প্রতিনিধি ২৫ জুলাই ২০১৯ , ৪:১৯:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গায় মাদ্রাসা ছাত্র আবির হোসেন হত্যা কান্ডে প্রাথমিক তদন্ত এবং উক্ত হত্যা কান্ডের বিষয়ে ডাক্তারদের মতামতের ভিত্তিতে জানা গেছে বলৎকার পূর্বক ভিকটিমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান পিপিএম তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাস্টাসে এই সব তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, “ছেলে ধরা” গুজবের সাথে এই ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গায় মাদ্রাসা ছাত্র আবির হোসেন হত্যা কান্ডের রহস্য উৎঘটন করতে মাঠে নেমেছে র্যাবের ডগ স্কোয়াড। বুধবার বেলা আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে র্যাবের ডগ স্কোয়াাড বাহিনী ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে এসে অভিযান শুরু করেছে। জানাগেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা নূরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রথম শ্রেনীর ছাত্র আবির হোসেন (১১) মাদ্রাসা ছাত্রের মস্তক বিহিন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে আবির হোসেন তার কয়েককজন সহপাঠির সাথে রাতে এশার নামাজ পড়ার জন্য রুমের বাইরে আসে ওযু করার জন্য। এসময় অন্যরা ওযু সেরে নামাজ পড়তে যাচ্ছিল তখন আবির হোসন বসে ওযু করছিল। তার সহপাঠিদের বলে তোরা যা আমি আসছি। এরপর রাতে খাবার খাওয়াার সময় তার অনুপস্থি’তির বিষয়টি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। সাথে সাথে মাদ্রাসার হুজুর, সহপাঠি ও গ্রামবাসী মিলে বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করে তার কোন সন্ধান পায়নি। রাতে বিষয়টি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়। বুধবার সকালে কয়রাডাঙ্গা গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে ভালাইপুর মাঠের একটি আম বাগানে স্থা নীয়রা আবিরের মাথা বিহিন লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চুয়াাডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এঘটনার সাথে কে বা কারা জড়িত রয়েছে তাদের অতি দ্রুত সনাক্ত এবং গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যহত রয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে র্যাব’র ডগ স্কোয়াড ঘটনাস্থলে পৌছে রহস্য উৎঘটনের জন্য অভিযান শুরু করেছে। এ ঘটনার আনুমানিক ৮ঘন্টা পর চুয়াডাঙ্গা পুলিশ মাহাবুবুর রহমান পিপিএম তার ফেসবুক স্ট্যাস্টাসে উল্লেখ করে জানান, প্রাথমিক তদন্ত এবং উক্ত হত্যা কান্ডের বিষয়ে ডাক্তারদের মতামতের ভিত্তিতে জানা যায় যে, বলৎকার পূর্বক ভিকটিমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ময়না তদন্তে মৃতদেহ থেকে সোয়াব এবং ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। উক্ত ঘটনার সাথে কে বা কারা জড়িত রয়েছে তাদের অতি দ্রুত সনাক্ত এবং গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যহত রয়েছে। তিনি আরো জানান, “ছেলে ধরা” গুজবের সাথে এই ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা দৌলতপুর গ্রামের দুবাই প্রবাসী মোহম্মদ আলী হোসেনের পুত্র। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন মোল্ল্যা জানান,আবিরের বাবা মোহম্মদ আলী হোসেনের আগের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। ১০ বছর আগে সে কালীগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মৃত নাজেম মন্ডলের মেয়ে গোলাপী খাতুনকে বিয়ে করে এ গ্রামেই সংসার শুরু করে। এরপর থেকে প্রায় ১০ বছর ধরে এ গ্রামটিতেই বসবাস করে আসছে। টানাটানির সংসারে থেকে অনেক কষ্ট করে বছর খানেক আগে সে সংসারের সুদিন ফেরাতে দুবাই পাড়ি দেয়। ওই গ্রামের বাসিন্দা এমদাদ হোসেন জানান, মা-বাবা সাংসারিক শত অভাবের মধ্যদিয়েও আবিরের বাবা দুবাই গেছে সংসারের স্ব”ছলতা ফেরাতে। আবিরের ছোট আকিদ নামেরও তাদের আরেকটি ৩ বছরের শিশু সন্তান রয়েছে। সংসারের টানাটানির মধ্যদিয়েও সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা চালিয়ে যা”িছল এ দম্পতি। কিš‘ এরইমধ্যে মা বাবার বুক খালি করে দিল সন্ত্রাসীরা। আরো উল্লেখ্য, দৌলতপুর গ্রামের তার এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে বছর খানেক আগে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানী হাফেজিয়া এতিমখানায় শিশু আবিরকে ভর্তি করে। এরপর থেকে সে এ প্রতিষ্ঠানটিতে লেখাপড়া করে আসছিল। আবিরের প্রতিবেশি ও তার শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফ জানান, আবিরের বাবা প্রবাসে যাওয়ার কিছুদিন আগে আবিরকে চুয়াডাঙ্গর একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করে। সেখানে হাফেজী পড়ছিল। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন জানান, হত্যার শিকার হওয়া শিশুটির বাবা মা অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। এমন ক্ষতি অপুরণীয় ও অকল্পনীয়। মাদ্রাসার মোহতামিম আবু হানিফ জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাতে এশার নামাজের পর থেকে আবিরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টি মাদ্রাসা কমিটি ও পুলিশকে জানানোর পরও খোঁজ মিলছিল না। পরে সকালে মাদ্রাসার পেছনের আমবাগান থেকে আবিরের মাথাবিহীন লাশ পাওয়া যায়। এদিকে, এ ঘটনার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মাদ্রাসা ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে যেতে শুরু করে মাদ্রাসার ছাত্ররা।