প্রতিনিধি ২৬ জুন ২০২৪ , ১:০৪:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক: বরিশাল নগরের রুপাতলীর উকিল বাড়ি সড়কের বাসিন্দা মো: ইসমাইলের ছেলে মোস্তফা কামাল। ইতিমধ্যে এলাকায় নানা অপকর্ম করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। বাবার জমি দখল করে তাকে বাড়িছাড়া করা, বোনকে এসিড মারা হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, মেয়ের জমি দখল করে বিক্রি ও ভূয়া দলিল করে জমি বিক্রিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ সব অপকর্ম করেও অদৃশ্য ক্ষমতা বলে ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ভূয়া দলিল করে জমি বিক্রির প্রতারণা মামলা।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলাটি করেছেন ভূক্তভোগী বরগুনার তালতলী উপজেলার হেলেঞ্চাবাড়িয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে মোঃ খোকন। (যার নং ১০৫) ওই মামলা মোস্তফা কামালের স্ত্রী মাসুমা বেগম ও কাওছার মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। মামলাটি পিবিআইকে তদন্তভার দেয়া হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে- বিগত ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় মোস্তফা কামাল ও তার স্ত্রী মাসুমা বেগম মামলায় তফসিল বর্ণিত রুপাতলী মৌজার ২০৭০২ খতিয়ানের ১৩৪৩, ১৩৪৪, ১৩৪৫, ১৩৪৬, ১৩৪৭ দাগের সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য মোঃ খোকনকে প্রস্তাব দিলে সে প্রস্তাবে সম্মত হয়ে ২০২২ সালের ১৬ জুন দলিল লেখক ও ৩নং আসামি কাওছারের মাধ্যমে বরিশাল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হতে বাজার দর যাচাই করে নগদ ২৪ লক্ষ টাকায় সাব- কবলা দলিল নং ৫৪৮৭/২২ মুলে ৪ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয় করেন। তাতে দলিল রেজিস্ট্রি খরচসহ আরো ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়। দলিল রেজিস্ট্রি করার পর মোঃ খোকন ওই জমি নিজ নামে রেকর্ড সংশোধন করে খাজনা পরিশোধ করে ২ লক্ষ টাকা খরচ করেন এবং জমিতে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে মোঃ খোকনে ক্রয় করা ওই সম্পত্তি অন্যের দাবি করে তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমপি মামলা নং ১৩৬/২০২২ ধারা-ফৌঃকাঃবিঃ ১৪৪/১৪৫ দায়ের করেন। খোকন বিষয়টি জানতে পেরে আসামিদের কাছে তার সম্পত্তি বুঝাইয়া দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিতে থাকলেও তারা আজ নয় কাল বলে জমি বুঝাইয়া না দিয়া খোকনকে ঘুরাইতে থাকে। আসামিরা সম্পত্তি বুঝাইয়া না দিলে খোকন ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী বিকেল ৪ টার দিকে মোস্তফা বাড়িতে গিয়া অন্যান্য আসামিদের সেখানে উপস্থিত পেয়ে সম্পত্তি বুঝাইয়া দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তারা খোকনের কাছে সম্পত্তি বিক্রির বিষয়টি সম্পুর্ন অস্বীকার করে। এমনকি খোকন বিষয়টি নিয়া আইনের আশ্রয় নিলে তাকে খুন জখমের হুমকি প্রদর্শন করে।
ভূক্তভোগী মোঃ খোকন বলেন- মোস্তফা কামাল ও স্ত্রী মাসুমা বেগম রুপাতলী মৌজার ২০৭০২ খতিয়ানের ১৩৪৩, ১৩৪৪, ১৩৪৫, ১৩৪৬, ১৩৪৭ দাগের ৪ শতাংশ জমি ভূয়া দলিলের করে আমার কাছে বিক্রি ২৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই তফসিলে তার কোন জমি নেই। সে প্রতরণার মাধ্যমে জাল দলিল করে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা হাতাচ্ছে। তারা ফাঁদে কাউকে পা না দেয়ার অনুরোধ রইলো।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়- মো: ইসমাইলের প্রয়াত স্ত্রী মোসাঃ সুফিয়া বেগমের নামে ৬৬, ১৩৬ ও ২২৫৬ নং দলিল মূলে ৪৪.৫০ শতাংশ জমি রয়েছে। সেই তফসিলের এস.এ ১৮৮৫ নং খতিয়ান ভেঙে নতুন এস.এ খতিয়ান ১০৬৫৭ হয়। যার এস.এ দাগ ১৩৪৩, ১৩৪৪, ১৩৪৫, ১৩৪৬, ১৩৪৭ মোট পাঁচটি দাগ হয়। দলিল ও পর্চা মতে সুফিয়া বেগমের ১০৬৫৭ নং খতিয়ানের ওই ৫ দাগে ৪৪.৫০ শতাংশ জমি রেকর্ড হয়। সেখান থেকে ৪১.৪৪ শতাংশ বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি ও মসজিদে দান করেন। এবং চলচলের জন্য .৭৫ শতাংশ জমি দিয়ে যান। তিনি মৃত্যুর আগে ২.৩১ শতাংশ জমি রেখে যান। তাহলে তার ছেলে মোস্তফা কামাল কি করে ৫ শতাংশ জমির মালিক হন? এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর মনে।
এদিকে মোস্তফা কামাল তার বাবা মোঃ ইসমাইলের কাছ থেকে ভবনসহ জমি লিখে নিতে না পারায় বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সাথে জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে বিচারের দাবি উঠায়। এমনকি ওই বিচারের মুখোমুখী করতে খোশ গল্পের ফাঁকে বিষয়টি তার বাবা প্রকাশ করে বলে সাক্ষীও দাঁড় করানো হয়েছে। তবে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় নি প্রশাসন। প্রশাসন বিষয়টিকে বাকোয়াজ বলে অবহিত করেছেন। সে সুযোগে মোস্তফা কামাল তার বাবার বাড়ি দখল করে অবস্থান করছেন। আর পিতা অবস্থান করছেন নগরীর কাউনিয়া থানা সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায়।
ইসমাইল মিয়া অভিযোগ করেন, বয়স যত বাড়তে থাকে মোস্তফার চাহিদাও ততই বাড়তে থাকে। আর এতে মদদ দিয়ে আসছে রূপাতলী এলাকার কতিপয় ব্যক্তি। সর্বশেষ এ্যাম্বুলেন্স কিনে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ওই সময় তাকে এ্যাম্বুলেন্স কিনতে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়। নেশা করে ওই টাকা উড়িয়ে দিয়েছে। এর পূর্বে বিভিন্ন সময় চাপ দিয়ে নগদ অর্থ আদায় করে আসছিল। এমনকি ছোট মেয়ে ও মোস্তফার আপন ছোট বোন সাথীর মুখমন্ডলে এসিড মারার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেছে মোস্তফা। সাথীর বিয়ের পর তার বাসায় গিয়ে পেট্রোল বোমা পর্যন্ত মেরেছে। এভাবে বিভিন্নভাবে জিম্মি করে কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা নিয়েছে মোস্তফা। এরপরও ভালো হয়ে যাবে ভেবে রূপাতলীর কাউন্সিলর সুলতান আহম্মদের ভাইর মেয়ের সাথে মোস্তফার বিয়ে দেন। ওই ঘরে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। এরপর থেকে মোস্তফা দাবি তোলেন ওই মেয়ে তার না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীর সাথে বাগবিতন্ডার কারনে সে (স্ত্রী) মোস্তফাকে তালাক দিয়ে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন- মেয়েটিকে মোস্তফার মা তার রেখে দেন। ওই নাতনীকে তার দাদী মোস্তফার মা ৫ শতাংশ জমি লিখে দেয়। মোস্তফা ওই জমিও দখল করে তা বিক্রি করে দিয়েছে। এমনকি যার কাছে জমি বিক্রি করেছে তার নিকট মাদ্রাসার জন্য আনা ৫ হাজার ইটও বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে মোস্তফা আবারও বিয়ে করে। বর্তমানে ওই সংসারে তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। কিন্তু আগের স্ত্রী যে মেয়ে রেখে গেছে তাকে সে দেখতে পারে না। এ কারনে তাকে তার নিকট রেখেছেন। এরপর মোস্তফার মা মারা যাওয়ার পর তার দেখাশুনার জন্য তালাকপ্রাপ্ত এক নারীকে বিয়ে করেন ইসমাইল মিয়া। ওই বিয়ে অপর ছেলে-মেয়েরা মেনে নিলেও মানতে পারেনি মোস্তফা। সে ১২শতাংশ জমির উপর তিনতলা ভীত দিয়ে সম্পন্ন করা একতলা ভবন তার নামে লিখে দিতে বলেন। কিন্তু ওই জমির ওয়ারিশ রয়েছে তার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। সে কোনভাবে তা তাদের দেবে না। এ কারনে একদিন গভীর রাতে তার বাবাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয় মোস্তফা। ওই সময় মোস্তফা ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাবা ও সৎ মাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাড়া করে। সেই রাতে অল্পের জন্য বেচে যান তারা। ইসমাইল মিয়া তার ফ্লাটে তালা মেরে নিজ বাসভবন ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য দুই মেয়ে জামাই যেখানে থাকেন সেখানে বাসা ভাড়া নেন। এমনকি কাউনিয়া থানার সংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে বসবাস করছেন। যাতে করে মোস্তফা কোন হামলা চালালে সাথে সাথে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করতে পারেন।
ইসমাইল বলেন- বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে মোস্তফা ও তার স্ত্রী ঘরের তালা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে দুইটি স্টিলের আলমারী, একটি গ্রিজার, পানি তোলার মোটর এবং জালানার গ্রিল বিক্রি করে দেয়। এখন মোস্তফার দাবি ওই জমি ভবনসহ লিখে দেয়ার। তা লিখে দিলে সব ধরনের অভিযোগ তুলে নেবে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে ইসমাইলের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। তানা হলে শেখের মামলায় (বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা) জড়িয়ে ফাঁসিতে ঝুলাবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই হুমকির ধারাবাহিকতায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প কাহিনী লিখে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা দিয়েছে।
ইসমাইল মিয়া আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মোস্তফা মাদকে আসক্ত। এ কারনে বিভিন্ন সময় তাকে জেলে রাখা হয়। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে আবারো সে তার উপর মানষিক ও শারীরিক চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া তার অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে তাকে ত্যাজ্য করে দিয়েছেন। এরপর কোন এক ফিরোজকে সাক্ষী বানিয়ে তার নিকট আমি নাকি মেজর ডালিমকে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছি বিষয়ে গল্প করেছি। বিষয়টি একেবারে ঢাহা মিথ্যা। ওই লোককে আমি চিনি না। জীবনে কোনদিন তার সাথে আমার কথাও হয়নি। অথচ সে বলছে এক সময় সে নাকি আমার সহকর্মী ছিলেন।
মোস্তফার আপন ছোট বোন মৌসুমী আক্তার সাথী বলেন, আমার বোঝার পর থেকেই মোস্তফাকে দেখে আসছি বাবাকে জিম্মি করে টাকা আদায় করা। সে আমার মুখে এসিড মারার হুমকি দিয়ে বাবার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। তার কারনে আমাকে বাবা চুপিসারে মাদ্রাসায় দিয়ে আসতো আবার আনতো। এখন বাবার সম্পত্তি গ্রাস করতে সে বাবার সম্পত্তি দখল করে নিতে বিভিন্ন স্থানে মিথ্যাচার করছে।
মোস্তফা কামালের দাবি- সন্তান হিসেবে তার সম্পত্তির ভাগ তারও রয়েছে। কিন্তু সে কোনভাবে তাকে তার সন্তান হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। এ কারনে বারবার তাকে জেলে যেতে হয়েছে। এমনকি তাকে ত্যাজ্য পুত্রও করার আবেদন করা হয়। তৎকালীন স্বাস্থ্য বিভাগের চালক ফিরোজ আলম তাকে (মোস্তফা) জানিয়েছেন তৎকালীন সময়ে জেলা প্রশাসনের রিকুইজেশন ডিউটিতে কয়েকজন ড্রাইভার একত্রিত হই। খোশ গল্পের এক পর্যায়ে ইসমাইল মিয়া বলেন, যেদিন বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবারকে হত্যা করে মেজর ডালিমসহ অন্যান্যরা বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। সেই সময়ে তার গাড়িতে বিমানবন্দের পৌঁছে দেন। তখন তিনি বিদ্যুত বিভাগের চালক হিসেবে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। বিষয়টি জানার পর একাধিকবার বল আপনি দোষ স্বিকার করেন। এছাড়ার মোস্তফার বিরুদ্ধে যে সেকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয় বলে দাবি করা হয়।