প্রতিনিধি ২৮ মে ২০২৪ , ৩:১০:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ টানা ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকায় বরিশাল নগরীতে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে রান্নাবান্না। পানির অভাবে বন্ধ রয়েছে নগরীর বেশির ভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্ট। এ জন্য কিনেও খাবার খেতে পারছেন না নগরবাসী।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রবিবার (২৬ মে) রাত ১টা থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে গোটা নগরী। একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার দশ উপজেলায়।
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘রিমালের প্রভাবে বাতাস এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গাছ ভেঙে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। এ ছাড়া বহু খাম্বা উপড়ে পড়েছে। ঘটনার পর থেকেই অর্ধ শতাধিক টিম নগরীতে বিদ্যুৎ সচলের জন্য কাজ করছে। গতরাতে সহজ কাজগুলো শেষ করা হয়েছে, আজ সকাল থেকে কঠিন কাজগুলো শেষ করে বিদ্যুৎ সচল করা হবে।’
নগরীর কালুখার বাড়ির বাসিন্দা আলী নেওয়াজ খান রানা জানিয়েছেন, তার বাসায় পানি ঢুকেছে। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছেন। ৩০ ঘণ্টার অধিক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ভাড়াটিয়াদের পানি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। তার বাগানের বেশির ভাগ গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু কলোনির বাসিন্দা লাইলী এবং অন্যরা জানান, কীর্তনখোলা নদীর পানি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। আজ সকালে পানি কমা শুরু হলে ঘরে এসে সব অগোছালো অবস্থায় দেখতে পান। ঘর থেকে পানি সেচে বের করে এখন কীভাবে রান্না করবেন তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ কাঠের চুলা ভেঙে গেছে। ঘরে পানি নেই। খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই। অক্সফোর্ড ভিশন রোডের বাসিন্দা কাজী মিরাজ জানিয়েছেন, সকাল থেকে অন্যান্য এলাকার পানি নেমে গেলেও তাদের এলাকায় এখনও নামেনি। আর বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিদ্যুৎ না থাকায়। ব্যবসায়ী শাজাহান মিয়া জানিয়েছেন, তার রাইসমিল এবং ময়দার মিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মিলের মধ্যে পানি ঢুকে গম এবং চাল নষ্ট করেছে।
হোটেল ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানান, গতকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় পানি বা পানির ব্যবস্থা করতে পারেননি হোটেলে। এ কারণে গতকাল তার হোটেলে রান্নাবান্না হয়নি। আজও বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করে রান্না করেছেন অনেক কষ্ট করে। জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। রান্না থেকে শুরু করে টয়লেটে ব্যবহারের জন্যও বোতলজাত পানি কিনতে হচ্ছে তাদের।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। তবে এখন রিমাল থেকে সবাই মুক্ত।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রিমালের প্রভাবে দেয়াল ধসে দুজন এবং গাছচাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের বিদ্যুৎ সচল করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আজকের মধ্যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সচল হবে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি, বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করছি।’