প্রতিনিধি ২৬ আগস্ট ২০২৪ , ১২:০৫:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ ডেস্ক ॥ চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলন করে আসছিলেন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রোববার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে প্রবেশ করে সারাদিন সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা।
একপর্যায়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপরেও হামলা করেন এই বাহিনীর সদস্যরা। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ছাড়াও শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হলে তাদের ওপরেও হামলা করেন আনসার সদস্যরা। এতে ৬ সেনাসদস্য আহত হন, যাদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আনসার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তির নাম কাদের। তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ষাটঘর তেওতা (বিলপাড়া) এলাকার ফজলুল হকের ছেলে এবং তেওতা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। কাদের বর্তমানে ঢাকার হযরত শাহ জালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনসারের পিসি হিসেবে কর্মরত।
এদিকে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়া আনসারদের নেতৃত্ব দিয়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন কাদের। সচিবালয়ের ভেতরে বক্তব্য দেওয়া ওই ব্যক্তি যে আনসার সদস্য কাদের, সেটি স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও প্রতিবেশী সফিউদ্দিন বিশ্বাস নিশ্চিত করেছেন।
সফিউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, কাদের দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সে আনসারে চাকরিও করছেন এবং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ভিডিও দেখার পর নিশ্চিত হয়েছেন জানিয়ে সফিউদ্দিন আরও বলেন, ইউনিয়নে বিভিন্ন সময় ভিন্নমতের লোকজনদের নানাভাবে হয়রানিও করেছেন কাদের। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাদের ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। সে আনসার বাহিনীতে চাকরি করেন। প্রায় ১০ বছর আগে সে আনসার বাহিনীতে চাকরিতে ঢুকেছে।
এদিকে, কাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি তার রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখার জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে কাকুতি মিনতি করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা নেতৃবৃন্দরা জানান, কাদেরের মতো আনসাররা ঘাপটি মেরে থেকে ষড়যন্ত্র করছিলো তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তাদের।
প্রসঙ্গত, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে রোববার সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে প্রায় ১০ হাজার আনসার সদস্য অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে দুপুর ১২টা থেকে তারা সচিবালয় ঘেরাও করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৭ জন উপদেষ্টাসহ সচিবালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। উত্তেজিত আনসার সদস্যদের শান্ত করার জন্য বিকেলে বাহিনীটির মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি সচিবালয়ে এসে আনসার সদস্যদের সব দাবি মেনে নেন।
তবে দাবি মেনে নেওয়া হলেও অবরোধ চালিয়ে যান আনসার সদস্যরা। ফলে বিকেল ৫টায় অফিস ছুটি হলেও উপদেষ্টারাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকা পড়েন। এ সময় সচিবালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
পরে শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধদের উদ্ধার করতে রাত ৯টায় সচিবালয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে লাঠি, কাঠের টুকরা, লোহার পাইপ দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হন। শিক্ষার্থীরা ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘দালালির ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’সহ নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট মাজার গেট মোড় পেরিয়ে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে ধাওয়া দেন আনসার সদস্যরা। পাল্টা ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরাও। দুপক্ষের ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। সচিবালয় অংশ থেকে গুলির শব্দও শোনা যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং ২৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন সেনা সদস্যরা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলার পর আনসার সদস্যরা পিছু হটেন। শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে আনসার সদস্যরা সচিবালয় ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত করেন।