প্রতিনিধি ২৯ নভেম্বর ২০২১ , ১০:৪৭:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
বরগুনা প্রতিনিধিঃ বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ৩০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ২০০৮ সালে জন্মনিবন্ধন করেন ২২ হাজার জন। এর মধ্যে ১৮ থেকে ২০ হাজার জনের জন্মসনদেই ভুল রয়েছে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সজল কুমার কীর্তনীয়া।
এ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনলাইনে যেসকল নাগরিকের জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে তাতে এ ভুল পাওয়া গেছে। ফলে ত্রুটিপূর্ণ জন্মসনদ নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। জন্মসনদ সংশোধন করতে বিভিন্ন দপ্তরে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে তাদের।
ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমার, আমার স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলেকে যে জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে অনলাইনের জন্মসনদের মিল নেই। আমার সন্তানের বাবা-মায়ের নামের স্থানে ভুল লেখা আসছে। অনলাইনের জন্মসনদ কপিতে আমার পরিবারের প্রায় সবারই নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য ভুলে ভরা।
ইউনিয়নের দক্ষিণ হোসনাবাদ গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী মাহিনুর বেগম বলেন, মেয়েসহ আমার ও পরিবারের সবার জন্মসনদের তথ্য আমার নিজের কাছে থাকা কপির সঙ্গে অনলাইন কপির কোনো মিল নেই। এখন এগুলো ঠিক করতে অনেক জায়গায় দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে।
একই অভিযোগ করেন দক্ষিণ হোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. জুয়েল। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জন্মসনদের অনলাইন কপির ভুল সংশোধনের জন্য এক মাস ধরে হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং ভোগান্তিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছি।
তিনি বলেন, প্রথমে ২০০ টাকা ফি দিয়ে জন্মসনদের ভুল অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে হয়। এরপর ফের ১০০-১৫০ টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে ভুল সংশোধনের আবেদন করতে হয়। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ সংযুক্ত সেই অবেদন উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকে যাচাই বাছাইয়ের পর সেই কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছে। ভুল সংশোধনের চুড়ান্ত শুনানির পর আবারও ২০০ টাকা ফি জমা দিয়ে তবেই মেলে সঠিক জন্মসনদ। এতগুলো ধাপে যে ভোগান্তি পোহাতে হয় তা বর্ণনা করার মতো নয়।
ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মাসুদ মৃধা বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা এবং জন্ম তারিখ ব্যতীত পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সংশোধনের পর সনদের কপি বিনা ফিসে সরবরাহের কথা। তবে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি ফি এর চেয়ে বেশি ফি দিয়ে জন্মসনদ করাতে হচ্ছে। এখানে কিছু দালাল ও কর্তৃপক্ষের সহায়তায় বেশি টাকা নিয়ে জন্মসনদ করে দেওয়া হচ্ছে।
হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সজল কুমার কীর্তনীয়া জানান, ২০০৮ সালে এ ইউনিয়নের ৩০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে জন্মনিবন্ধন করেন ২২ হাজার জন। এর মধ্যে ১৮ থেকে ২০ হাজার জনের জন্মসনদেই ভুল রয়েছে। ২০১২ সালে যারা জন্মনিবন্ধনের দায়িত্বে ছিলেন তারা প্রাপ্ত তথ্য অনলাইনে সংযুক্ত করার সময় ভুল করেছেন। এখন হোসনাবাদ ইউনিয়নে অনলাইনে জন্মসনদের সংখ্যা ২৪ হাজার ৩৬৩ জন।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুহৃদ সালেহীন বলেন, হোসনাবাদ ইউনিয়নের জন্মসনদের ইন্টারনেট কপিতে ক্রটির বিষয়টি আমারও নজরে এসেছে। উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিকদের ভোগান্তি লাঘবে জন্মসনদ সংশোধন সহজীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।