বাকেরগঞ্জ প্রতিবেদকঃ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠীতে ঝোপঝার আর লতাপাতায় ঘিরে আছে জানকী বল্লভ রায় চৌধুরী জমিদার বাড়িটি। ছম ছমে সুনসান নীরবতায় বাড়িটিকে মনে হবে ভুতুড়ে বাড়ি। প্রায় তিনশত বছর পার হলেও লাগেনি সংস্কারের ছোঁয়া। ইট, সুরকি আর পোড়া মাটির কারুকার্যে ঘেরা প্রায় দুই বিঘা জমি জুড়ে এই জমিদার বাড়ি। অযত্ন আর অবহেলায় আজ ভুতুড়ে রূপ নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়িটি এখন ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।
৪ ডিসেম্বর (রবিবার) সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্তু জমিদার বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলার কার্যক্রম চালায় ৮ জন শ্রমিক। ঘটনাস্থানে গিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ জমিদার রাজেশ্বর রায় চৌধুরী মারা গেলে ওয়ারিশ হিসেবে তার বোন মিনা দেবী চৌধুরী মালিক হন। তিনি মারা যাওয়ার পরে তার পুত্র বাবু চৌধুরী ওয়ারিশ মূলে মালিক হন। তিনি মারা গেলে তার স্ত্রী ববিতা মুখার্জি ও তার তিন পুত্র প্রীতম মুখার্জী, অপু মুখার্জি, তপু মুখার্জী মালিকানা দাবি করেন। প্রীতম মুখার্জী, অপু মুখার্জি, তপু মুখার্জী একটি লিখিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে জমিদার বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য ঠিকাদার মোবারকে দায়িত্ব দেন।
এ বিষয়ে প্রীতম মুখার্জী জানান, জমিদার বাড়িটি আমাদের পূর্বপুরুষের। বাড়িটি নিয়ে সরকারের সাথে আদালতে মামলা চললেও অনেক আগেই রায় আমাদের পক্ষে এসেছে। এখানে সরকারের কোন দায়িত্ব নেই। বাড়িটি পুরাতন জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারনে ঠিকাদারের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। পরবর্তীতে আমরা নতুন ভবন নির্মাণ করব।
এ বিষয়ে কলসকাঠী মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার বাদশা জানান, পুরান জমিদার বাড়িটি যাতে ভেঙ্গে ফেলা না হয় এবং এটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করে পর্যটক কেন্দ্র করা হয় সেজন্য তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এলাকাবাসী জানায়, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এলাকা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্বাচনী প্রচারের সেই জনসভাস্থল বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী এলাকার তেরো জমিদার বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশাসনের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
আরো জানা যায়, কলসকাঠীর তেরো জমিদারবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ তের জমিদারের বসবাসস্থল কলসকাঠীকে ঘিরে রয়েছে প্রায় পাঁচশ বছরের পুরনো ইতিহাস। জমিদারবাড়ির প্রবেশপথে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মাঠ। বেশ কিছু ভাঙ্গা মন্দির ও সংস্কারের অভাবে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বেশ কিছু বাড়ি। পাশেই রয়েছে শানবাঁধানো একটি পুকুর। প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে এখানে ঐতিহ্যবাহী জগদ্বাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ পূজাকে ঘিরে কলসকাঠী পরিণত হয় লাখো মানুষের মিলনমেলায়। দ্বিতল জমিদারবাড়ির ভিতর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে অন্দরমহলের দিকে। সিঁড়িপথ উঠে গেছে ওপরে। সিঁড়িপথের নিচে রয়েছে আরেকটি দরজা, যেটা দিয়ে বাড়ির মূল অংশে প্রবেশ করা হয়। পুরো বাড়িটি সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হলেও ঐতিহ্যবাহী বাকেরগঞ্জের কলসকাঠীর জমিদার বাড়িকে ঘিরে থেমে নেই পর্যটকদের ভিড়। ইতিহাস ঐতিহ্যখ্যাত এ জমিদারবাড়িতে প্রতিদিন সকল বয়সের মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। সরকারী উদ্যোগে তেরো জমিদারের বসবাসস্থল বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে খুব শীঘ্রই পুরো বাড়িটি বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল জানান, তিনি ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠিয়ে জমিদার বাড়িটি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন।বাড়ির মালিকানা দাবিদারদের তাদের কাগজপত্র নিয়ে উপজেলায় আসতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া হবে।