ঢাকা

নাবিক রাজুর বাড়িতে কান্নার রোল

  প্রতিনিধি ১৩ মার্চ ২০২৪ , ১১:০২:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক আনোয়ারুল হক রাজুর (২৯) নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। পরিবারে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তাকেসহ জিম্মি সবাইকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

 

বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে রামপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজুল হক মাস্টার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জিম্মি নাবিক রাজুর বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই কান্নাকাটি করছেন।

 

আনোয়ারুল হক রাজু রামপুর গ্রামের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) থেকে সিডিসি কোর্চ শেষে নাবিক হিসেবে জাহাজে যোগদান করেন।

 

নাবিক রাজুর বড় ভাই জিয়াউল হক রনি (৩২) বলেন, “গত নভেম্বরের শেষ দিকে রাজু সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে ওঠে। সোমবার (১১ মার্চ) সে আমার মোবাইলে মেসেজ করে, ‘সোমালিয়ান পাইরেটস অনবোর্ড। বাঁচি থাকলে দেখা হবে, দোয়া কইরেন…’। এরপর রাত ১০টায় ভয়েজ মেসেজে জানায়, ‘আমাদের সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, দোয়া করবেন’।”

 

বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, ‘অপহরণের খবর শোনার পর থেকে আমাদের পরিবারে হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তার মা ক্ষণে ক্ষণে ছেলের জন্য মূর্ছা যাচ্ছে। আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সহযোগিতা কামনা করছি।’

 

নাবিক রাজুর মা দৌলত আরা বেগম (৬০) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ভাঙা ঘর ছিল। এখন বিল্ডিং দিচ্ছি। কাজ শেষ হলে দুই ছেলেকে একসঙ্গে বিয়ে করাবো। অনেক আশা নিয়ে আছি। কিন্তু আমার ছেলেসহ ২৩ মায়ের ছেলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। আমি আমার ছেলেসহ সবার মুক্তি চাই। সরকারের উচ্চমহলের সহযোগিতা চাই।’

 

রাজুর বন্ধু মো. ইমরান বলেন, ‘সে শেষ মেসেজে জানিয়েছে, দস্যুরা তাদের ইফতার করতে দিয়েছে। যার যার কক্ষে আটকে রেখে বের হতে নিষেধ করেছে। সোমবার রাতের পর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমরা রাজুসহ সবার মুক্তি চাই।’

 

অপহৃত জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। যার নাম ‘এমভি আবদুল্লাহ’। পণ্যবাহী জাহাজটি কয়লা নিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল দুবাই। বুধবার জিম্মি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

 

জাহাজটিতে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

 

এদিকে বুধবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশি জাহাজটি এখন উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে। সোমালিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’

 

এমভি আব্দুল্লাহ দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক ক্যারিয়ার।

বৈশ্বিক জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী সাইট মেরিন ট্রাফিক জানিয়েছে, জাহাজটি ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই এর দখল নেয় জলদস্যুরা।

 

জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চন্দনাইশ উপজেলার বরকলের বাসিন্দা চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সাতকানিয়ার সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, ফরিদপুরের মধুখালীর থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, টাঙ্গাইলের নাগপুরের ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, নওগাঁ সদর উপজেলার চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, খুলনার সোনাডাঙ্গার সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলাম ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার রোকন উদ্দিন, ফেনীর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ ও ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আনোয়ারুল হক।

 

ক্রুদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানার শরিফুল ইসলাম, লোহাগাড়ার আসিফুর রহমান, মিরসরাইয়ের মোশাররফ হোসেন শাকিল ও আইনুল হক, কর্ণফুলীর সাজ্জাদ হোসেন, নুর উদ্দিন ও মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদ, সিরাজগঞ্জের কামারাখন্দের নাজমুল হক ও বরিশালের বানারীপাড়ার আলী হোসেন।