প্রতিনিধি ২২ এপ্রিল ২০২১ , ১১:৩৮:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ
মজিবর রহমান নাহিদ ॥ দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশে বেড়েই চলছে মহামারী করোনা ভাইরাস। আর এই করোনা প্রতিরোধে ৭দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। লকডাউন বাস্তবায়নে শহরে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও গ্রামে লকডাউনের কোন প্রভাবই চোখে পড়েনি। বরিশালের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের বাজারগুলো ঠিক আগের মতোই মানুষের উপস্থিতি রয়েছে। তবে রাস্তা-ঘাটে বেশি দেখা গেছে নিন্ম আয়ের মানুষদের। নিম্ন আয়ের এসব মানুষদের সাথে কথাবলে জানা যায় যে তারা করোনার এই মহামারীর মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোন ধরনের সহযোগীতা পাচ্ছে না।
গত কয়েকদিন পূর্বে স্থগিত হওয়া ইউপি নির্বাচনের প্রার্থীরাও খোঁজ নিচ্ছে না সাধারন মানুষদের। লকডাউন নিয়ে চরবাড়িয়া এলাকার আসমত আলী বলেন, এই করোনার মধ্যে আমরা ঘর দিয়া বাইর না হইলে খামু কি? না খাইয়া মরতে হইবে। আমাগো এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান কেউ আমাগো খবর লয় না। কয়দিন আগে নির্বাচন আছিলো দেইখ্যা পোষ্টার লইয়া আমাগো ধারে আইয়া বইয়া থাকতো, ভোটের লইঞ্জা আকুতি মিনুতি করতো কিন্তু এই কষ্টের মধ্যে কেউ একটু খবর লয় না আমাগো।’ সাধারন মানুষকে কোন সহযোগীতা করতে পারেনি স্বীকার করে চরবাড়িয়া ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) মামুন আকন বলেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনমূলক কথা বলছি, মসজিদে যাতে সামাজিক দূরত্ব মানা হয় সেটির কথা বলছি। তবে অসহায় মানুষদের সহযোগীতা দেয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সচেতন মহল জানায়, করোনার প্রথম ধাপে লকডাউন চলাকালে সয়ং মামুন মেম্বার নিজেই মাঠে নেম অনেক মানুষ নিয়ে ফুটবল টুর্ণামেন্ট খেলেছিলেন। এটা নিয়েও আমরা প্রতিবাদ করে তোপের মুখে পড়েছি। এবার দ্বিতীয় ধাপে লকডাউন শুরু হলেও অসহায় মানুষের জন্য কিছু করেনি তিনি। এদিকে শুধু চরবাড়িয়া ইউনিয়নই নয় বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নগুলোর অবস্থা প্রায় একই। বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের দিনমজুর মোবাক্কের চাপরাশী জানায়, ‘সরকার লকডাউন দেছে কিন্তু মোরা এহন পর্যন্ত কোন সাহায্য সহযোগীতা পাই নাই। চেয়ারম্যানের দারে আজীবন সাহায্যের লইজ্ঞা গ্যালে কিছু পাইতাম না আবার করোনার মধ্যে কি পামু! হে নিজেই খাইয়্যা পায় না দিশা মোগো কি দেবে।’ এবারের মাধবপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন এই প্রতিবেদককে জানায়, ‘আমি সকালে বের হই আর ইফতারের আগে আসি, বাইরে শুধু মানুষের সেবাই করি।
সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন সহযোগীতা পাই নাই, পেলে অবশ্যই অসহায় মানুষদের মাঝে দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ইউনিয়নের মানুষের জন্য আমি যা পারি তাই করি, নির্বাচনে একজন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছিলো সে করোনা হুইন্নাই ঢাকা যাইয়া ওঠছে। আরেকজন সতন্ত্র প্রার্থী লিটন হের এই ইউনিয়নে কোন একটা ভোট নাই হেরপরও নির্বাচনে দাঁড়াইছে। এইসব মাদকব্যবসায়ী দিয়া সমাজসেবা হয় না।’ এদিকে শুধু ইউনিয়ন পরিষদই নয় বরিশাল সদর উপজেলা ও বরিশাল সদর আসনের বিগত নির্বাচনে বিভিন্ন দলীয় মনোনায়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদেরও দেখা মিলছে না লকডাউনে সাধারন মানুষের পাশে থেকে খাদ্য সহয়তা ও অর্থিকভাবে সহযোগীতা করার জন্য।
সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধিরা বলেন, লকডাউনে সাধারন মানুষের কি শুধু সরকারই সহযোগীতা করবে আর কারো কোন দায়িত্ব নেই? অনেক বিত্তবানরা নির্বাচনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন কিন্তু দেশের এই মহামারীর মধ্যে অহসায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়, সরকারের পাষাপাশি যদি সবাই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের দেশে লকডাউন কোন মানুষকে না খেয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হবে না।