প্রতিনিধি ২৬ আগস্ট ২০১৯ , ১১:২৮:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল অফিস :-
বরিশালের মুলাদি থানার রাগুয়া কাজিরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা ওমান প্রবাসী মোঃ রাসেল মোল্লাকে ভূয়া ওয়ারেন্টের ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবিসহ ১০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে মুলাদি থানার সহকারি উপ পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই ) সবুজের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী রাসেল অভিযোগ করেন , ২০১৭ সালে কাজিরচর ইউনিয়নের একটি বনভোজন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন রাগুয়া কাজিরচর ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দা শামসুল হক মোল্লার ছেলে রাসেল মোল্লা । উক্ত বনভোজন অনুষ্ঠানে মাদক সেবন চলছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে মুলাদি থানা পুলিশের একটি দল সেই বনভোজনে অভিযান চালালে সেখানে থাকা কাজি মাসুম মিয়ার কাছ থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়। তখন সেখানে উপস্থিত রাসেল মোল্লা ও তার বন্ধু নেছার উদ্দিনকেও আটক করেন মুলাদি থানা পুলিশ। তখন তাদেরকে সন্দেহভাজন হিসাবে আটক করলেও পরবর্তিতে কাজি মাসুম মিয়ার সাথে মাদক মামলায় অভিযুক্ত দেখিয়ে আদালতে প্রেরন করা হয় তাদেরকে।
পরবর্তীতে রাসেল মোল্লা ও নেসার উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মত প্রাথমিক কোন উপাদান বিদ্যমান না থাকায় ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪১ এ ধারামতে তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করে আদালত। এরপরে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে চাকুরির উদ্দেশ্যে ওমান গমন করেন রাসেল মোল্লা। ওমানে দীর্ঘ দেড় বছর কাটিয়ে ২০১৯ সালের রমজান মাসে পরিবারের সাথে ঈদ কাটানোর জন্য দেশে ফিরে আসেন তিনি।
গত ৪ই আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে প্রবেশকালে মুলাদি থানা পুলিশের এএসআই সবুজ কথা আছে বলে তাকে মসজিদের পিছনে ডেকে নিয়ে তার নামে ওয়ারেন্ট আছে বলে অবগত করেন।
এ সময়ে ওয়ারেন্টের কথা শুনে আশ্চর্যান্বিত হয়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান, স্যার আপনার কোথাও হয়ত ভুল হচ্ছে আমি কিছুদিন আগেই বিদেশ থেকে এসেছি আমার নামে যে মামলাটি ছিল সেটা থেকে আমাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আপনাদের পুলিশের ক্লিয়ারেন্সের পরেই আমি বিদেশে গিয়েছি। এসময় রাসেল পুলিশ কর্মকর্তাদের তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে কোর্টের মামলার খারিজ হওয়ার কাগজপত্র দেখালে তার সাথে খারাপ আচরন শুরু করেন এ এস আই সবুজ ও তার সঙ্গী পুলিশ কর্মকর্তা। তাত্ক্ষণিক তাকে থানায় ধরে নিয়ে এসে তার সাথে থাকা মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে যান।
এর কিছুক্ষণ পরেই রাসেল মোল্লার মা মুকুল বেগম ও তার ছোট বোন মনি থানায় উপস্থিত হয়ে কোর্টের মামলার রায়ের কপি দেখিয়ে ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার আবেদন জানালে এ এস আই সবুজের সাথে থাকা অপর পুলিশ কর্মকর্তা রাসেলের মাকে বলেন আপনার ছেলের নামে ওয়ারেন্ট বের হয়েছে ওকে বরিশাল আদালতে প্রেরন করা হবে।
এ সময়ে রাসেলকে কিসের মামলায় আটক করা হয়েছে প্রশ্ন করলে তার কোন জবাব না দিয়ে এ এস আই সবুজ বলেন ছেলেকে যদি আবার বিদেশ পাঠাতে চান তাহলে রাতের মধ্যেই ৫০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে নিয়ে আসেন। নয়ত কোন না কোন মামলায় চালান দিয়া দিমু তারপরে আর বিদেশের ঘ্রাণও পাবেনা আপনার ছেলে। আগেও একবার মাদক মামলায় আটক হয়েছিল এখন শুধু যে কোন মামলায় ঢুকাইয়া দিমু তারপর শুধু বরিশাল আাদালতের বারান্দায় বারান্দায় দৌড়াইবেন আর কাঁদবেন। এই কথা শুনে ছেলেকে বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে ১০ হাজার টাকা এএসআই সবুজের হাতে গুঁজে দিলে রাত ১০ টার দিকে রাসেলকে থানা থেকে ছেড়ে দিয়ে চুপ থাকতে বলেন। এই ঘটনা কারো কাছে বললে আাবারো থানায় ধরে নিয়ে হাত পা ভেঙে আজীবন জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দেন এএসআই সবুজ ও তার সাথে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে রাসেলের বোন মনি জানান, আমার ভাই নিরপরাধ। এর আগেও আমার ভাইকে মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছিল। এবার তো কোন মামলাও নেই। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সবুজ দাড়োগা। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে এএসআই সবুজ ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। রাসেলকে অন্য ব্যাপারে থানায় ডাকা হয়েছে। পরবর্তিতে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কলটি কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভি করেননি।
এ ব্যাপারে মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান জানান, ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে তদন্তকরে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন