দেশজুড়ে

যশোর অভয়নগরে ২ জনের শরীরে ব্লাক ফাঙ্গাস শনাক্ত

  প্রতিনিধি ১৯ জুন ২০২১ , ৭:২১:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

যশোর অভয়নগর উপজেলায় একদিনে ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ৩০ জন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এস এম মাহামুদুর রহমান রিজভী। জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ হয়েছেন ৩০ জন। ৪১ জনের মধ্যে ২ জনকে রির্ফাড করা হয়েছে। একজনকে যশোর সদর ও অপরজনকে নড়াইলে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়ে। দিন পার হচ্ছে আর অভয়নগরবাসীর মাঝে করোনা যেন জেঁকে বসেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। দেখা দিয়েছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট।

এলাকাবাসীর দাবি, যশোর জেলা ভারতের বর্ডার এলাকায় শিল্প শহর বন্দর নগরী নওয়াপাড়া থেকে প্রতিদিন প্রায় ব‍্যবসায়ীরা সীমান্তে অবাধে বিচরণের কারণে দেখা দিয়েছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট । অবৈধ্য ভাবে যশোর অঞ্চলে ভারত থেকে আশা মানুষের কাছ থেকে এ সংক্রমন বাড়ছে। যার ফলে পাবলিক ট্রান্সমিশনও শুর হয়েছে। ফলে করোনার এক ভয়াবহ সময় পার করছে অভয়নগরবাসী। শহরে নিয়ম কানুন মেনে চললেও পল্লী অঞ্চলে নিয়মের কোনো বালাই নেই। তারা ইচ্ছমত বাজারে বিচরণের কারণে আজ ভয়াবহতা হয়েছে নওয়াপাড়া পৌর এলাকাসহ প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে। যানবাহনেও কোন নিয়মকানুনের বালাই নেই। জনগণ চলছে তাদের ইচ্ছামতো। যাত্রীদের মুখে মাস্ক অপ্রতুল। শহরে দোকান পাট খোলা থাকলেও তাদের মুখে মাস্ক নেই। প্রশাসন প্রাণপন দিয়ে চেষ্টা চালালেও জনগণ তা মানতে নারাজ।
নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডকে ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবশ্য ১, ২, ৩, ৭, ৮,ও ৯ নং ওয়ার্ডের করোনা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইউনিয়নের বেশ কয়েক জন করোনা পজিটিভ নিয়ে মারাও গেছেন। জেলা প্রশাসন থেকে গোটা পৌর এলাকায় কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। তাছাড়া গত ২ দিনে অভয়নগরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলায় মৃর্তের সংখ্যা এখন ২৩ জন দাড়িয়েছে। এ অবস্থায় সকলকে প্রশাসনের কঠোর বিধি নিষেধ মানার আহবান জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহামুদুর রহমান রিজভী। এদিকে অভয়নগরের চেঙ্গুটিয়া-প্রেমবাগে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। ২জন ব্লাক ফাঙ্গাস সহ দেড় ডজন করোনা আক্রান্ত। করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ শতাধিক পরিবার। প্রেমবাগ ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন জানান, খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে,ইউনিয়নে কমপক্ষে প্রায় ১৪ জন ১০ করোনা আক্রান্ত এবং শত শত ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ। এদের কেউ কেউ গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছে। সরকারীভাবে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এলাকায় অচিরেই করোনায় ভয়াবহ রূপ ধারন করবে।
সংরক্ষিত আসনের মেম্বর হালিমা পারভীনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি  জানান, চেঙ্গুটিয়া, চাঁপাতলা বাহিরঘাট এলাকায় প্রায় প্রায় বাড়িতেই সর্দিজ্বর, কাঁশি, পাতলা পায়খানা লেগেই আছে। আক্রান্তদের বাড়িতে লালফ্লাগসহ লকডাউন করা হচ্ছে। চেঙ্গুটিয়া-প্রেমবাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন যতই যাচ্ছে ততই করোনা রোগীর সংখ‍্যা বেড়েই চলেছে। ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানা সহ সরকারী বিধি নিষেধ সংক্রান্ত প্রচার প্রচারনা, মাইকিং সত্ত্বেও হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা অনেকেই। তার পরও এলাকায় আক্রান্তদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তারা হলেন, চেঙ্গুটিয়া গ্রামের মৃত সমর দাসের পুত্র পংকজ দাস(৪২), মাগুরা গ্রামের আকবর আলী (৬০), একই গ্রামের নওয়াপাড়া কলেজের শিক্ষক হাবিবুর রহমান (৩৬), পালপাড়া গ্রামের মৃত গোলাম মোল্যার পুত্র কাসেম মোল্যা। প্রেমবাগ গ্রামে শাহাবুদ্দীন এবং তার স্ত্রী,সাত্তার শেখের পুত্র বাহারুল (৪০), চেঙ্গুটিয়া গ্রামে মৃত গণি মোল্যার পুত্র মিজান মোল্যা, মৃত বৈদ্যনাথ দাসের পুত্র মদন দাস(৪০) এবং তার বৌদি, চেঙ্গুটিয়া উড়তলার মিনা খাতুন(২৫), পিতা মৃত গোলাম নবী স্বামী আঃ রাজ্জাক, চাঁপাতলা গ্রামের আয়ুব আলী, ১নং ওয়ার্ড মহাকাল কু-ুপাড়ায় হরোলাল কু-ুর পুত্র মনোরঞ্জন কু-ু, মহাকাল গ্রামের আনারুল মোড়ল (৫২), চেঙ্গুটিয়া বাজার সংলগ্ন নওয়াপাড়া কলেজের সাবেক অধ্যাপক এলাহী বক্স গাজী (৬৯), আমডাঙ্গা গ্রামের যোতিন মল্লিক (৭০), তার কন্যা বীনা মল্লিক (৩৫), একই গ্রামের মুক্ত মল্লিক (৭০)। এর মধ্যে চেঙ্গুটিয়ার মিজান মোল্যা ও মহাকাল কু-ু পাড়ার মনোরঞ্জন কু-ু ই-িয়ান ভেরিয়েন্ট ব্লাক ফাংগাস করোনায় আক্রান্ত। মনোরঞ্জন কু-ুর ভাই রতন কু-ু জানান, তার ভাই আদিত্য মজুমদারের ট্রাক চালাতেন। ভারতে যাতায়াত ছিল। ১নং পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আঃ গফফার বিশ্বাস জানান, আক্রান্তদের বাড়ী লকডাউন করা হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, যারা করোনা উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত তাদেরকে নমুনা পরীক্ষা করলে শত শত মানুষের করোনা ধরা পড়বে।
 
বিজ্ঞ মহল বলেছেন,জনগণ যত সময় নিজের নিরাপত্তার কথা নিজে না বুঝতে পারবেন তত সময় করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি হাত থেকে রক্ষা পাবে না। শুধুমাত্র সরকার ও প্রশাসনকে দায়ি করলেই চলবে না।

আরও খবর

Sponsered content