অপরাধ

পলিথিন কান্ডে নলছিটি থানা পুলিশ!

  প্রতিনিধি ২০ অক্টোবর ২০২৩ , ১২:৩০:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদকঃ  ঝালকাঠির নলছিটিতে ট্রাকভর্তি নিষিদ্ধ পলিথিনসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। পাশাপাশি দুটি পিকআপ জব্দ করা হয়েছে। তবে ওই ট্রাকে ৩২০ বস্তায় আনুমানিক ১০ টন নিষিদ্ধ পলিথিন থাকলেও বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৭০ বস্তায় সাড়ে ৪ টন। বাকি ৫০ বস্তা পলিথিন উধাও হবার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠি এলাকার হাওলাদার ব্রিকস্ নামের ইটের ভাটা থেকে তাদের আটক করা হয়। এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় সংবাদকর্মীরা। গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বাঁধা দেন নলছিটি থানার এসআই আউয়াল। সামনে রাস্তা থেকে সংবাদকর্মীদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। সংবাদকর্মীরা চলে আসতে না চাইলে তাদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন এসআই আউয়াল। পরে স্থানীয় মেম্বর সিরাজ মোল্লা ঘটনাস্থলে এসে সংবাদকর্মীদের চিনতে পেরে তাদের রক্ষা করেন। এরপর এসআই আউয়াল ইটের ভাটার ভিতরে যান। এ সময় সংবাদকর্মীরা ফের ইটের ভাটার ভিতরে যেতে চাইলে বাঁধা দিয়ে এসআই আউয়াল সংবাদকর্মীদের আটক করার হুমকি দেন। পরে একটি রফাদফার বিষয় জানতে পেরে সংবাদকর্মীরা কৌশল পাল্টে পুলিশের পক্ষ হয়ে দফারফায় সায় দেয়। এতে কিছুটা নমনীয় হয় এসআই আউয়াল। পরক্ষনে উপস্থিত হন এসআই শহিদুল আলম। তিনি এসে প্রথমে আইনের কথা বল্লেও পরে তিনিও রফায় সায় দেয়। আলামিন নামের একজন পলিথিন ব্যবসায়ীর প্রতিনিধির সাথে এসআই শহিদের উপস্থিতিতে এসআই আউয়ালের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা রফাদফা হয়। এ সময় ঝালকাঠি জেলা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসান ও তার সঙ্গিয় ফোর্স উপস্থিত হলে পাল্টে যায় ঘটনার মোড়। শুরু হয় জব্দ করার নাটক। এ নাটকে তৈরি হয় নতুন মেরু।

সেসময় ডিবি পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের কোন তথ্য না দিয়েই গাড়ি থানায় পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন এসআই শহিদ। এ সময় ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসান তথ্য নেয়ার আগেই গাড়ি থানায় পাঠিয়ে দেয়ার কারন জানতে চান। এ নিয়ে দুজনার মধ্যে তর্কবিতর্ক চলতে থাকে। মেহেদী হাসানকে কোন সন্মান না দেয়ায় সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন- আমার সাথে এমন ব্যাবহার আপনারা দেখেছেন। আমি এসপি স্যরকে শহীদের বিষয়ে জানাবো। আপনাদের কাছে কেউ জানতে চাইলে সত্যটা বলবেন বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ডিবি টিম। পরে বাধ্যে হয়ে ৫ ঘন্টা পরে একটি ট্রাক ও দুইটি পিকআপভর্তি পলিথিন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পাশাপাশি পলিথিন পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি অটোরিক্সা ছেড়ে দেয়া হয়। সেটিতেও বেশ কয়েক বস্তা পলিথিন দেখা গেছে। পরে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক দুজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ ইচ এম রাশেদ।

দণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন- যশোরের বেনাপোল এলাকার মো. শাওন (২৩) ও মো. উজ্জল হোসেন (২৫)।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়- রাজধানীর ঢাকা থেকে প্রায় ১০ টন নিষিদ্ধ পলিথিনের অর্ডার দেন কামরুল, নুরুজ্জামান ও সম্রাটসহ ৫ জন পলিথিন ব্যবসায়ী। যা ৩২০ বস্তায় ভরে একটি ট্রাকে পাঠানো হয়। রাতে পলিথিন আটকের পর সকালে সেই পলিথিন হয়ে গেছে ২৭০ বস্তা আর ওজন হয়েছে সাড়ে ৪ টন। রাতে ট্রাকটি কানায় কানায় ভর্তি থাকলেও সকালে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর দেখা যায় ট্রাক অর্ধেক ফাঁকা রয়েছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় অফিসের হিসাব রক্ষক সুকুমার দাস বলেন- আমরা সকালে গিয়ে ২৭০ বস্তায় সাড়ে ৪ টন নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে নিয়ে এসেছি। আমরা জব্দকৃত ট্রাকের একই মাপের ট্রাক নিয়ে পলিথিন আনতে গিয়েছিলাম। আমরা শুনেছি জব্দ ট্রাকটির কানায় কানায় পলিথিন ভরা ছিল। কিন্তু আনার সময় আমাদের ট্রাকটি অর্ধেক ফাঁকা ছিল। আমার ধরণা- ওখান থেকে কিছু পলিথিন সড়ানো হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় অফিসের উপপরিচালক এ ইচ এম রাশেদ বলেন- আমরা সকালে গিয়ে ২৭০ বস্তায় সাড়ে ৪ টন নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে নিয়ে এসেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক দুজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের জেল প্রদান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে হাওলাদার ব্রিকসের মালিক নাসির হাওলাদার বলেন- পলিথিন তো রাস্তার উপর থেকে আটক করা হয়েছে। সংবাদকর্মীরা তার ব্রিকসে উপস্থিত থাকার বিষয়টি জানালে ভোল পাল্টে তিনি বলেন- আমাদের অগোচরে আমাদের ব্রিকসে গাড়ি ঢুকানো হয়েছে। আমরা বিষয়টি জানতাম না।

এ বিষয়ে নলছিটি থানার এসআই আউয়াল বলেন- যে পরিমান পলিথিন পেয়েছি তা জব্দ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেছি। ট্রাকে ৩২০ বস্তায় আনুমানিক ১০ টন নিষিদ্ধ পলিথিন থাকলেও কেন বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৭০ বস্তায় সাড়ে ৪ টন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। সব পলিথিনই পরিবেশ অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

নলছিটি থানার এসআই শহীদুল আলম বলেন- আমরা গাড়িতে যে পরিমান পলিথিন পেয়েছি তা জব্দ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সামনে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেছি। ওখান থেকে পলিথিন সড়ানোর কোন সুযোগ নাই। মাপে কম দেখাইলে সেটা পরিবেশ অধিদপ্তর দেখাইছে।

ওসি মু. আতাউর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে দপদপিয়া জিরোপয়েন্ট এলাকায় ঢাকা থেকে কুয়াকাটাগামী একটি ট্রাক আটক করলে ট্রাকের ভেতর নিষিদ্ধ পলিথিন পাওয়া যায়। জব্দকৃত পলিথিনের পরিমাণ সাড়ে ৪ টন হবে। এ সময় চালকসহ দুজনকে আটক করা হয়। তবে ট্রাকটি দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠি এলাকার হাওলাদার ব্রিকস্ নামের ইটভাটা থেকে আটক করা হয়েছে এমন তথ্য জানালে ওসি বলেন- বিষয়টি আমাকে এভাবেই জানানো হয়েছে।

ট্রাকে ৩২০ বস্তায় আনুমানিক ১০ টন নিষিদ্ধ পলিথিন থাকলেও কেন বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৭০ বস্তায় সাড়ে ৪ টন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন- আমি ব্যস্ত থাকায় সঠিকভাবে তদারকি করতে পারিনি। আমি খোঁজ নিচ্ছি। এমন কিছু ঘটে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content