বরিশাল

বরিশালে কিস্তি দিতে না পারায় ১০ মাসের বাচ্চাসহ ঝুমুর বেগমকে আটকে রাখার অভিযোগ

  প্রতিনিধি ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ , ২:২১:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক॥ বরিশাল নগরীতে ব্র্যাকের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ১০ মাসের বাচ্চাসহ ঝুমুর বেগম নামে এক নারীকে অফিসে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। পরে তার স্বজনরা ৯৯৯ এ কল করলে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে নগরীর কাউনিয়া টেক্সটাইল মোড় এলাকার ব্র্যাকের অফিসে তাদের আটকে রাখা হয়। পরে তার স্বজনরা ৯৯৯ এ কল করলে দুপুর ২ টার দিকে তাদের উদ্ধার করে কাউনিয়া থানা পুলিশ।

 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে এনজিওটির ম্যানেজার। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর কাউনিয়া টেক্সটাইল মোড় এলাকার ব্র্যাকের শাখা থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে অটোচালক সুজন মাঝি। তিনি নিয়মিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করে আসছিলেন। হঠাৎ সংসারে অভাব অনটন ও বাচ্ছা অসুস্থ থাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না সুজন। পরে মঙ্গলবার বেলা ১০ টার দিকে সুজনের স্ত্রী ঝুমুরকে ঋণের কিস্তির জন্য ওই এনজিওটির ফিল্ড অফিসার লিমা আক্তার চাপ প্রয়োগ করে। ঝুমুর কিস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা ধার করে আনার জন্য বলেন লিমা। তিনি কয়েকজনের কাছে ধার চেয়ে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে সামনের মাসে একসঙ্গে কিস্তি পরিশোধ করবে বলে জানান ফিল্ড অফিসার লিমাকে। এ কথা শুনে তেলে-বেগুনে জলে ওঠেন ফিল্ড অফিসার লিমা। পরে তাকে জোরপূর্বক ব্র্যাক অফিসে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

 

ঋণগ্রহীতা সুজন মাঝি বলেন- আমি ব্র্যাক থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে প্রতিমাসে সময় মতো কিস্তি দিয়ে আসছি। কয়েকদিন যাবত আমার বাচ্ছাটা অসুস্থ থাকায় আমি কিস্তির টাকা জোগাড় করতে পারিনি। সেই জন্য এ মাসে কিস্তি দিতে পারিনি। এ কারণে ব্র্যাক অফিসের লোকজন আমার ১০ মাসের বাচ্ছাসহ স্ত্রীকে আটকে রাখে। পরে ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয় নি।

 

ঋণগ্রহীতা ঝুমুর বলেন, ‘আমার স্বামী আটোচালক। বাচ্ছা অসুস্থ থাকায় তার পিছনে অনেক টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। তাই এই মাসের কিস্তির টাকা দিতে পারিনি। সে কারণে এনজিও থেকে ফিল্ড অফিসার লিমা আপা এসে আমাকে জোড় করে অফিসে নিয়ে চায়। এ সময় আমার বাচ্ছা অসুস্থ জানালে তিনি বলেন- আপনার বাচ্ছা বাছুক-মরুক আমাদের কিস্তি দিতেই হবে। পরে আমাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা ধার করে আনার জন্য বলেন। আমি কয়েকজনের কাছে ধার চেয়ে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে সামনের মাসে একসঙ্গে কিস্তি পরিশোধ করবো তাকে জানাই। এরপর লিমা আপা ক্ষিপ্ত হয়ে জোরপূর্বক আমাকে ও আমার বাচ্ছাকে তাদের অফিসে নিয়ে আটকে রাখে। তখন লিমা আপা বলে- তোকে আর বাচ্ছাকে আটকে রাখলাম, তোর স্বামী এসে টাকা পরিশোধ করে তোদের ছাড়িয়ে নেবে। পরে পুলিশ গিয়ে আমাদের থানায় নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করার শর্তে ছেড়ে দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দা লাইজু বেগম বলেন- ঝুমুরের বাচ্ছা অসুস্থ থাকায় বেশ কিছুদিন যাবত তারা খুব অভাবে দিন পার করছেন। তারা তিন বেলা ঠিকমত খেতেও পায়না। সকালে ঝুমুরকে কিস্তির টাকার জন্য ব্র্যাক অফিসের লোক চাপ দেয়। তিনি কয়েকজনের কাছে ধার চেয়ে পায়নি। পরে জোরপূর্বক তাকে ও তার বাচ্ছাকে ব্র্যাক অফিসে নিয়ে আটকে রাখে। ঘটনাটি অমানবিক। আমরা এর বিচার চাই।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের ফিল্ড অফিসার লিমা আক্তারকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলেই অফিস ত্যাগ করেন। পরে কথা হয় ব্র্যাকের এরিয়া ম্যানেজার মমিন উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান- আটকের রাখার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। ওই নারী নিজের ইচ্ছায় অফিসে এসেছেন। তবে পুলিশ কেন তাদের উদ্ধার করলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- স্থানীরা কেউ ৯৯৯ এ কল করেছে। তাই পুলিশ এসে থানায় নিয়ে যায়। পরে পুলিশ সব জেনে মিমাংসা করে দিয়েছে।

 

অভিযোগ অস্বীকার করে ব্র্যাকের ম্যানেজার হ্যাপি দাস বলেন- আমরা অফিসে ছিলাম না। কাজে বাইরে ছিলাম। সেখান থেকে জানতে পারি ঝুমুর আমাদের সাথে কথা বলতে অফিসে এসেছে। পরে এসে কথা বলার এক পর্যায় পুলিশ আসে। আমি পুলিশকে বলি বিষয়টি এখানে বসে মিমাংসা করেন। কিন্তু পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। সেখানে বসে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে।

 

কাউনিয়া থানার এএসআই বিপুল বলেন- ৯৯৯ এ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে ঝুমুর ও তার বাচ্ছাকে ব্র্যাক অফিসে পেয়ে দুই পক্ষকে থানায় নিয়ে আসি। পরে থানায় বসে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে।

 

কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত করমকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন- ৯৯৯ এ কল পেয়ে দুই পক্ষকে থানায় আনা হয়। পরে বসে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়।