প্রতিনিধি ১৭ জুলাই ২০২১ , ১২:২৮:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
বরগুনা প্রতিবেদক ॥ দাদির মামলায় মা জেল হাজতে। মামলা থেকে রেহাই পায়নি ১৩ বছরের শিশু। মামলার এজাহারে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৮ বছর। মায়ের মুক্তির ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আড়াই বছরের ভাইকে নিয়ে শনিবার সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু করেছে তারা দুই ভাই। বরগুনা সদর উপজেলাধীন ৫নং আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের শাশুড়ি আলেয়া বেগমের মামলায় পুত্রবধূ অনিতা জামান জেল হাজতে।
অন্যদিকে মায়ের মুক্তির দাবীতে অবস্থান ধর্মঘটে আছে বড় ছেলে আলিফ (১৩) ও দুগ্ধপোষ্য ছোট ছেলে গালিব (আড়াই বছর)। মায়ের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা রাস্তা থেকে উঠবে না বলে জানিয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বরগুনা টাউনহল চত্বর ও পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন কওে তারা। ধর্মঘটে তাদের দাবী, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অনতিবিলম্বে মায়ের মুক্তি হোক। সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বরগুনা-১ আসনের সাংসদ এ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
পুত্রবধূকে জেলে পাঠিয়ে গত শুক্রবার শাশুড়ি আলেয়া বেগম তালা ভেঙে মেয়ে মনিরাকে নিয়ে ঘরে ওঠেন। তবে এই বসবাসকৃত ঘরখানা অনিতা জামানের বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে তৈরি করা। মেয়ে মনিরা বেগমের একাধিক বিবাহের পরেও বাবার বাড়িতে থেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় দুই ছেলে ও দুই পুত্রবধূকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। ছাড়েনি মাত্র ১৩ বছরে শিশু আলিফকেও। এমন তথ্যই স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে।
তারা আরও জানান, বসতঘরে পুত্রবধূ থাকলে শাশুড়ি আলেয়া বেগম ও মেয়ে মনিরা থাকবেন না। তাই তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে তারা ঘরের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। অনিতা জামানের বড় ছেলে আলিফ ঘরের তালা ভেঙে ওঠার বিষয়টি জরুরি কল সেন্টার ৯৯৯ এ ফোন করে অভিযোগ করলে বরগুনা সদর থানার কর্তব্যরত এসআই দেবাশীস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কিন্তু ঘরে তালা ভেঙে ওঠার বিষয়টি তেমন গুরুত্বসহকারে আমলে নেননি। কারণ মায়ের ঘরে ছেলের তালা ভেঙে ওঠা কোন অপরাধ নয় বলে জানান।
স্থানীয় ইদ্রিস নামে এক যুবলীগ নেতা শিশু সন্তান আলিফের সামনে কারাবরণকারী মা অনিতাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। আলিফের পিতা জুয়েল বাড়িতে আসলে তাকে ঝুলিয়ে মারবেন বলেও আওয়াজ তোলেন। ঠিক মামলার এ সময়কে কাজে লাগিয়ে মামলা চলাকালীন অবস্থায় তালা ভেঙে ঘরে ওঠার বিষয়টি কতটা যৌক্তিক তা কারোরই বোধগম্য নয়। সহযোহিতা পাবার বদলে শিশু আলিফ পেয়েছে বঞ্চনা। বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নেয়। আলেয়ার কান্নায় বরগুনা পুলিশ সুপারের মন গলে যায়। ফলে বিকেলে তার বাড়িতে গিয়ে খাবার দিয়ে আসেন। যা ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। ইদ্রিসের গালিগুলো ছেলে শুনে হতবাক হয়ে কেবল তাকিয়েই ছিলো।
বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাদির করা মিথ্যা মামলা আসলে কতটা যৌক্তিক? নাকি এর পেছনে অন্য কোন রহস্য লুকায়িত? বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে সঠিক বিচারের আওতায় আনাসহ অনিতা জামানের অচিরেই মুক্তি মিলবে বলে আশা করছেন বরগুনাবাসী। এখন শুধু বরগুনাই নয় বরং গোটা বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে আদালতের রায়ের দিকে।