প্রতিনিধি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ২:৫৩:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশালসহ বিভাগের ছয় জেলায় চিকিৎসক সংকট ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছে স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীরা। বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোয় ১২৮১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৬৮৮ জন। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগীরা। এদিকে শূন্য পদে পদে নিয়োগের দাবি জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সাড়া না পাওয়ায় ক্ষোভ জন্মেছে চিকিৎসক নেতাদের মনে। তাদের মতে, এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারকে এখনই চিন্তা করতে হবে।
জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলে বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে কাগজে-কলমে ১ হাজার শয্যা হলেও দৈনিক দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকছেন। এছাড়া বহির্বিভাগে সেবা নেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। অথচ সে হিসেবে চিকিৎসক নেই।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতালটিতে ৫২৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছেন মাত্র ২৯৮ জন। শূন্য পদ ২২৮টি। হাসপাতালে প্রায়ই রোগীদের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এ সমস্যা স্বীকার করেছেন চিকিৎসকরাও। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন শূন্য পদে নিয়োগের দাবি জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেটি পাত্তা দিচ্ছে না। তাই হাসপাতালে আসা রোগীদের সেবা দান ব্যাহত হয়।
ক্ষুব্ধ রোগী ও তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসকদের সংকট দীর্ঘদিনের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও পাওয়া যায় না। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ছাড়া এ হাসপাতালে আসা সেবা গ্রহীতাদের আর কোনো ভরসার জায়গা নেই।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক বাদে বরিশালে বিভাগে মোট ১২৫টি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। বরিশালে ৭৮০ জন চিকিৎসকের জায়গায় সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৪৬৫ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ৩১৫। পটুয়াখালীতে ২৫৯ জনের জায়গায় আছেন মাত্র ১১৮ জন চিকিৎসক। শূন্য পদের সংখ্যা ১৪১। ভোলায় ২৪৭ চিকিৎসকের জায়গায় আছেন ১২৯ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ১১৮। পিরোজপুরে ১৯২টি চিকিৎসক পদের জায়গায় শূন্য পদের সংখ্যা ৭৭। দায়িত্ব পালন করেন মাত্র ১১৫ জন চিকিৎসক। বরগুনা জেলায় ১৮৬ চিকিৎসকের জায়গায় কাজ করেন ৮৫ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ১০১। ঝালকাঠি জেলায় ১৪৩ জনের স্থলে শূন্য পদের সংখ্যা ৬৯। কাজ করেন মাত্র ৭৪ জন চিকিৎসক।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদগুলো পূরণ করতে পারলে চলমান সংকট নিরসন হবে। এ ছাড়া হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তাদের পদগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে সমস্যা হবে না বলেন তিনি।
চিকিৎসক সংকটের ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ডা. জি.এম. নাজিমুল হক বলেন, হাসপাতালগুলোয় মিড লেভেলের চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টা সেবা দেন। তাদের ক্রাইসিস দীর্ঘদিন ধরে রয়ে গেছে। এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারকে এখনই চিন্তা করতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল শাখার আজীবন সদস্য ডা. প্রদীপ কুমার বণিক বলেন, একজন চিকিৎসক দিয়ে চারজন চিকিৎসকের কাজ করানো সম্ভব নয়। দ্রুত জনবল বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানিয়েছেন, অধিদপ্তর থেকে দ্রুতই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিকিৎসক সমন্বয় করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।