প্রতিনিধি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ , ১০:৪৫:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
এবারই প্রথমবারের মতো প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে সরকারীভাবে ২৬ টাকা কেজি দরে সরাসরি আমন ধান ক্রয় করা হয়েছে। সেলক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রয়ারী পর্যন্ত আমন ধান সংগ্রহ করা হলেও বরিশালের অধিকাংশ উপজেলায় ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
সূত্রমতে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কৃষকদের প্রতি নজর রেখে এবার প্রথম আমন ধান সংগ্রহ করা হলেও বরিশালের তালিকাভুক্ত কৃষকরা আমন ধানের পরিবর্তে বোরো ধান খাদ্যগুদামে সরবরাহের চেষ্টা করায় আমন সংগ্রহ নিয়ে বিপাকে পরেছেন অধিকাংশ উপজেলার খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় ইতোমধ্যে অধিকাংশ উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তাদের একাধিকবার শোকজ নোটিশও করেছেন সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে জেলার দশটি উপজেলায় সর্বমোট ১২ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১৫’শ ৯২ মেট্রিক টন, বাকেরগঞ্জে ২৪শ’ ১৯, বাবুগঞ্জে ১৪শ’ ৩১, উজিরপুরে ৭৪৬, গৌরনদীতে ৬৭৪, আগৈলঝাড়ায় ৬১, মুলাদীতে ১৩শ’ ২০, হিজলায় ১১শ’ ২৪, মেহেন্দীগঞ্জে ২৫শ’ ১৮ এবং বানারীপাড়া উপজেলায় ৯৯২ মেট্রিক টন আমন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২/১টি উপজেলায় সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, তাদের দেয়া সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রয়ারী পর্যন্ত এ উপজেলা থেকে ৮৭৪ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু কৃষকদের গাফিলতির কারনে তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে উপজেলা খাদ্য ও গুদাম সংরক্ষন কর্মকর্তারা চরম বিপাকে পরেছেন।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় সাত হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপন করায় ১৬ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু ঘূর্নিঝড় বুলবুলের প্রভাবে এবার ফলন কিছুটা কম হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা ওসিএলএসডি সুভাষ চন্দ্র পাল জানান, আমন ধান সংগ্রহের শুরু থেকেই তালিকাভুক্ত কৃষকদের বিধি মোতাবেক গুদামে ধান নিয়ে আসতে বলা হয়। কিন্তু কৃষকরা আমনের পরিবর্তে বোরো ধান নিয়ে খাদ্যগুদামে আসেন। এছাড়া অনেক সময় পর্যাপ্ত আর্দতা নেই এমন ধান নিয়ে গুদামে আসায় কৃষকদের ফিরিয়ে দিয়ে বিধি মোতাবেক ধান নিয়ে আসতে বলা হয়। তালিকাভুক্ত কৃষকদের খামখেয়ালীপনায় এবার আমন ধান সংগ্রহ অনেকটা ব্যাহত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক অশোক কুমার চৌধুরী জানান, কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে তালিকাভুক্ত কৃষকদের নাম দেওয়ার পরপরই তারা আমন সংগ্রহ শুরু করেছেন। কিন্তু কৃষকরা বিধি মোতাবেক ধান নিয়ে না আসায় লক্ষ্যমাত্রা পূরন করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও জানান, তালিকাভুক্ত কৃষকদের আগে থেকেই আমন সংগ্রহের বিধি জানিয়ে দেওয়া হলেও তারা তা মানেননি। ফলে আমন সংগ্রহ কিছুটা কম হয়েছে।
খোঁজনিয়ে জানা গেছে, জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের ঘরে আমন ধান মজুদ থাকলেও তারা সরকারী গোডাউনে সেই ধান বিক্রি করতে পারছেন না। কারণ হিসেবে জানা গেছে, কৃষকদের তালিকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নাম থাকায় প্রকৃত কৃষকরা তালিকা থেকে বাদ পরেছেন। আর যারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের ধান না থাকায় প্রান্তিক চাষীদের কাছে একাধিকবার ধর্না দিয়েও তারা ধান ক্রয় করতে পারেননি। এ কারণে তালিকাভুক্তরা গোডাউনে ধান বিক্রি করতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চাষীরা বলেন, সরকার প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যের খুচরা বাজারের চেয়ে অধিক ভতুর্কি দিয়ে উচ্চমূল্যে ধান ক্রয়ের ঘোষনা দিলেও আবার তালিকাভুক্তির বেড়াজালে আটক করে দিয়েছেন। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতা তাদের পছন্দের লোকজনকে কৃষকের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করায় প্রকৃত প্রান্তিক চাষীরা বরাবরেই তালিকার বাহিরে থেকে যাচ্ছেন। আর যারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন সেইসব ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এতোদিন প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে খুচরা বাজারের স্বল্পমূল্যে (প্রতিমন পাঁচ থেকে ছয়শ’ টাকা) ধান ক্রয় করে নিয়ে সরকারী গোডাউনে চড়ামূল্যে (প্রতিমন ১,০৪০) বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করেছেন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এবছর প্রকৃত প্রান্তিক চাষীরা ওইসব তালিকাভুক্তদের কাছে তাদের কস্ট ও শ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত আমন ধান স্বল্পমূল্যে বিক্রি না করার কারণেই কথিত তালিকাভুক্তরা সরাকারী খাদ্য গুদামে আমন ধান সরবরাহ করতে পারেননি। এ কারণেও জেলার অধিকাংশ উপজেলায় আমন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। পাশাপাশি সরকার প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ব্যাপক ভর্তুকি দিলেও কৃষক তালিকার বেড়াজালে সরকারের গৃহিত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকরা।