আগেই ইহকাল ত্যাগ করেছেন আরো ২০ বছর
বিক্ষেবৃত্তি করছেন। দুই মেয়ে ছিল। বিয়ে করে তারা ঢাকায় থাকেন। বললেন,
‘হ্যাগো সংসারই চলেনা।’ একটি ছোট্ট ঘরে বসবাস এ বৃদ্ধার।
সবকিছু নিজেরই করতে হয়। অসুখ-বিসুখ, খাওয়া সব যেন ভাগ্যের ওপর
ছেড়ে দিয়েছেন। সরকারিভাবে বয়ষ্কভাতার একটি বই রয়েছে। তাও ২০১৯
সালের জুনের পর আর কোন টাকা পায় নি। ওষুধ লাগলে গ্রামের এক দোকানি
বাকিতে দেয়। ভাতার টাকা পেলে শোধ দেন।
বুধবার সন্ধ্যায় ঘরে উঠে দেখা গেল, চৌকিতে তেল চিটচিটে একটি
বালিশ, পাশে একটি জং ধরা ছোট্ট ট্রাংক। চৌকির ওপর টানানো ময়লা
মশারির একপাশ খোলা রয়েছে। যেন ভাগ্যের ওপর নিজেকে এ বয়সে ছেড়ে
দিয়েছেন অসহায় মানুষটি। ট্র্যাঙ্কের মধ্যে রাখা তার বয়ষ্কভাতার বইটি।
আর কিছুই নেই। একটি ছোট্ট তালাও মেরে রেখেছেন। লকডাউনের পর থেকে
উপার্জনহীন এ বৃদ্ধার পেটপুড়ে খাওয়া জোটেনি। আর চেয়ারম্যান
মেম্বারের চোখেও পড়েনি এর অসহায়ত্ব। সরকার খাদ্য সহায়তা দিলেও লুছিয়ার
জোটেনি।
কলাপাড়া পৌরশহর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে, বুধবার
সন্ধ্যায় লুছিয়ার বসতঘরে খোঁজে গেলে দিশেহারা হয়ে কী করবেন দিশা
পাচ্ছিলেন না। জানালেন এখন দরকার তার খাদ্য সহায়তা। পাতিলে অন্যের দেয়া
পানি দেয়া এক মুঠো ভাত রয়েছে। যা রাতে গিলবেন। ভরসা এই। কালকের খবর
জানা নেই। কে এই বৃদ্ধার কাছে পৌছে দেবেন খাদ্য সহায়তা তা জানেন
না লুছিয়া বেগম। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক
জানালেন, ওনার বাড়িতে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা পৌছে দেয়া হবে।