আজিজুল ইসলাম বিশ্বম্ভরপুর সুনামগঞ্জ :-
ঈদুল আযহার ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভীড়ে মুখরিত হবে হাওর, পাহাড়, বন, লেক, নদী বেষ্টিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রান্তিক এক জনপদ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা। প্রকৃতির রাজপুত্র খ্যাত মেঘালয় পাদদেশস্থ তাহিরপুর প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর। দেশী-বিদেশী পর্যটক ও সাধারণ দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হচ্ছে এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে। প্রতিনিয়ত প্রকৃতিপ্রেমিদের ভীড়ে মুখরিত হচ্ছে রূপ-লাবণ্যে ঘেরা ভাটি-বাংলার রূপবৈচিত্রময় এই জনপদ। এখানে রয়েছে ওয়ার্ল্ড রামসার হেরিটেজ সাইট খ্যাত বিশাল জলরাশির টাঙ্গুয়ার হাওর। নীলাভ টাঙ্গুয়ার নয়নাভিরাম দৃশ্য বিশাল হিজল, করচ বাগান। এখানে দর্শনার্থীরা আপন মনে ঘুরছেন মিতালীর সাথে। টাঙ্গুয়ার স্বচ্ছ জলে আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য এক জগতে। এখানে রয়েছে অতিথি পাখিদের বিশাল অভয়াশ্রম। ওয়াচ টাওয়ারের ওপর দাঁড়ালে দেখা যাবে নান্দনিক সব দৃশ্যপট। নয়কুড়ি বিল, ছয় কুড়ি কান্দার সমন্বয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওর। সীমান্তঘেঁষা টেকেরঘাটে রয়েছে নীল রঙে রূপায়িত নীলাদ্রি শহীদ সিরাজ লেক। এ যেনো রূপের শেষ নেই, নীলাদ্রিকে বলা হয় পৃথিবীর একটুকরো স্বর্গ। আরেক নয়নাভিরাম লীলাভূমি মেঘালয়ের কোল থেকে ভেসে আসা লাকমাছড়া ঝর্ণা। এখানে নিজেকে ভাসিয়ে নিতে পারবেন শ্রোতের অনুকুলে মিতালীর সাথে। রূপের নদী যাদুকাটার রূপে মুগ্ধ হচ্ছেন এখানে আসা দর্শনার্থীরা। মেঘালয় থেকে বয়ে আসা রূপের নদী যাদুকাটায় নুরী আর বালুর খেলা দেখা যায় স্পষ্ট। অনেকে এই নদীকে আদর করে মায়ার নদী বলে ডাকে। হেমন্তে ধু-ধু বালুচর আর বর্ষায় মেঘ, পাহাড় আর নদীর খেলায় এখানে আসা দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। রূপের যাদুকাটার তীরঘেঁষে আরেক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সবুজ বনায়ন বারেক টিলা। স্থানীয়রা একে মাটিয়ান পাহাড় বলে ডাকে। টিলার ওপর রয়েছে আদিবাসী পল্লী। টিলার ওপর থেকে যে কাউকে মুগ্ধ করবে ভারতের মেঘালয়ের দৃষ্টিনন্দন সারি সারি খাসিয়া পাহাড়, মনে হবে ভারতের মেঘালয়ে দাঁড়িয়ে রূপসী বাংলাকে দেখছেন। টিলার অপর প্রান্তে রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান। এ যেন এক শিমুলের প্রান্তর, এখানে রয়েছে সারি সারি শিমুল ও লেবু গাছ। বর্তমানে গাড়ো সবুজের সমাহার আর বসন্তকালে রক্তিম শিমুলের সমাহার, বসন্তে শিমুলের পাপড়ি মেলে থাকা রক্তিম আভায় পাখির কিচির মিচির ডাকে সৌখিন হৃদয়ের ঘুম ভাঙায়। প্রাকৃতিক সম্পদের বড়ছড়া, বাগলি ও চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন। পাহাড়ি নদী যাদুকাটার তীরে লাউড়েরগড়ে রয়েছে ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফর সঙ্গী হযরত শাহ আরেফীনের (র.)’র আস্তানা। নবগ্রামে রয়েছে শ্রী অদ্বৈত্য মহাপ্রভুর আখড়া। এই প্রাচীন নবগ্রামে গড়ে উঠেছিলো পৌরাণিক যুগের সমৃদ্ধশালী লাউড় রাজ্যের রাজধানী। হলহলিয়ায় রয়েছে প্রাচীন লাউড় রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ হাওলি জমিদারবাড়ি, এটাই লাউড় রাজ্যের সর্বশেষ রাজা বিজয় সিংহের রাজবাড়ি ছিলো। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য তৈরী করেছে প্রকৃতির এই স্বর্গরাজ্যে।