প্রতিনিধি ৮ জানুয়ারি ২০২৪ , ২:২৩:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সারাদেশের ন্যায় বরিশাল বিভাগেও শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে চলে ভোট গ্রহণ। এবার বরিশালের ছয়টি সংসদীয় আসনে গড়ে ৪১ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম। রবিবার সন্ধ্যায় ভোট গনণা শেষে তিনি এ তথ্য জানান। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বিভাগটিতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ এবারের নির্বাচন। এছাড়া বিভাগের ২১টি আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রে চমকে খুশির আমেজ বিরাজ করছে দক্ষিনাঞ্চবাসীদের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহনকে অনেকেই সাধুবাত জানিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনে বিজয়ী হলেন যারা-
বরিশাল-১ আসনের ১২৯টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৭ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির ছেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী পেয়েছেন ৪ হাজার ১শ’ ২২ ভোট।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের ১৩৬ কেন্দ্রে ১৪ দলের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী একে ফাইয়াজুল হক রাজু ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩১ হাজার ১৬২ ভোট।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের ১২৪ কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু লাঙ্গল প্রতীকে ৫১ হাজার ৮১০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আতিকুর রহমান ট্রাক প্রতীক নিয়ে ২৪ হাজার ১শ’ ২৩ ভোট পেয়েছেন।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের ১৪৯ কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথ ঈগল প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মো. মিজানুর রহমান পেয়েছেন ৭ হাজার ৬৭৫ ভোট।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনের ১৭৬ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের জাহিদ ফারুক নৌকা প্রতীক নিয়ে ৯৭ হাজার ৭০৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাহউদ্দিন রিপন ট্রাক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৩৭০ ভোট।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের ১১৩ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আবদুল হাফিজ মল্লিক নৌকা প্রতীক নিয়ে ৬০ হাজার ১০৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শামসুল আলম ট্রাক প্রতীক নিয়ে ৩৯ হাজার ৩৭৪ ভোট পেয়েছেন।
পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকি) আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার ৮১ হাজার ৫০৮ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস পার্টির ডাব প্রতীকের প্রার্থী নাসির উদ্দিন তালুকদার পেয়েছেন ২৬ হাজার ৮৭৪ ভোট।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ স ম ফিরোজ ১ লাখ ২৪ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. মহসীন হাওলাদার পেয়েছেন ২ হাজার ৯৫৮ ভোট।
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান এমপি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম শাহজাদা ৯৪ হাজার ৪১৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক মেজর (অব.) আবুল হোসেন পেয়েছেন ৫৯ হাজার ২৪ ভোট।
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান এমপি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিব্বুর রহমান মহিব ৫৬ হাজার ২৫৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনবারের সাবেক এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৪২০ ভোট।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম)। তিনি ৯৫ হাজার ৪৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাকের পার্টির আবু বকর সিদ্দিক গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন এক হাজার ৬২৪টি। এছাড়াও অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার আবুল কাশেম ফখরুল ইসলাম পেয়েছেন ৩৭০ ভোট।
ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি সদর- নলছিটি) আসনে ১৪৭টি কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আমির হোসেন আমু ১ লাখ ৩৭ হাজার এক ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী নাসির উদ্দিন এমরান লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ৩১৭ ভোট। এছাড়াও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এন. পি পি) প্রার্থী মো. ফোরকান হোসেন আম প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫০ভোট।
পিরোজপুর-১ আসনে আবারো বিজয়ী হয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। তিনি পেয়েছেন ৮৫,৪১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) সাবেক এমপি ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল পেয়েছেন ৭৫,৪৮৭ ভোট।
পিরোজপুর-২ আসনের বিজয়ী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ। বেসরকারী ফলাফলে দেখা গেছে-তিন উপজেলা মিলিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন এক লাখ ১ হাজার ৪৯৬ ভোট আর নৌকা নিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন ৭১ হাজার ৫২১ ভোট।
পিরোজপুর-৩ আসনে চারবারের সাংসদ স্বতন্ত্র প্রার্থী(ঈগল প্রতীক) ডা. রুস্তুম আলী ফরাজিকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে স্বস্তন্ত্র প্রার্থী(কলারছড়ি প্রতীক) শামীম শাহজাহান বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী কলারছড়ি প্রতীকে শামীম শাহনেওয়াজ পেয়েছেন ৬২ হাজার ১৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ঈগল প্রতীকে ডা. রুস্তুম আলী ফরাজি পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৬২১ ভোট।
ভোলা-১ আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন তোফায়েল আহমেদ। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের এ প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৫২ ভোট। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিজয়ী তোফায়েল আহমেদের সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়া লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার ৫১৯ ভোট।
ভোলা-২ আসনে তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আলী আজম মুকুল। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩২৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গজনবী (জেপি) পেয়েছেন ৩ হাজার ১৯১ ভোট।
ভোলা-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৯১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মেজর (অব.) মো. জসিম উদ্দিন পেয়েছেন ১৭ হাজার ৮৮৬ ভোট।
ভোলা-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিজানুর রহমান (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৫ হাজার ৯২৮ ভোট।
বরগুনা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকু নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৬১,৭৪২। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার ফোরকান পেয়েছেন ৫৮,১৪৭ ভোট। এদিকে ৫ বারের নির্বাচিত নৌকার প্রার্থী অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু পেয়েছেন ৫৪,০৯৮ ভোট।
বরগুনা-২ আসনে বেসরকারিভাবে সুলতানা নাদিরা নির্বাচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-২ (বেতাগী-বামনা-পাথরঘাটা) আসনে সুলতানা নাদিরা নৌকা প্রতীকে ৪৬ হাজার ৭৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী নোঙ্গর প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী দলের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ড. আব্দুর রহমান খোকন পেয়েছেন ১ হাজার ২৭ ভোট। তাছাড়া ডাব প্রতীকে বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান ৫১৫ ভোট।
এদিকে বাংলাদেশে নির্বাচনের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। ২৯৯ আসনে ভোট হয় যার মধ্যে ২২২টিতে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লেখ গত ১৫ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ১৯৬৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন। ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র এবং ২,৬০,৮৫৮টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন।