প্রতিনিধি ১৮ জুন ২০২০ , ১:৩৭:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ ডেস্ক ॥ লকডাউন শিথিলের পর স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমনের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত নগরী সহ বরিশাল জেলায় প্রতিদিনই নতুন করোনা রোগি শনাক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যারমধ্যে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্যকর্মী, র্যাব ও পুলিশ সদস্য এবং ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ১৮ই জুন পর্যন্ত জেলায় নতুন করে শনাক্ত হওয়া ৬০ জনসহ মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭ জনে। যারমধ্যে বরিশাল মহানগরী ও সদর উপজেলায় করোনা শনাক্ত হওয়া রোগির সংখ্যা ৮৫০ জন। মোট আক্রান্তের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত রয়েছেন ১৪১ জন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় ১৫ জন ব্যক্তি মারা যাওয়ার তথ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে থাকলেও উপসর্গ নিয়ে মৃত রোগিদের সঠিক কোন হিসেব পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি নতুন করে আটজন সুস্থ্যতা লাভ করার মধ্যদিয়ে জেলায় করোনা থেকে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭৭ জন ব্যক্তি।
জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট শনাক্তদের মধ্যে ২৭৬ জন নারী ও ৭৮১ জন পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সে হিসেবে নারীদের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি পুরুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মোট শনাক্তদের মধ্যে শূন্য থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ৫৬ জন, ২০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত ৮০৯ জন এবং পঞ্চাশোর্ধ ১৯০ জন ব্যক্তি রয়েছেন। সে হিসেবে সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে রয়েছে। যা ২০ বছরের নীচের রোগীর চেয়ে ১৪ গুণের বেশি এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বের রোগীদের চেয়ে চার গুণের বেশি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭৯৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ৪৭১ জন এবং মারা গেছেন ৩৫ জন। আর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন মাত্র ২৯৬ জন ব্যক্তি। সেই হিসেবে করোনায় আক্রান্ত ৮২ শতাংশ রোগিরা হাসপাতালের দ্বারস্থ হননি।
অভিযোগ রয়েছে, লকডাউন শিথিলের পর আক্রান্তদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বরিশালে করোনাকে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। নতুন শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ওই রোগির সাথে যোগাযোগ করে তাকে নিয়মনীতি ও চিকিৎসাপত্র বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তারা পালন করছেন। তবে আক্রান্ত রোগিদের বাসায় থাকা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের।
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে পর্যাপ্ত জনবল না দেয়া হলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যহত হবে। তবে জেলা প্রশাসক এসএস অজিয়র রহমানের দাবি, যে সকল এলাকায় রোগি শনাক্ত হচ্ছে সেখানেই লকডাউন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের স্বাস্থ্যবিধি না মানা প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রোগির স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসন থেকে লকডাউন ঘোষণা করেই তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ যেসব পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে, সেইসব পরিবারের সদস্যদের খাবার কিংবা আক্রান্ত রোগির ব্যবহৃত মালামাল এবং ওষুধ রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আর কেউ খোঁজ রাখেনা। তাই তাদের বাধ্য হয়েই বাহিরে যেতে হচ্ছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, যাদের করোনা শনাক্ত হচ্ছে তাদের কিছু রোগীর কোন লক্ষণ থাকেনা, কিছু রোগীর মৃদু লক্ষণ থাকে। আমরা এ ধরনের রোগীকে লক্ষণ অনুযায়ী মৃদু, মাঝারি, তীব্র, মারত্মক তীব্র ভাগে ভাগ করে থাকি। বরিশালে মৃদু এবং মাঝারি অর্থাৎ নিয়মোনিয়ার আগ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যাটা বেশি।
এক্ষেত্রে অনেক রোগির কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না, শুধু শারিরীক পরিচর্যার প্রয়োজন। আবার কিছু রোগি আছেন সামান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এসব রোগির সংখ্যা বেশি হওয়ায় বরিশালে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার সংখ্যাটাও বেশি। আর বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হওয়া রোগির সংখ্যাও বেশি।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবারাত পর্যন্ত জেলায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন-শেবাচিম হাসপাতালের ছয়জন নার্স, চারজন স্টাফ, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ মোট ১১ জন, মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচজন ও জেলা পুলিশের একজন এবং আরআরএফ’র একজনসহ মোট সাতজন পুলিশ সদস্য, র্যাব-৮ এর চারজন সদস্য, বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মরত ছয়জন স্টাফ।
এর বাহিরে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২০ জন, জেলার মেহেন্দিগঞ্জে চার পুলিশ সদস্য, বাবুগঞ্জে একজন, উজিরপুরে একজন পুলিশ সদস্যসহ মোট আটজন এবং গৌরনদী, বানারীপাড়া ও বাকেরগঞ্জ উপজেলায় একজন করে মোট তিনজন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল থেকে ১৭ জুন দিবাগত রাত এগারোটা পর্যন্ত জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বরিশাল মহানগরী ও সদর উপজেলায় ৮৫০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া উজিরপুরে ৩৮ জন, বাবুগঞ্জে ৩৭ জন, বাকেরগঞ্জে ৩০ জন, মেহেন্দীগঞ্জে ২২ জন, বানারীপাড়ায় ২২ জন, গৌরনদীতে ২১ জন, মুলাদীতে ১৭ জন, আগৈলঝাড়ায় ১২ জন ও হিজলা উপজেলায় ৮ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সূত্রমতে, গত ১২ এপ্রিল জেলায় প্রথমবারের মতো মেহেন্দীগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জ উপজেলায় দুইজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। অপরদিকে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১০ মার্চ থেকে ১৭ জুন দিবাগত রাত পর্যন্ত বিদেশী নাগরিকসহ ভিন্ন জেলা (সংক্রমিত) থেকে আগত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনসহ বিভাগের ছয় জেলায় মোট ১৮ হাজার ৩৩৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। যারমধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো ১৬ হাজার ৬২৭ জনের মধ্যে ১৩ হাজার ৮১৪ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভাগের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে (প্রতিষ্ঠানিক) কোয়ারেন্টিনে থাকা ১ হাজার ৭০৬ জনের মধ্যে ১ হাজার ৫৩ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এর বাহিরে শেবাচিম হাসপাতালসহ বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ৩০ জন রোগির মধ্যে ৫০৭ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
শেবাচিমের করোনা ইউনিটে ৬১ জনের মৃত্যু ॥ শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৯ মার্চ থেকে ১৬ জুন রাত পর্যন্ত ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন, অন্যান্যরা করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।