Uncategorized

কার ভরসায় আবরার ফাইয়াজকে ঢাকায় রাখবো ?

  প্রতিনিধি ১৫ অক্টোবর ২০১৯ , ১:৫৮:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

কার ভরসায় আবরার ফাইয়াজকে ঢাকায় রাখবো ?

কুষ্টিয়া:

নিরাপত্তার শঙ্কায় শেষ পর্যন্ত ঢাকা ছেড়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) হত্যাকাণ্ডের শিকার আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির এই শিক্ষার্থী তার প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন নিজের এলাকার প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। ফাইয়াজের ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া চলে যাওয়ার বিষয়ে তার বাবা বরকত উল্লাহ বলেছেন, ‘দুই ছেলের একজন আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। ওকে দেখে-শুনে আগলে রাখার জন্য বড় ভাই (আবরার ফাহাদ) ছিল। সে-ই যখন চরম নৃংশসতার শিকার হলো, সেখানে আর কার ভরসায়ইবা ওকে (ফাইয়াজ) ঢাকায় রাখবো?’

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ফাইয়াজ বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কলেজ থেকে ছাড়পত্রের আবেদন করলে তা মঞ্জুর করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড। বিষয়টি জানিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক মো. হারুন-অর-রশিদ।

কলেজ পরিদর্শক বলেন, তার আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড ছাড়পত্র অনুমোদন করেছে। বিশেষ ব্যবস্থায় আবেদন করলে এদিনই তার আবেদন মঞ্জুর করা হয়।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কাজী মনজুর কাদির জানান, ‘আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তাকে ভর্তির জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন অপেক্ষায় আছি ঢাকা কলেজ থেকে ছাড়পত্রের কপি হাতে পেলেই ফাইয়াজের ভর্তির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হবে।’

ফাইয়াজের বাবা রবকত উল্লাহ বলেন, ‘ফাইয়াজ ছোট, ওকে দেখে-শুনে আগলে রাখার জন্য বড় ভাই (ফাহাদ) ছিলো। সে-ই যেখানে চরম নৃংশসতার শিকার হলো, সেখানে আর কার ভরসায়ইবা ওকে ঢাকায় রাখবো?’

তিনি বলেন, ‘দুই ছেলের একজন আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এই অবস্থায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাজনিত অজানা শঙ্কা মাথায় নিয়ে জীবন-যাপন আরও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে ফাইয়াজের মা রোকেয়া খাতুনের একাকিত্ব। সব বিষয়ই ভেবে, ওর মা এবং পরিবারের অন্য স্বজনদের ইচ্ছায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো।’

একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গত ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ ব্যাচ) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ৭ অক্টোবর হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানাজানি হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে নিজের অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলে দিয়েছেন, ‘অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় যা–ই হোক, সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’

সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, মা রোকেয়া বেগম এবং ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী জানান, আবরার ফাহাদ হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তার ছোট ভাই ফাইয়াজের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন স্বজনরাও। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার (১৩ অক্টোবর) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহযোগিতা চাইলে তাকে নিশ্চয়ই সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত সরকার। সে যদি মনে করে যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা দরকার, নিশ্চয়ই সরকার সেটা ভেবে দেখবে।

কিন্তু এর মধ্যেই আবরার ফাইয়াজের ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া চলে যাওয়ার বিষয়টি জানা গেলো।