প্রতিনিধি ৩০ জুন ২০২০ , ১০:৩৮:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ ডেস্ক ॥ সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ৫০ যাত্রীসহ ফরাশগঞ্জ ঘাটে ডুবে যায় মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড। নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ দিনভর উদ্ধারকাজ চালিয়ে ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও ঘটনার দিন রাতে অলৌকিকভাবে জীবিত উদ্ধার হওয়া আরেকজনে খবর ও পাওয়া গেছে।
সবশেষ মঙ্গলবার লঞ্চটি এয়ার লিফ্টিং ব্যাগের মাধ্যমে কিছুটা ভাসিয়ে নদীর তীরে আনার সময় আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৩টি শিশু, আর বাকি লাশের মধ্যে রয়েছে ৯ নারী ও ১৯ জন পুরুষ। সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ঘটনাটি দেখে তাঁর পরিকল্পিত মনে হয়েছে।
নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেড় লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আটক করা হয়েছে ময়ূর-২। চালক পলাতক। আমার বাড়ি ভোলার সদর উপজেলায়। লঞ্চেই যাতায়াত। লঞ্চডুবিতে কোনো এক বা একাধিক সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, এমন কয়েকটি পরিবার আমার পরিচিত। লঞ্চডুবিতে উদ্ধার অভিযান মানে মূলত ডুবুরিদের লাশ উদ্ধার, উদ্ধারকারী যান আসতে কত ঘণ্টা বা কত দিন লাগবে তার অপেক্ষা, পাড়ে সারি সারি লাশ থেকে কোনটা নিজের স্বজনের লাশ,
তা মিলিয়ে দেখার দুঃসহ অভিজ্ঞতা, পরের কয়েক দিন দূরদূরান্ত থেকে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে স্বজনদের দক্ষিণের নদীর দিকে ছোটা, একপর্যায়ে আর লাশ দেখে চেনা যায় না, তখন পরনের পোশাক দেখে চেনার চেষ্টা।
মর্নিং বার্ডের দুর্ঘটনায় হতভাগ্য ৩৩ ব্যক্তির সলিল সমাধী। সদরঘাট যেটা আমাদের ভোলাবাসীর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নিত্যদিনের যাতায়াতের অন্যতম স্থান। রাজধানী থেকে বাড়ি ফিরতে কিংবা বাড়ি থেকে রাজধানী’তে প্রবেশের একমাত্র প্রবেশদ্বার। এখন পর্যন্ত লঞ্চ’ই হচ্ছে আমাদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যমে।
যেকোন লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটলে দেশবাসীর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ফিলিংস’টা অন্যদের চেয়ে বেশি। সে কারনে হ্রদয়ের রক্তক্ষরণ টাও অন্যদের থেকে আলাদা আমাদের। সকাল ৯ টায় মাত্র ৫২ সেকেন্ডে যে মর্মান্তিক ঘটনা ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যম ও ভার্চুয়াল মাধ্যমের মাধ্যমে দুনিয়ার মানুষ অবলোকন করলো সেটা নিছক কোন দূর্ঘটনা নয়। এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলেই উল্লেখ করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীসহ সচেতন নাগরিক সমাজ।
সরকার সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে, যেটা সরকার যে কোন ঘটনা ঘটলেই করে। মানুষ জানে এসব কমিটির কি কাজ। আরেকটা ঘটনা ঘটা পর্যন্ত এই তদন্ত কমিটি যেমন ভূলে যাবে। আমরাও ভুলে যাব এ ঘটনা। শুধু স্বজনহারা হতভাগ্য পরিবারগুলো এ ক্ষত আজীবন বয়ে বেড়াবে।
হয়তো হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চ মর্নিং বার্ড জেগে উঠবে দু’দিন আগে বা পড়ে। উপর মহল কে ম্যানেজ করে লঞ্চ ময়ূরী ময়ুরীও হয়তো আবার চলবে। কিন্তু আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে ওই ডাকাত লঞ্চ মালিকদের হাতেই তুলে দিবে সরকার। কিন্তু প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলার কারনে যে আমাদের হাজারো স্বপ্ন পানির নিচে ডুবে রবে। সেই স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে এখনও কি ঘাটে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন মনে করবেনা কতৃপক্ষ?
ঢাকা বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে গত ৫ বছর নৌ দুর্ঘটনার পরপরই কখনো ৩ সদস্য ৫ সদস্য ও ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দেয়ার পরে সেসকল তদন্তের প্রতিবেদন ও দোষী ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত বিচার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। সেধরনের কোন নজির এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
অন্যদিকে নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটলে নৌযানসহ মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা রাখা হলেও সড়ক পরিবহনের দুর্ঘটনায় মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না রাখায় লঞ্চ মালিক সমিতি রয়েছে চরম ক্ষোভে এবং এধরনের কালো আইন বাতিলের দাবীও জানান ক্ষুব্ধ জনতা।
অন্যদিকে সমুদ্র পরিবহন কর্তৃপক্ষ বড় ও ছোট নৌযানের সারেং মাষ্টার ও সুকানীদের কি ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে তারা সনদ প্রদান করে তা নিয়েও মালিক পক্ষের রয়েছে নানা অভিযোগ।।সূত্রমতে আমাদের দেশে লঞ্চডুবির ঘটনা নিয়মিত এবং অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলোর একটি। প্রায় প্রতি বছরই নৌপথে ছোট-বড় লঞ্চ বা ট্রলার দুর্ঘটনা অহরহ ঘটনার জন্ম দিচ্ছে।
সেই সাথে প্রতি বছরই লঞ্চডুবির ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। দেখা যায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রীবহন চালকদের অদক্ষতা-অনভিজ্ঞতা লঞ্চের নকশায় সমস্যা লঞ্চের ফিটনেস তদারকির অভাব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
মিডিয়ায় দেখলাম সদ্য ডুবে যাওয়া লঞ্চ নিয়েও অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। অনেকেই বলেছে লঞ্চে লাইফ জ্যাকেট ছিলোনা। আবার কেউ কেউ বলেছে ঘাটে বিশৃঙ্খলার কারনেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা জানতে চাই দুর্ঘটনার রেস কেটে গেলেই আর কারও নজর থাকেনা এদিকে। এমনটা কেনো হচ্ছে? কতৃপক্ষ কি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন? নাকি এর পিছনেও নেপথ্যে কারণ রয়েছে?