তালাশ প্রতিবেদক ॥ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতের হত্যাযজ্ঞ থেকে রক্ষা পাওয়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ৪৭ তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনটি পালনে দোয়া-মোনাজাতসহ কেক কাটা হয়। ১৯৭১ সালের ১৫ আগষ্টের কালো রাতে যে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রেখে বর্বর হত্যাকারীদের হাত থেকে দেড় বছর বয়সী শিশু সাদিক আবদুল্লাহকে রক্ষা করেছিলেন সেই গর্ভধারীনি মাকে ছাড়াই প্রথমবারের মতো নিজের ৪৭তম জন্মদিন পালন করলেন। প্রতিবছরের ১৯ নভেম্বর জন্মদিনে মায়ের স্নেহ আর ভালবাসায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ পরিপূর্ন থাকলেও এবার তা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। কারণ হঠাৎ করেই ২০২০ সালের ৭ জুন না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মা সাহান আরা বেগম।
বিভিন্নজনে মেয়রকে নানাভাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেও মা’কে তিনি হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর চার সন্তানের মধ্যে বড় তিনি। নানা ঘাত প্রতিঘাত মোকাবেলা করে আজ নিজেকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মাত্র দেড় বছর বয়সে বর্বর ও পাষন্ড হত্যাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ায় সাদিক আবদুল্লাহ মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি সবসময় শুকরিয়া আদায় করে। এছাড়াও এ প্রসঙ্গে বলে থাকেন, “হয়তো জনগনের সেবা করার জন্য সেদিন তাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।” রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সাদিক আব্দুল্লাহ অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন। ঘাত-প্রতিঘাত এবং অতীত জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে কঠোর বাস্তবতার মধ্য দিয়ে নিজেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। এক যুগেরও কম সময় পূর্বে সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত হয়েছেন তিনি। বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
শুধু রাজনীতির মাঠেই নয়, তিনি হয়ে উঠেছেন গণমানুষের একজন। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। নগরপিতা নির্বাচনের প্রথম প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নগর পিতা হলেও তিনি সবসময় জনতার কাতারে থাকার চেষ্টা করেন। সাদিক আবদুল্লাহ বয়স্কদের যেমন সন্মান করেন তেমনি ছোটদের করেন স্নেহ। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করে সাদিক আবদুল্লাহ কঠোর হস্তে শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছেন আবার তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য হয়েছেন মানবিকও। তিনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন বাড়িয়েছেন।
অনিয়মিত সকল কর্মচারীর জন্য চালু করেছেন বোনাস। মাসের প্রথম সপ্তাহেই পরিশোধ করা হচ্ছে বেতন। চাকুরী শেষে অবসর যাওয়ার পর যাবতীয় সকল সুবিধা পাওয়ার স্বপ্ন কেউ কখনো দেখেননি। কিন্তু সাদিক আবদুল্লাহ অবসরে যাওয়া ৪৬ জন স্টাফকে একসাথে তাদের সকল পাওনা পরিশোধ করে দিয়ে বিসিসির ইতিহাসে নজির সৃষ্টি করেছেন। বয়সে নবীন এই মেয়র সকলকে সাথে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন আগামীর বরিশাল গড়ার। নগরীর সিনিয়র সিটিজেন ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের জন্য নগর ভবনে একটি হেল্প ডেক্স চালু করেছেন প্রথমবারের মতো। শিশু সুলভ মনের অধিকারী সাদিক আবদুল্লাহ শিশুদের ভীষন পছন্দ করেন।
শিশু বান্ধব নগরী গড়ার লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন। উৎসবের সময় নতুন পোশাক নিয়ে ছুটে যান এতিমখানাসহ দু:স্থ শিশু নিবাস কেন্দ্র গুলোতে। শিশুদের জন্য একটি পার্ক সংস্কারের পাশাপাশি নগরীতে গড়ে তুলেছেন আরেকটি শিশু পার্ক। ঘোষনা দিয়েছেন নগরীর পাড়া মহল্লায় মিনি পার্ক নির্মাণের। মিডিয়া বান্ধব সাদিক আবদুল্লাহ গনমাধ্যম কর্মীদের ব্যাপক মূল্যায়ন করে থাকেন। তিনি মনে করেন রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা একে অন্যের পরিপূরক। কারন সাংবাদিকরা লিখনীর মাধ্যমে জনগনের ভালমন্দ তুলে ধরেন। আর রাজনীতিবিদরা জনকল্যানের জন্য রাজনীতি করেন। সংস্কৃতিপ্রেমী সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর মায়ের মতো সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পৃষ্টপোষকতা করতে পছন্দ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাদিক আবদুল্লাহ প্রায়ই বলে থাকেন একজন বিবেকহীন শিক্ষিত লোকের চেয়ে একজন দেশপ্রেমিক অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা অনেক ভালো। আর সেই কারনেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে ত্রিশ গোডাউন এলাকার বধ্যভূমি সংরক্ষনে কাজ শুরু করেছেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সাদিক আবদুল্লাহ একজন মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে থাকতে চান। সস্তা জনপ্রিয়তা না তিনি নগরীর টেকসই উন্নয়নের মতোই মানুষের কাছ থেকে টেকসই ভালবাসা কামনা করছেন।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে তাইতো ভালবাসার এই নগর পিতার জন্মদিন পালন করা হয়েছে। কেউ করেছেন সংগঠনের ব্যানারে কেউ কেউ করেছেন ব্যক্তিগত ভাবে। এর মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম রাছেল এর উদ্যোগে কেক কাটা ও তার জন্য দোয়া করানো হয় ।