Uncategorized

মুলাদীর সেই কুখ্যাত সন্ত্রাসী শহিদুলের প্রতারক চক্র এবার ঢাকায়, কোটি কোটি টাকা আত্মসাত, আটক-৩

  প্রতিনিধি ২৭ আগস্ট ২০১৯ , ৩:৩৪:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল অফিস :-
বরিশালের মুলাদী উপজেলাধীন নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ন-আহব্বায়ক মোঃ আবুল বাশার প্রিন্স সিকদারকে গত ০৯/০৩/২০১৮ইং রোজ শুক্র বার বাটামারা ইউনিয়নের ৪০ দিন কর্মসূচীর রাস্তা রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে অবৈধ ভাবে নির্মানের কেন্দ্র করে আবুল বাশার প্রিন্সকে হত্যা করে ২ দিন পরে আড়িয়াল খা নদীতে ফেলে দেয়। নৃসংশ হত্যাকারী মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউপি চেয়ারম্যান কুখ্যাত সন্ত্রাসী, জাল টাকা ও মাদক ব্যাবসায়ী ও প্রতারক চক্রের গডফাদার শহিদুল ইসলাম । বার বার বিচার চেয়েও বিচার পায়নি প্রিন্সের পরিবার।
এবার ঢাকার মতিঝিল থেকে শনিবার রাতে ‘রয়্যাল চিটিং ডিপার্টমেন্ট (আরসিডি)’ নামে পরিচিত প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতারণার ফাঁদ পেতে চক্রের সদস্যরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

প্রতারক চক্রের হোতারা হলেন- বরিশালের মুলাদী থানার বাটামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সিকদার ওরফে মোস্তাফিজ এবং একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহসিন রেজা। মোস্তাফিজ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তিনি বাটামারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি। আর রেজা এক সময় বিএনপি করতেন। তাদের প্রতারণার কায়দা-কৌশল রাজকীয় হওয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কাছে তারা রয়্যাল চিটিং ডিপার্টমেন্ট (আরসিডি) নামে পরিচিত।

মোস্তাফিজ ও রেজার নেতৃত্বে ঢাকায় গড়ে ওঠেছে ভয়ংকর প্রতারক চক্র। তাদের টার্গেট রাজধানীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও অভিজাত এলাকার বাড়িওয়ালা। অভিনব কায়দায় তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। শেরেবাংলানগর ও পল্লবীসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানায় তাদের নামে প্রতারণা, মাদক এমনকি খুনের মামলাও রয়েছে। সম্প্রতি গুলশানের এক বাড়িওয়ালা ও স্বনামধন্য গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নগদ ৭২ লাখ টাকা এবং এক কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক হাতিয়ে নিয়ে রেজা ও তার চক্রের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, এই দুই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে শনিবার রাতে হোটেল পূর্বাণীর সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার তাদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে পাঠানো প্রতারকরা হল- আলাউদ্দিন হাওলাদার (৬০), আজাদ হোসেন কলিম (৪৫) ও শফিউল ইসলাম (২৯)। মোস্তাফিজ ও রেজাসহ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ চক্রের সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে রয়েছে- মাসুদ আলম (৩৮), আবদুল খলিল (৪২) ও জলিল (৪৫) প্রমুখ। এ চক্রের সবার বাড়ি মুলাদীতে বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, অভিজাত এলাকার ‘টু-লেট’ দেখে চক্রের সদস্যরা বাড়িওয়ালার সঙ্গে আলাপ করে। চুক্তিনামা করতে তারা বাড়িওয়ালাকে নামি-দামি হোটেলে আমন্ত্রণ জানায়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা স্যুট-টাই পড়ে কেতাদূরস্ত হয়ে কেউ নিজেকে বিদেশ ফেরত বড় শিল্প-উদ্যোক্তা, কেউ কথিত শিল্পপতির ম্যানেজার পরিচয় দেয়। অন্যরাও নিজ নিজ ভুয়া পরিচয় দেয়। হোটেলের বিলও পরিশোধ করে তারা বিশ্বস্ততা অর্জন করে। বেশ কয়েক বছর ধরে চক্রটি সক্রিয়। একাধিকবার গ্রেফতার হলেও জামিন পেয়ে তারা ভিন্ন কৌশলে প্রতারণা চালায়।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মোস্তাফিজ একাধিক মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে। একটি নম্বর সে সব সময় ব্যবহার করে। অন্যগুলো সব সময় বহন করে না। বিশেষ নম্বর সে কখনও এলাকায় নেয় না। এর কারণ হল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রযুক্তিকে ফাঁকি দেয়া।

ফোন দেয়া হলে মোস্তাফিজ বলেন, ‘সব সময় গ্রামে থাকি। ঢাকা তো দূরের কথা কখনও বরিশাল শহরেই যাই না।’ তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতারণা ও খুনের মামলা, রাজধানীর অভিজাত হোটেলে বসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তাফিজ বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমাকে এ পর্যায়ে আসতে হয়েছে। কখনও অসৎ পন্থা অবলম্বন করিনি। ষড়যন্ত্র করে আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমি সব সময় গরিবের পাশে থাকি। আট বছর হল ঢাকায় যাই না। তবে কেউ এসব নিয়ে তদন্ত করতে চাইলে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

প্রীতম গ্রুপের মালিক মোজাহিদুল ইসলাম প্রদীপ বলেন, গুলশানের ৮ নম্বর রোডে তার একটি ছয়তলা বাড়ি আছে। তিনি বলেন, বাড়ি ভাড়া দেয়া হবে দেখে কথিত পদ্মা সিরামিকের ম্যানেজার মাসুদ আলম ১ আগস্ট আমাকে ফোন করেন। মাসুদ জানান, তার প্রতিষ্ঠানের এমডি ড. মোস্তাফিজ (শহিদুল ইসলাম শিকদার) বেলজিয়ামে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে এসে তিনি পদ্মা সিরামিক নামে একটি ইন্ডাস্ট্রিজ করেছেন। এখানে তার ফরেন পার্টনার আছে। তার প্রতিষ্ঠানের একজন জাপানি ইঞ্জিনিয়ারের জন্য একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করা হবে। ৪ আগস্ট কথিত এমডি ড. মোস্তাফিজের সঙ্গে ফারস হোটেলে সাক্ষাৎ হয়। তিন লাখ টাকা অগ্রিম এবং এক লাখ টাকা ভাড়ায় বাড়িভাড়া চূড়ান্ত করা হয়।

প্রদীপ আরও বলেন, খাওয়া-দাওয়ার বিল পরিশোধ করে মোস্তাফিজ গাজীপুরের ২৯ বিঘা জমি বিক্রির প্রস্তাব দেন।

এ নিয়ে কথা বলতে পরদিন হোটেল পূর্বাণীতে আমরা বসি। জমির বায়না হিসেবে আমি ১২ লাখ টাকা দিতে চাই। কিন্তু জমির মালিক পরিচয়ে খলিল জানায়, ১২ লাখ টাকায় হবে না। কারণ তার মামা স্ট্রোক করেছেন। ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাকে সিঙ্গাপুর নিতে হবে। জরুরিভিত্তিতে আরও ৬০ লাখ টাকা লাগবে। ম্যানেজারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ডেকে সরল বিশ্বাসে আমি ইউসিবিএল ব্যাংক মতিঝিলের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে আরও ৬০ লাখ টাকা তুলে দেই। পাশাপাশি এক কোটি ৭৭ লাখ টাকার একটি চেক দেই। কিন্তু এরপর থেকে তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

প্রদীপ আরও বলেন, শনিবার মাসুদ আমাকে ফোন করে আগের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। খলিলের মামার অসুস্থতার কারণে খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তাই যোগাযোগ রাখতে পারিনি। এছাড়া এমডি মোস্তাফিজও দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। আজ (শনিবার) মতিঝিল আসেন। আপনার সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলব। প্রদীপ বলেন, বিষয়টি মতিঝিল থানায় জানাই। পূর্বাণী হোটেলের সামনে থেকে আলাউদ্দিন, আজাদ ও শফিউলকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার আলাউদ্দিন  বলেন, এলাকায় দুইটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্কুল দাঁড় করাতে পারিনি। স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। সাবেক চেয়ারম্যান রেজাকে গিয়ে দুরস্থার কথা বলায় তিনি আমাকে তার সঙ্গে থাকতে বলেন। আমি তার ঢাকার বাসা বা অফিসের ঠিকানা জানি না। টেলিফোনে কথা হতো। যখন যেখানে যেতে বলতেন তখন সেখানে যেতাম। আজাদ বলেন, মাছের ব্যবসা করতাম। কিন্তু রেজা চেয়ারম্যান প্রলোভন দেখিয়ে এ পেশায় এনেছে। প্রতারণার সময় জমির মালিক সেজে কথা বলতাম। কাজপ্রতি ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়া হতো।

শফিউল বলেন, এলাকায় খুব জুয়ার আসর বসে। স্কুলজীবন থেকে জুয়ায় আসক্ত ছিলাম। একপর্যায়ে ১৫-১৭ লাখ টাকা দেনায় পড়ে যাই। এরপর ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাই। তিন মাস আগে নানা প্রলোভন দেখিয়ে রেজা চেয়ারম্যান আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সফিকুল ইসলাম আকন্দ  বলেন, ঘটনা শোনার পর প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে লেনদেন সম্পর্কে খোঁজ নিই। ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট হোটেলগুলো থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। এতে অভিযোগের সত্যতা মেলে।

আরও খবর

Sponsered content