প্রতিনিধি ২৩ অক্টোবর ২০২৪ , ১১:৩১:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
বানারীপাড়া প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ভাঙন কবলিত সন্ধ্যা নদীর বালুমহল থেকে আদায়করা অর্থের ভাগ-বাটোয়ারার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধা স্বাক্ষরিত ওই তালিকা অতি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ফলে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধা বলেন, সন্ধ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতো মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ। গত ৫ আগষ্টের পর তারা বালু উত্তোলনের জন্য আর আসেনি। পরে প্রতিষ্ঠানের সাথে বানারীপাড়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান জুয়েল চুক্তিকরেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী বালু উত্তোলন করে বিক্রি করাহয়। লাভের টাকা ১৭ বছর বঞ্চিত ও নির্যাতিত বিএনপির নেতাকর্মীসহ অঙ্গসংগঠনে ভাগকরে দেয়া হয়েছে। মোট একমাস ১৭ দিনের লাভের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে। বরিশালের বটতলায় একটি হোটেলে বসে এ ভাগবাটোয়ারার তালিকাকরাহয় বলেও উল্লেখ করাহয়। ছড়িয়ে পড়া তালিকায় ওই বিএনপি নেতা দলের প্রভাবশালী কাউকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন “নেতা আমি যে টাকা পাই আমার এখানে যারা সব সময় থাকে তাদের অধিকাংশকে একহাজার/দুইহাজার টাকা করে দিয়েছি, তাহলে দয়া করে বিবেচনা করে দেখুন আমি একা বালির টাকা খাইকিনা? তাহলে কেন আমার বিরুদ্ধে এত যড়যন্ত্র হ্যাঁ আমার দোষ দলীয় লোকজন যে কাজে আসে সে কাজ গুলো করার চেষ্টা করি এবং আপনার নির্দেশ পালন করি। আল্লাহ হাফেজ ভালো থাকবেন সুস্থ’ থাকবেন। নিচে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধার স্বাক্ষর, নাম ও দলীয় পদবী রয়েছে। তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০২৪ইং।
তালিকায় মোট দুইলাখ ৪০ হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারার হিসেব দিয়েছেন। তবে তিনি (রিয়াজ মৃধা), পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান,উপজেলা যুবদলের সভাপতি সুমন হাওলাদার ও চাখারের যুবদল নেতা সনেট তালুকদার কত করে নিয়েছেন সেটা উল্লেখ করেননি। এ বিষয়ে রিয়াজ মৃধা বলেন নেতা-কর্মীদের ভাগ করে দেওয়ার পরে লাভের টাকা যা ছিল বালুমহল নিয়ন্ত্রণক রায় তারা ৪ জন তা ভাগ করে নিয়েছেন।
তালিকায় প্রথম নাম রয়েছে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. শাহ আলম মিঞা। তার জন্য বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা, পৌর বিএনপির আহবায়ক নান্না হাওলাদারকে দিয়েছেন ১০ হাজার টাকা, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুসসালামকে ২৫ হাজার, বিএনপি নেতা রুহুল মল্লিককে ১০ হাজার, এ্যাড. জাহাঙ্গীরকে ৫ হাজার, চাখার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলমগীর মেম্বারকে ৫ হাজার, চাখারের বিএনপি নেতা সেলিম বালীকে ১০ হাজার, কুদ্দুস ফকিরকে ৫ হাজার, সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হানিফ হাওলাদারকে ৫ হাজার সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খানকে ৫ হাজার, সাংগঠনিক সম্পাদকআহম্মদ মীরাকে ৫ হাজার, ১ নংওয়ার্ড সভাপতিআলমগীর হোসেনকে ৫ হাজার, থানাযুবদল ১০ হাজার, পৌরযুবদল ১০ হাজার, থানা ও পৌর ছাত্রদল ১০ হাজার করে, থানা স্বেচ্ছাসেবক দল ১০ হাজার, পৌর স্বেচ্ছাছাসেবক দল ১০ হাজার, থানা ও পৌর শ্রমিক দলকে ৫ হাজার করে, থানা কৃষক দলকে ৫ হাজার, থানা মৎস্যজীবী দলকে ৫ হাজার ও সাংবাদিক ২০ হাজার টাকা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলনের ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান গত ৫ আগষ্টের পর আসেনি। এরপর থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি বিএনপির নেতারা নিয়ন্ত্রন করে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা সেখান থেকে নেয়। ছড়িয়ে পড়া তালিকা প্রতিদিনের হিসেব। বানারীপাড়া সন্ধ্যা নদীর বালুমহাল ইজারাদার মনির হোসেনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডাঃ অন্তরা হালদার জানান, বালু তুলতে না পারার বিষয়ে বালুমহল ইজারাদার কোন অভিযোগ করেননি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।