প্রতিনিধি ৬ জুন ২০২২ , ১২:১০:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়া গ্রামে সংবাদকর্মী আবু জাফর প্রদীপকে (৪২) ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে পরিবারের সদস্যরা ধারণা করেছেন।
প্রদীপের স্ত্রী জিনিয়া আক্তার আজকের তালাশকে বলেন, প্রদীপ বাড়িতেই ছিলেন। রোববার রাত সাড়ে আটটার সময় তাঁর সেজ ভাই ইলিয়াস হোসেন সোহাগ হঠাৎ বাড়িতে আসেন এবং প্রদীপকে ডেকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আমরা তখন কোনো কিছুই বুঝতে পারিনি। মনে করছি, ভাই ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। রাত গভীর হওয়ার পর প্রদীপ ঘরে ফিরে না আসায় আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। তখন সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। কোথাও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এরপর পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে বাড়ির নিকটের একটি পুকুর থেকে রাত দেড়টার দিকে প্রদীপের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
প্রদীপের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে আরও বলেন, প্রদীপের সেজ ভাই সোহাগ বাড়িতে থাকতেন না। সে ঢাকায় বসবাস করতেন। প্রদীপের সেজ ভাই ইলিয়াস হোসেন সোহাগ পৈত্রিক বাড়ির অংশ বিক্রি করার জন্য কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে এসে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। প্রদীপ এতে আপত্তি করেছিল এবং সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলে দেয়। এ নিয়ে প্রদীপের সাথে সোহাগের বিরোধ হয়। গত রমজান মাসে পরিবারের সবাই বসে দু’ভাইয়ের এ বিরোধ নিস্পত্তি করে দেয়।
প্রদীপের স্ত্রীসহ নিকট আত্মীয়দের কয়েকজন বলেন, বাড়ির জমি বিক্রির ঘটনার জের ধরে প্রদীপের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। এ হত্যাকান্ডের সাথে হয়তো একাধিক লোক জড়িত ছিল। এদিকে প্রদীপ হত্যার পর থেকে তাঁর সেজ ভাই সোহাগের মুঠোফোনটি বন্ধ রয়েছে। সে-ও গা ঢাকা দিয়েছে।
প্রদীপের বাড়ির কাছে যৌথ মালিকানায় তাঁর ইট ভাটার ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়া সে পেশায় দলিল লেখক ও গনকন্ঠ নামে দৈনিক পত্রিকার কাজ করতেন। কলাপাড়া সাংবাদিক ক্লাব নামে স্থানীয় একটি সাংবাদিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি।
প্রদীপের স্ত্রী জিনিয়া আক্তার এবং শাশুড়ি পিয়ারা বেগম আজকের তালাশকে বলেন, ‘প্রদীপ রাতের বেলা বাড়ি থেকে কখনই বের হতেন না। নিজের জীবন নিয়ে সে শঙ্কিত ছিলেন। এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক তাকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। দোষীকে আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।’ প্রদীপের এমন নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় পরিবারে শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে। প্রদীপের তাহসিনা আক্তার প্রমি নামে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কণ্যা সন্তান এবং আলভীর নামে তিন বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। তাঁর বাবার নাম মৃত আবদুল খালেক পাহলান।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম আজকের তালাশকে জানান, ‘প্রদীপের ভাইর সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল এটা আমরা শুনেছি। গত রাতেও তাঁর ওই ভাইর সাথে ঝগড়া হয়েছিল। ভাই যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে এটা পরিস্কার। এ ঘটনার পর থেকে ভাই পলাতক রয়েছে। অপরাধীকে ধরতে জোড় চেষ্টা চলছে।’ পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং মৃতদেহ পুকুর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। এ সময় আলামত হিসেবে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। নাভির ডানপাশে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। ডান হাতেও কোপের আঘাত রয়েছে। মৃতদেহের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।