প্রতিনিধি ২২ আগস্ট ২০২২ , ৭:৪৮:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের প্রতিটি উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে সোমবার (২২ আগস্ট) থেকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। জ্বালানি তেল, পরিবহন ভাড়াসহ দ্রব্যমূল্য বাড়া এবং ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা নিহতের প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এ কর্মসূচি শুরু হবে।
গত ১১ আগস্ট নয়াপল্টনের সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী ২২ আগস্ট থেকে আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বো। প্রতিটি উপজেলায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্যদিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে এ সরকারকে বিতাড়িত করতে বাধ্য করবো।
ওই সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের আর বসে থাকলে চলবে না। আঘাতের প্রতি উত্তরে পাল্টা আঘাত করতে হবে। আত্মরক্ষার্থে হাতে লাঠি নিতে হবে। যেখানে আঘাত করার সেখানে আঘাত করতে হবে। চলার পথে যেখানে হাত তুলতে হয় সেখানে তুলবেন।
এছাড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের দেওয়া দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি উপজেলা, থানা, পৌর এলাকার কর্মসূচির তারিখ নির্ধারণ করবেন জেলার নেতারা। ২২ আগস্ট থেকে প্রতিদিন প্রতিটি জেলা, মহানগরের কমপক্ষে একটি উপজেলা, থানায় কর্মসূচি পালিত হবে। সেসব কর্মসূচিতে জেলার নেতারা এবং সংশ্লিস্ট জেলার অধিবাসী কেন্দ্রীয় নেতারা ও সাবেক সংসদ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়, প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মসূচির তারিখ নির্ধারণ করবেন উপজেলা, থানা, পৌর নেতারা। ২২ আগস্ট থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে একটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে কর্মসূচি পালিত হবে। সেসব কর্মসূচিতে উপজেলা, থানা, পৌর নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে সার্বিকভাবে সমন্বয় করবেন।
প্রতিটি ইউনিটের কর্মসূচি পালনের তারিখ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠাতে চিঠিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কর্মসূচি সফল এবং আন্দোলন বেগবান করার প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ৮১টি সাংগঠনিক জেলায় এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। জেলা পর্যায়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমন্বয় এবং কর্মসূচি কতটা সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণে সব বিভাগে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে টিম করা হয়েছে।
কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের জন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে ঢাকা বিভাগে, কুমিল্লায় বরকত উল্লাহ বুলু, চট্টগ্রামে মো. শাহজাহান, খুলনায় শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে রাজশাহীতে, ফরিদপুরে মশিউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সিলেটে, বরিশালে যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, রংপুরে যুগ্ম-মহাসচিব হারুন অর রশীদ এমপি, ময়মনসিংহে যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচি সফল করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
জানা গেছে, চার দলীয় জোট সরকারের এমপিদের যারা এখন দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের যারা এলাকায় যান না, তাদের বিষয়ে বিভাগীয় বৈঠকে আপত্তি তোলেন তৃণমূলের নেতারা। হাই কমান্ড থেকে বলা হয়েছে যেসব কেন্দ্রীয় নেতা এবারের কর্মসূচিতে অংশ নেবে না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সাংগঠনিক জেলার নেতাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে সারাদেশে একযোগে কর্মসূচি শুরু হবে।
প্রসঙ্গত: গত ৩০ জুলাই ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আবদুর রহিম মাতব্বর নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলম ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গত ৪ আগস্ট। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি দেয় বিএনপি। গত ১১ আগস্ট নয়াপল্টনে বিশাল সমাবেশে দলের মহাসচিব সারাদেশের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।