প্রতিনিধি ১৯ এপ্রিল ২০২১ , ৯:৩৩:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
কলাপাড়া ( পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ।। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কোটি টাকা ইজারা মূল্যের
বালিয়াতলি খেয়া’য় ইজারাদার নিয়োগ না দিয়ে সরকারী খাস কালেকশনে নেয়ায় বিপুল পরিমান
অর্থ রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। ১৪২৭ সালে খেয়াটিরদরপত্র আহবানে ৮৯ লক্ষ ৫০ হাজার
টাকার দরপত্র জমা পড়লেও ১৪২৮ সালে রহস্যজনকভাবে দু’বার একটি দরপত্র না পড়লেও
তৃতীয় দরপত্র আহবানে জমা পড়ে ৯ লক্ষ টাকার ইজারা দরপত্র।এরপর ইউএনও, উপজেলা
চেয়ারম্যান কোটি টাকা ইজারা মূল্যের এ খেয়াটি কাঙ্খিত মূল্যের দরপত্র জমা না পড়ার অজুহাতে
খাস কালেকশনে নেয়। এরপর সরকারী তহশিলদারের মাধ্যমে নির্ধারিত টাকা আদায়ের কথা
বললেও খাস কালেকশনে নিয়োজিত ইউএনও’র পাবলিক প্রতিনিধি ইজারা মূল্যের দ্বিগুন অর্থ
আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ১লা বৈশাখ থেকে বালিয়াতলি খেয়াঘাটে সাধারন
মানুষের আর্থিক ভোগান্তি বাড়লেও খাস কালেকশনে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান লাভবান
হবেন এমন গুঞ্জন এখন বালিয়াতলি খেয়া ব্যবহারকারী যাত্রীদের মুখে মুখে।এরআগে ১৪২৫ সালে
ভ্যাট, ট্যাক্স ছাড়াই ৮০ লক্ষ টাকায় খেয়াটির ইজারাদার নিযুক্তি লাভ করেন দিদারুল আলম
বাবুল, ১৪২৬ সালে ৮৪ লক্ষ টাকায় ইজারাদার নিযুক্তি লাভ করেন জাকি হোসেন জুকু, ১৪২৭
সালে ৮৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় খেয়াটির ইজারাদার নিযুক্তি লাভ করেন মো: মুসা গাজী।
এরপর মুনাফাসহ ইজারাদারের এ অর্থ আদায়ে মানুষকে আর্থিক, মানসিক ও শারিরীক
নির্যাতনের শিকার হতে হয়। যা উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় এজেন্ডা হিসেবে আসে
বহুবার। বিষয়টি গনমাধ্যমের শিরোনাম হলে মানুষের কিছুটা স্বস্তি মেলে। এরপর আবার যেই
সেই।শুক্রবার সরেজমিন বালিয়াতলি খেয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, খাস কালেকশনে কাগজে কলমে
নিয়োজিত তহশিলদার কামরুল ইসলাম টোল প্লাজায় নেই। খাস কালেকশন করছে মুসা গাজীর
প্রতিনিধি জানে আলম (৩৬), মো: ফয়সাল (২৬) ও বাবুল মৃধা (৪০)। এছাড়া নৌকায় আছে
অজ্ঞাত অপর দু’জন।এসময় অটো যোগে ২২ বান্ডিল পান নিয়ে যাচ্ছিলেন পৌরশহরের চিংগড়িয়া
গ্রামের বিজয় শীল (৫৫)। খেয়া পারাপার নিয়ে কথা হয় তার সাথে। বিজয় শীল বলেন, ’অটো সহ
খেয়া পারাপার ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এটা আমাদের উপর জুলুম।’ঔষধ কোম্পানী অপসোনিন
ফার্মা’র বিক্রয় প্রতিনিধি মো: মিজানুর রহমান বলেন, ’জরুরী ৪/৫টি ঔষধের কার্টুন নিয়ে
খেয়ায় উঠতে যাওয়ার প্রাক্কালে ইজারাদারের লোকজন দুর্ব্যবহার শুরু করে। কার্টুন নিয়ে খেয়া
পারাপারে ১০০০ টাকা দিতে বলেন তারা। অনেক দর কষাকষি ও অফিস এ টাকা দেবেনা বলে
অনুরোধ করার পরও ৪০০ টাকা নেয় তারা।’স্কয়ার ঔষধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি আবুল
বাশার বলেন,’খেয়া পারাপারে ঔষধের কার্টুন প্রতি ৩০০ টাকা দিতে হয়। তাও এনিয়ে
ইজারাদারের লোকজনের সাথে সমঝোতা হওয়ার পর।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খেয়া ঘাট এলাকার
স্থানীয় একব্যবসায়ী বলেন, ’রাত ৮টার পর খেয়া পারাপারে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করা হয়। ২৪
ঘন্টা চলে এ খেয়া। এই ঘাটেই সবচেয়ে বেশী ইনকাম ইজারাদারের।’খাস কালেকশনের দায়িত্বে
নিয়োজিত মুসা গাজী জানান, ২০০৮ ইং সাল থেকে এ খেয়া পরিচালনা করছেন। খেয়া ঘাটে ৩টি
খেয়া নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে। এরমধ্যে দু’টি বড়, ১টি ছোট। এসব নৌযানে বছরে তেল, মবিল
খরচ হয় বারো লক্ষ সাড়ে চার হাজার টাকা। বছরে নৌকা মেরামত খরচ ২ লক্ষ টাকা, পন্টুন সহ
ঘাট মেরামত খরচ ২/৩ লক্ষ টাকা হয়। এছাড়া ডে শিফট ও নাইট শিফটে কর্মরত ১২ জন
লোকের বছরে বেতন খরচ ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। এদের নিম্নে ২ হাজার টাকা করে বছরে ২টি
ঈদ বোনাস বাবদ আরও খরচ আছে ৪৮ হাজার টাকা। এছাড়া ঘাট ইজারা ও নৌকা তৈরী খরচ
সহ কোটি টাকা ইনভেষ্ট করে গত বছর প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা লোকসান হওয়ায় এবছর ৯ লক্ষ
টাকায় দরপত্র লিখে জমা দিয়েছি।’তবে খাস কালেকশনের খেয়া ঘাটে তহশিলদারের অনুপস্থিতি,
টাকা আদায় ও সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া কিংবা ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের
কাছে জমা দেয়া সংক্রান্ত বিষয়ের সব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। গতবছর লোকসান হলেও
এবছর তা পুষিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।উপজেলা হাট, বাজার ও খেয়া ইজারা
কমিটির সদস্য কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎ বন্ধু মন্ডল বলেন, ’এবছর তিন বার
দরপত্র আহবান করেও পূর্বের ৩ বছরের ইজারা গড় মূল্যের কাঙ্খিত দরপত্র জমা না পড়ায়
খেয়াটি খাস কালেকশনে নেয়া হয়েছে। তহশিলদারের তত্ত্বাবধানে খেয়ার ইজারা আদায় করার
পর আদায়কৃত অর্থ খাস কালেকশনের কোডে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নিয়ম বলে
মন্তব্যকরেন তিনি।’ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক’র বক্তব্য জানতে একাধিকবার
সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেও তিনি রিসিভ না করায় সংযোগ পাওয়া যায়নি।এদিকে, আজ
শনিবার ঢাকা থেকে আমার নিউজের পক্ষে ইউএনও’র সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে খেয়া
ইজারায় কোন অনিয়ম হয়নি বলে তিনি জানান।তিনি বলেন বালিয়াতলিতে বড় সেতু নির্মিত
হয়েছে যা আগামী জুলাই মাসে উদ্ভোধন হতে পারে। সেজন্য খেয়াঘাট ইজারার ক্ষেত্রে কাঙ্খিত
দরপত্র পাওয়া যায়নি। সে কারনে খাস কালেকশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন সেতুটি চালু হলে
এ খেয়ার আর প্রয়োজন হবেনা বলে মনে করেন তিনি।উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম
রাকিবুল আহসান বলেন, ’খেয়াটির ইজারা দরপত্র পরিষদের ম্যানুয়াল অনুযায়ী দু’বার আহবান
করা হলেও একটিও দরপত্র পড়েনি। তৃতীয় দরপত্র আহবানে মুসা গাজী ৯লক্ষ টাকার দরপত্র জমা
দেয়। যার দরুন এটি খাস কালেকশনে নেয়া হয়। এর ইজারা মূল্য বহু পূর্বের, তাই মিটিং করে
মূল্য সংশোধন করে হালনাগাদ করে দেয়া হবে।’ রাকিবুল আহসান আরও বলেন, ’খাস
কালেকশনে নেয়ার বিষয়ে এক টাকারও সংশ্লিষ্টতা নেই আমার ও ইউএনও সাহেবের। এক মাস
পর আমরা বলতে পারবো কত কালেকশন হয়েছে।’