প্রতিনিধি ১৯ আগস্ট ২০১৯ , ৪:০৮:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল অফিস :
বরিশালের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তবুও থেমে নেই মাদকের বেচাকেনা। কৌশল পাল্টেছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। মোবাইল ফোনে খদ্দেরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন স্থানে গাঁজা বা ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে তারা। অথবা তাদের কথামতো নির্ধারিত স্থানে গিয়ে চাহিদা মতো মাদক কিনছে মাদকসেবীরা। তবে একটু পরপরই অবস্থান বদলাচ্ছেন মাদকের কারবারিরা। তাই নির্দিষ্ট স্থানে তাদের অবস্থান ট্রেস করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ ও কয়েকজন মাদকসেবীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, বরিশালের কেডিসি এবং স্টেডিয়াম কলোনির বস্তিতে এক সময় মাদকের রমরমা ব্যবসা ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে এসব মাদক স্পট ভেঙে দিয়েছে। এই বস্তিতে এক সময় যারা প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করতো, বর্তমানে তারা কেউ কেউ কারাগারে এবং কিছু ব্যবসায়ী পলাতক থেকে বস্তির বাইরে বসে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন মাদকসেবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘মাদক ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণভাবে নেশাজাতদ্রব্য বিক্রি করছে।বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক বিক্রির কৌশল পরিবর্তন করে। বিকাশে টাকা দিলে জায়গামতো পৌঁছে দেওয়া হয় ইয়াবা। ওরা কখনও এক জায়গায় বেশিক্ষণ অবস্থান করে না। এখন নির্দিষ্ট স্পটে নয়, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেই মাদক কেনাবেচা চলছে।’
বরিশালের কিছু উল্ল্যেখ যোগ্য এলাকায় কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেই দেখা মিলে কিছু সংখ্যক কিশোরের। মূলত এদের মাধ্যমেই মাদক বেচা-কেনার কাজ করে থাকে মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকের বিষয়ে অনুসন্ধানে গিয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গত বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ডের কাশীপুর এলাকার খ্রিষ্টান কলোনির সামনে যেতেই দেখা মেলে দুই কিশোরের । তাদের কাছে পরিচয় গোপন করে মাদক ক্রয়ের ওজুহাতে কথা বললে তারা জানান। ‘এখন আর ইয়াবা কিনতে হইলে মোবাইলে কল দিয়া বিকাশে টাহা (টাকা)পাঠাইয়া আইবেন, নইলে সমস্যা হয় আমাগো, এরপর ভাইগনায় (ছোট বাচ্চা/চেলা) আইসা মাল (ইয়াবা) দিয়া যায়। কে বেচে এইডা দেখা যাবে না,টাহা দিলে ঘণ্টা খানেক পরে মাল পাওয়া যাইবো। তবে পরিচিত কাস্টমার ছাড়া কারোর কাছে মাল বেচে না ওরা। আমাগো এক যায়গায় পাইবেন না। একাক সময় একাক যায়গায় পাইবেন ,বোঝেনইতো ঘুরে ঘুরে স্থান পরিবর্তন করেই চালাইতে হয় এই কাম ।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, দীর্ঘ দিন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোড়ালো অভিযান না থাকার সুযোগে মহানগরী এলাকায় মাদকের রাম রাজত্ব গড়ে তোলে দুই শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী। যাদের মধ্যে রয়েছে মাদকের ডিলার এবং হোল সেলার। এরা মাঝে মধ্যে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে পুনরায় আবারো শুরু করে দেয় মাদক রাজ্যের নিয়ন্ত্রন। শুধু তাই নয়, এসব মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে অনেকেই নিজেদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়েও তাদের মাদক বানিজ্য জমিয়ে তোলে। এদের মধ্যে রয়েছে নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ড কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ হামেদ ফকিরের ছেলে সোহেল ফকির, কালু ফকিরের ছেলে গিয়াস, রুস্তম ফকিরের ছেলে রাসেল ফকির, কাজল ফকিরের ছেলে রুবেল ফকির,পলাশ ওরফে লাইটিং পলাশ, শাহীন, মিজান,রাহাত, সুমি, ইমরানসহ আরো কয়েকজন মিলে একত্রিত হয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এদিকে নগরীর জিয়া সড়কের ২২নং ওয়ার্ড যুবলীগ কর্মী তরিকুল ইসলাম রাজা তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে সরজিৎ চন্দ্র রায় ওরফে সবুজ, ইব্রাহিম,একই এলাকার মাসুদ মৃধা। নতুন বাজার এলাকার দম্পতি হারুন ও বেবী। সদর উপজেলার কাগাসুরা এলাকার বাসিন্দা ছত্তার সিকদার। কাউনিয়ার এক সময়ের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বাঁস রফিক ,ল্যাংরা জামাল, পশ্চিম কাউনিয়ার দুলাল ও কাউনিয়ার বিসিক বাবুল।বরিশাল নগরী ও ঝালকাঠি জেলার তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সেন্টু যাকে সম্প্রতি ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে এবং তারই সহোদর শাহ আলম। নগরীর কেডিসি এলাকার এক সময়ের আলোচিত মাদক সম্রাট মালেক ওরফে গাঁজা মালেক তার ভাগ্নে বুলবুল, কেডিসি’র চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নাসিমা ও টুলটুলি।নগরীর ৯নং ওয়ার্ডের রসুলপুর চর কলোনীতেও রয়েছে অর্ধ ডজন মাদক ব্যবসায়ী। যার মধ্যে রয়েছে মৃত শামীম এর স্ত্রী শাহনাজ বেগম। অন্যদিকে রয়েছে র্যাব-৮ সদর দপ্তর সংলগ্নের বাসিন্দা মতিউর রহমান মতি। উকিল বাড়ি সড়কের বাসিন্দা জুয়েল ও ২৫নং ওয়ার্ড বটতলা এলাকার আরিফ। বগুরা রোড মুন্সি গ্যারেজ এলাকার রায়হান, ফয়সাল।পলাশপুর ও মোহাম্মদ পুর এলাকার স্থানীয় হানিফ এর স্ত্রী মুন্নি, মোহাম্মদ পুরের জনি, পলাশপুরের বালা সুমন, মান্না সুমন, গগণ গলির আল আমিন ওরফে আক্কা আলামীন। পলাশপুর ২ নম্বর গলির বাসিন্দা শাহীন ও তার স্ত্রী মুন্নি । হাটখোলা হকার্স মার্কেট এলাকার মামুন। কবী নজরুল ইসলাম সড়কের উজ্জল ও তার সহযোগী স্থানীয় হাসান ও রবি শীল।
এদিকে বরিশাল মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কোন মাদক ব্যবসায়ীই ছাড় পাবে না। যারা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে জানিয়ে নগর পুলিশের মুখপাত্র মো. নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, মহানগরী এলাকায় ২৬৭ জন মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা রয়েছে তাদের হাতে। যারা মধ্যে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এবং গড ফাদার রয়েছে। ডিবি ও মহানগরীর ৪ থানা পুলিশের কাছেও তালিকা পৌছে দেয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও নতুন গজিয়ে ওঠা মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।