প্রতিনিধি ২৩ জুন ২০২৪ , ৩:০৬:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। একটি দলের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা। বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসে কিভাবে দেশ চলবে সেই দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। কারণ জনগণ সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতারা গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বারবার আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার দলের উপরে আঘাত এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। জনগণের আত্ম সামাজিক উন্নয়ন করার সংগঠন। ২০০৭ সালের চেষ্টা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার।
কিন্তু তৃণমূলের মানুষ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী মাথানতো করেনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাথা নত করে না। কেউ দল ছেড়ে অন্য দল করেছেন। কেউ দল ছেড়ে দিয়েছেন। যেসব নেতারা ভুল করেছিলেন, তারা এই দলে ছিলেন বলেই আলোকিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বাংলা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আমলের ইতিহাস বঞ্চনার ইতিহাস। মানুষের হাহাকারের ইতিহাস। সন্ত্রাস খুনের ইতিহাস। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। দারিদ্রের হার কমিয়েছি। দরিদ্র বাংলাদেশে থাকবে না সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আগে পনের ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পেত। কিন্তু এখন ৫৮ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে। আজকে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ৩৫ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছি। স্বাক্ষরতার হার ছিয়াত্তর পয়েন্ট আটে উন্নত করতে পেরেছি। দেশের ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে পড়াশোনায়। আমি ছেলেদেরও বলবো পড়াশোনা করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার সাথে কারিগরি শিক্ষা আরও বৃদ্ধি করতে চাই। দেশের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা উন্নয়ন করেছি। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। গবাদি পশু দুই গুণ বৃদ্ধি করেছে উৎপাদনে। দুধ উৎপাদন ৭ গুণ বৃদ্ধি করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করুক সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ছোট বোনকে নিয়ে বিদেশে ছিলাম। শুনলাম বাবা-মাসহ সবাইকে পরিবারের হত্যা করা হয়েছে। আমার ছোট ভাই শেখ রাসেলর বয়স মাত্র ১০ বছর ছিল। সেই শিশুটি রেহাই পাইনি। সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট আপনজনকে হারাই। আশ্রয় নিয়েছিলাম ভারতে। জিয়াউর রহমান দেশে আসতে দেবে না। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আমি ফিরে আসি বাংলা মানুষের কাছে। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রক্ত দিয়ে যারা দেশ স্বাধীন করেছে তাদের ঋণ শোধ করতে পারব না। কিন্তু তিনি রক্ত দিয়ে এই ঋণ শোধ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে কিন্তু তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। আমি সব মায়া মমতা ত্যাগ করে ফিরে এসেছিলাম এমন একটা দেশে যেখানে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ১৫ আগস্ট আত্মস্বীকৃত খুনিদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। আমি সেই দেশে ফিরে আসি। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে করব স্মার্ট বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ এ দেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে খোদা দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের সফলতা কর্মীরা জীবন দিয়ে গেছেন তাদের সবার প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। আমার একটাই আহ্বান সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। সংগঠন যদি শক্তিশালী হয়, আর যদি দেশের গণমানুষের জনসমর্থন পাওয়া যায় যতই ষড়যন্ত্র হোক বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা করব এটাই আমার লক্ষ। জনগণের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আর আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই জনগণ বারবার আমাদের ভোট দিয়েছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে বলেই আর্থসামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে উন্নয়ন রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলবো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।