প্রতিনিধি ২৫ আগস্ট ২০২০ , ৪:৩৯:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতিনিধি :
দাখিল মাদ্রাসা বরিশালের বাকেরগঞ্জে দুটি মাদ্রাসার নিয়োগ নিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠছে। মাদ্রাসা দুটির অফিস সহকারী, নাইটগার্ড ও আয়া নিয়োগে এ ঘুষ বাণিজ্য করা হয়েছে। মাদ্রাসা দুটি হচ্ছে- পশ্চিম শ্যামপুর বিএম আলিম মাদ্রাসা ও মাসুদপুর কাদেরিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
উপজেলা মাধ্যমিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের পশ্চিম শ্যামপুর বিএম আলিম মাদ্রাসা ও মাসুদপুর কাদেরিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী, নাইটগার্ড ও আয়া পদে ৬ জন নিয়োগ দেয়া হয়। ওই পদের জন্য ১৪ আগস্ট উপজেলার রহমগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে।
পরীক্ষার পশ্চিম শ্যামপুর বিএম আলিম মাদ্রাসা অফিস সহকারী পদে মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতির মেয়ের ঘরের ছেলে (নাতি) এসএম আসাদুল্লাহ, সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে হুমায়ন হাওলাদের মেয়ে তন্নি আক্তার, নাইটগার্ড পদে নাসির আকনের ছেলে হাসান আকন এবং আয়া পদে আলী আকবরের মেয়ে নার্গিস আক্তারকে নিয়োগ দেয়।
অন্যদিকে শ্যামপুর কাদেরিয়া মাদ্রাসার আয়া পদে হারুন সিকদারের মেয়ে পূর্ণিমা আক্তার, নাইটগার্ড পদে খলিল হাওলাদারের ছেলে হাসান হাওলাদারকে নিয়োগ দেয়।
পরীক্ষার শুরু থেকেই পশ্চিম শ্যামপুর বিএম আলিম মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি ফিরোজ আলম অভিযোগ করে আসছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মাদ্রাসার সভাপতি ও সুপার তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন।
তিনি মোবাইল ফোনে জানান, মাদ্রসার সুপার মাওলানা এবিএম বশির উদ্দিন ও মাদ্রাসার সভাপতি আবদুল আউয়াল সম্পর্কে শ্বশুর-জামাই।
যার ফলে পরীক্ষায় জালিয়াতি করার জন্য উপজেলা শহরের বিদ্যালয় রেখে তাদের এক আত্মীয়ের বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়।
আগ থেকেই ডিজির প্রতিনিধি ম্যানেজ করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অফিস সহকারী পদে মাদ্রাসার সুপারের ছেলেকে নিয়োগ দেন। সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে ৪ লাখ টাকা, আয়া পদে ৭ লাখ, নাইটগার্ড পদে ৫ লাখ টাকা নিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেন।
নিয়মানুযায়ী, আয়া ও নাইটগার্ড পদের জন্য অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে তাও মানা হয়নি। ভুয়া সনদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে অশিক্ষিতদের নিয়োগ দেন। এখানে প্রকৃত মেধাবীরা টাকার কাছে হেরে গেছেন।
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার সুপার মাওলানা বশির উদ্দিনকে আগেও দাখিল পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে পুলিশ প্রশাসনের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে বেশ কয়েক মাস জেলও খাটতে হয়েছে। ওই মামলা এখনও চলমান।
আরেক প্রার্থী মনিরের একই অভিযোগ, আমি মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতির কাছে টাকা না দেয়ায় আমাকে নিয়োগ না দিয়ে যার কাছ থেকে বেশি টাকা পেয়েছেন তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। যার কারণে পরীক্ষার আগের রাতে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়েছেন।
এ জালিয়াতির নিয়োগ বাতিল চাই। অন্যদিকে শ্যামপুর মাদ্রাসার আয়া ও নাইটগার্ড পদে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠছে রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ওই মাদ্রাসার সভাপতি বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তবে টাকা নেয়ার বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।
পশ্চিম শ্যামপুর বিএম আলিম মাদ্রাসার সুপার মাওলানা এবিএম বশির উদ্দিন জানান, ৪টি পদে এ নিয়োগ নেয়া হচ্ছে। এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিয়োগের বিনিময় অর্থ নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়, যারা নিয়োগ পায়নি, তারা নানা অভিযোগ করছে।
পশ্চিম শ্যামপুর বিএম আলিম মাদ্রাসার সভাপতি আবদুল আওয়াল জানান, যাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, তারা সবাই এ মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী। ছোট পদে নিয়োগ হচ্ছে, তাই বাইরের লোক আসেনি।
অর্থ নেয়ার কথা আমরা চিন্তা করিনি। আমরা ভালো প্রার্থী নেয়ার চেষ্টা করছি। বাকেরগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকমল হোসেন খান বলেন, দুটি মাদ্রাসায় অর্থ লেনদেনের বিষয় আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি।
পশ্চিম শ্যামপুর বিএম আলিম মাদ্রাসার নিয়োগ কার্যক্রমে আমি ছিলাম না। তবে মাসুদপুর কাদেরিয়া দাখিল মাদ্রাসার নিয়োগে আমি ছিলাম। আমাদের সামনে এ লেনদেন হয়নি। আগে-পরে কোনো লেনদেন হয়েছে কিনা- তা জানা নেই।
অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের তালতলী ভরিপাশা ইসমাইলিয়া দাখিল মাদ্রাসায়ও অর্থের বিনিময়ে ৩ পদে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতি।
নিয়োগ দেয়া পদগুলো হচ্ছে- সহকারী সুপার, আয়া ও নাইটগার্ড। এর আগে মাদ্রাসার ৪ অভিভাবকের দেয়া মামলায় নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও তাও অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ডিজি প্রতিনিধি আনা হচ্ছে।
মামলার বাদীরা হচ্ছেন- নুরুজ্জামান, শাহীন মৃধা, সোহরাব হোসেন ও সালাউদ্দিন মিলন। মাদ্রাসার সুপার আলতাফ হোসেন বলেন, অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। একটি মামলা আছে।
তবে সেই মামলায় কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় নিয়োগ নেয়া হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সভাপতি ফেরদৌস ভুট্টো বলেন, আমার চোখে অপারেশন করার কারণে ঢাকায় অবস্থান করছি।
মাদ্রাসায় একটি মামলা চলছে। তাই কোনো নিয়োগ নেয়া যাবে না। এ মাসেই আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এ কমিটি নিয়োগ দিতে পারে না।
সূত্র যুগান্তর