প্রতিনিধি ৬ জুলাই ২০২৪ , ৩:৩২:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
বরগুনা প্রতিবেদক ॥ হার্নিয়া অপারেশন করতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় আলাউদ্দিন মুসুল্লী (৬৫) নামের এক রোগী মারা গেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ লাশের উন্নত চিকিৎসার কথা বলে স্বজনদের ডেকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রেরণ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার একে স্কুল সড়কে ইউনিক স্পেশালাইজড হসপিটালে।
শুক্রবার (৫ জুলাই) গভীর রাতে মৃত্যু আলাউদ্দিন মুসুল্লীর ছোট ভাই সরাফ উদ্দিন মুসুল্লীর অভিযোগ ডাঃ মাহবুবুর রহমান কচির ভুল চিকিৎসা ও হসপিটাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। তিনি এ ঘটনার শাস্তি দাবী করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের আলাউদ্দিন মুসুল্লী দালাল তপন খাঁনের মাধ্যমে একে স্কুল সড়কের ইউনিক স্পেশালাইজড হসপিটালে হার্নিয়া রোগ নিয়ে ভর্তি হয়। হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অপারেশন করতে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক সমুদয় টাকা পরিশোধ করেছে রোগীর ছেলে লিমন মুসুল্লী। ডাঃ মাহবুবুর রহমান কচি ওই রোগীর অপারেশন করেন। দুই ঘন্টা পরে রোগী আলাউদ্দিন গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে ওই হসপিটালে মারা যায়। কিন্তু হসপিটাল কর্তৃপক্ষ রোগী মারা যাওয়ার বিষয়টি বুঝতে দেয়নি তার ছেলে লিমনকে। পরে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার কথা বলে ঘটনা ধামাচাপা দিতে মৃত্যু আলাউদ্দিনসহ তার স্বজনদের এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয় এমন অভিযোগ ছেলে লিমন মুসুল্লীর। তারা তাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষনা করেছেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে শনিবার সকালে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছেন।
ঘটনার সত্যতা পেয়ে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার ওই হসপিটালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে ইউনিক স্পেশালাইজড হসপিটালের পরিচালক জামায়াত নেতা রকিব চৌধুরী রাজু উঠে পড়ে লেগেছেন।
মৃত্যু আলাউদ্দিনের ছেলে লিমন মুসুল্লী বলেন, অপারশনের দুই ঘন্টা পরে আমার বাবা অসুস্থ্য হয়ে মারা যায়। কিন্তু ইউনিক স্পেশালাইজড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার কথা বলে এ্যাম্বুলেন্স ডেকে আমার মৃত্যু বাবাকে ও আমাকে পটুয়াখালী পাঠিয়ে দেয়।
ইউনিক স্পেশালাইজড হসপিটালের চিকিৎসক ডাঃ মাহবুবুর রহমান কচি বলেন, আমি যথাযথভাবেই অপারেশন করেছি। আমার অপারশনে কোন ভুল ছিল না। কিন্তু অপারেশনের পরে রোগী মারা গেল কেন এমন প্রশ্নের তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
তাকে বলা হয়েছিলো উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার বলেছেন যে এটা খুবই ছোট একটা অপারেশন এতে কিভবে রোগী মারা যায়? একথা বলার পর তিনি বলেন- তাকেই জিজ্ঞেস করেন কেন রোগী মারা গেল? কথা চলাকালীন সময়ে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন এবং এরপর আবার ও ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ইউনিক স্পেশালাইজড হসপিটালের পরিচালক রকিব চৌধুরী রাজু বলেন, রোগীকে হসপিটাল থেকে মোটামুটি সুস্থ্য অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী পাঠিয়েছি। আমার হসপিটালে রোগী মারা যায়নি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার বলেন, ঘটনাস্থল পরির্দশনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতে ওই হসপিটালের সমুদয় কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মশিউর রহমান বলেন, ওই রোগী হাসপাতালে আনার অনেক পুর্বেই মারা গেছে।
পটুয়াখালী থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’