প্রতিনিধি ২৬ আগস্ট ২০২০ , ৩:৩৩:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ
মারুফ হোসেন ॥
কি ভাবছেন? হ্যা, একটু ভাবনার বিষয় এখানে রয়েছে। আমি পুলিশের কথা বলছি, বাংলাদেশ পুলিশ। সকল দুর্যোগে দুর্বিপাকে যাদের কে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় কাজে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করি। কখনো জেনে দেখেছেন সেই পুলিশ সদস্যদের জীবন কাহিনী? তারাও তো মানুষ, তাদের কথা কতটুকু ভাবছেন আপনারা ? হ্যা, তারাই দিনরাত নিরলস পরিশ্রমের ফলে আমাদের জনজিবনের নিরাপত্তা বিধান সহ রাষ্ট্রীয় সকল দায়িত্ব নিজ কাধে বহন করেন।
বাংলাদেশ পুলিশে রয়েছেন আমাদের কারো ভাই, কারো পিতা, কারো বোন কিংবা কারো না কারো আত্মীয়- স্বজন। যারা দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে নিজের জিবন বিপন্ন করতেও কুন্ঠিত বোধ করেন নাহ। যাদের সততার মাধ্যমে আমরা সুন্দর একটি রাষ্ট্রে বসবাস করছি। হ্যা, তারাই তো পুলিশ। আমি তাদের কথাই বলছি।
আমাদের রাষ্ট্রে তাদের মত সৎ, নিষ্ঠাবান ও আদর্শবান পুলিশ সদস্যদের বাইরেও রয়েছেন কিছু অসাধু, লোভী ও প্রতারক পুলিশ। সেই সকল পদস্থ কর্মকর্তা বা সদস্যদের জন্য তো আমরা পুরো পুলিশ বিভাগকে বদনাম করতে পারিনা। হ্যা! মানছি কতিপয় কিছু পুলিশ সদস্যের অমানবিক আচরনে সাধারন মানুষের জনজীবনে আতংক সৃষ্টি হয়।
পুলিশ জনগনের বন্ধু, জনগনের জীবনমান এর উন্নতি ও নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের কাজ করতে হয়। একটু ভূল তো হতেই পারে।। কি বলেন হতে পারেনা? তাই বলে কি তাদের মত দুষ্ট কতিপয় পুলিশ সদস্যের কু-কর্মের ভাগ সবার মাথার উপরে বর্তাবে। না তা হতে পারেনা। পুলিশ ও জনগনের মধ্যে বন্ধুত্তপূর্ণ সু-সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নানান পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন ইতিমধ্যে। যার ফলাফল পেতে শুরু করেছেন সাধারন জনগন। কোথাও কোনো পুলিশের কু-কর্ম বা কোনো অন্যায় চোখে পড়লেই সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
আর কি চান আপনারা? বাংলাদেশ পুলিশের কোনো সদস্যদের বিরুদ্ধে আপনার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ রয়েছে? জানাতে পারেন হেল্পলাইনে। যার জন্য ইতিমধ্যে সরাসরি সমস্যা ও অভিযোগের কথা শুনবেন পুলিশের আইজিপি।
এবার আসল কথায় চলে যাই, আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি থেকে একসাথে পড়াশুনা করেছি অনেক বন্ধু। আস্তে আস্তে পার করেছি প্রাথমিক, তারপর মাধ্যমিক, তারপর যে যার মত কলেজে ভর্তি হয়ে যাই, কেউ কেউ পরিবারের চাপে পড়ে চাকুরি জিবনেও পা ফেলেছেন। আবার কেউ কেউ চলে গেছেন দেশের বাইরে। হঠাৎ গতরাতে দেখা হয় আমার সেই কাছের এক বন্ধুর সাথে ।
নাম না বলার শর্তে, তার ছদ্দনাম (রুবেল) বলে ধরে নিতে পারেন। দীর্ঘ ৫ বছর পরে দেখা। রিতিমতো গল্পে মেতে যাই বন্ধু রুবেল এর সাথে। হঠাৎ আমাদেরই এক বন্ধু বলে ফেলেছেন, ওহ রুবেল তুই তো পুলিশ? বন্ধু রুবেল এর চোখে মুখে লজ্জা দেখতে পেলাম। অনুভব করার চেষ্টা করলাম ওর অনুভূতিটা কি।
কি ভাবছেন প্রিয় পাঠক ?
পুলিশ কি মানুষ নয়। হ্যা, ঠিক সেটাই তো মনে হচ্ছে। আসলে আমরা ভুলে যাই এক কলস দুধের মধ্যে এক ফোটা বিষ প্রয়োগ করলে সে দুধ তো নষ্ট হওয়ারই কথা। দু’একজন পুলিশ সদস্যদের কারনে আজ আমার বন্ধুর মত হাজারো সৎ ও নির্লোভ পুলিশ সদস্যরা মানুষের কাছে তিরষ্কার হচ্ছেন।
পুলিশের পোশাকের ভিতরে রয়েছে একটি মানব হৃদয়। রয়েছে একটি সুন্দর মন। কর্মের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের কাজ করতে হয়, যা কারো পক্ষে বা কারো বিপক্ষে চলে যায়। এটাই পুলিশের বড় দোষ।
এত প্রশ্ন নিজের মনের অন্তরালে রেখে চলার থেকে আত্মহত্যা সহজ বলে মনে হয় তখন তার নিজের কাছে।
যে ছেলেটি কখনও নিজের খাবার নিজে নিয়েও খায়নি আজ তাকে সব কিছুই সহ্য করতে হয়। দেশের এবং দেশের মানুষের কথা ভেবে দিন রাত কাজ করতে করতে একটি সময় রাগকে নিজের আয়ত্বে রাখতে পারেনা। নেতার গাড়িটি পাঁচ মিনিট জ্যামে কেনো আটকে গেলো তার জবাব দিহিতা কতই বা মেনে নেয়া যায়। আমাদের অসুস্থতা রয়েছে তাদের কি নেই? শরীর অসুস্থ লাগলে ১ ঘন্টা আগে ডিউটি ছাড়লে চাকরি থাকবেনা ভেবে শত কষ্টের ভিতরে সময় মতো ডিউটি শেষ করতে হয়।
ঈদ ?
পুলিশের চাকরিতে ঈদ শব্দটি বেমানান। মা যখন ফোন দেয় বাবা এবারের ঈদেও তুই বাড়ী আসবিনা, আমরা আর কতদিন বাঁচবো তখন একজন পুলিশ সদস্যের মনের উপরে কত বড় ঝড় বয়ে যায় তা সবাই বুঝবেনা।
দেশে এখন মহামরি করোনা। করোনা প্রকোপটা যখন শুরু হয় তখন সবাই ঘরে নিরাপদে থাকলেও আপনাদের নিরাপদে রাখতে পুলিশ ছিলো রাস্তায়। অনেকে মৃত্যু বরণ করেছেন আবার অনেকে মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েও ফিরে এসেছেন। অনেকে বুঝেছে করোনা নামক মহামারি কতটা কষ্টদায়ক । তার পরেও কখনও কি আপনাদের গালি দিয়েছে?
তবে কেনো এই উপহাসের সুর, তুই পুলিশ !!!
বলতে চাই রুবেলের কথা, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। ঈদ আসলেই আমার কাছে একটি ফোন আসে রুবেলের বাড়ি থেকে, বাবা তুমি বাসায়চলে আসবা সকাল সকাল। আমরাতো সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছি। তুমি আসলে অভাবটা একটু পূরণ হয়। খুব কষ্ট হয়তিনি যখন আমাকে খাবার খাইয়ে দেয় আর কাঁদে। রুবেলের বাবা মোটা ফ্রেমের একটি চশমা চোখে দেয়। সকালে চায়ের চুমুক রেখে পত্রিকার পাতা খুলে বসে থাকে।
পুলিশ সদস্যের বাবা বলে কথা।
পুলিশ কোনো ভালো কাজ করলেই সেই নিউজ পরার পরে আমাকে ফোন দিয়ে বলবে বাবা তোমার দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকায় পুলিশের এই নিউজটি পরলাম খুব ভালো লাগলো । সবসময় ভালো লেখার চেষ্টা করবা আর যদি কোনো ভুল করে তাকে ফোন দিয়ে ডেকে ভুলটা সুধরে দিবা। ভূল তো মানুষ-ই করে। ওরা অনেক কষ্ট করে সেই কষ্টের প্রতিদান হিসেবে একটু ছাড় না দিলে খুব কষ্ট পাবে ওরা। পুলিশতো কাউকে কষ্টের কথা বলতে পারেনা। পারেনা শব্দ করে কাঁদতে। একটু অনুভব করো ওদের কষ্টকে। আমি বলবোনা সব পুলিশ ই প্রকৃত জীবন যোদ্ধা।
সব পুলিশ-ই দেশের জন্যে কাজ করে। সম্প্রতি কক্সবাজার টেকনাফ থানার বরখাস্তপ্রাপ্ত ওসি প্রদীপের মতো লোক পুলিশের কলঙ্ক হয়ে যোদ্ধা হতে পারেনা। এমন অনেক প্রদীপ রয়েছে বাংলার মাটিতে, এদেরকে যতো বড় শাস্তি দেয়া যায় তা দিয়ে পুলিশ বাহিনিকে মানুষের আস্থার আলিঙ্গনে রাখার ব্যাবস্থা করা হোক ।
প্রিয় পাঠক, আপনারা কি এখোনো উপহাস করবেন? নাকি আমাদের মানুষিকতাকে পরিবর্তন করে দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ভালো কাজ কে সাধুবাদ জানিয়ে ন্যায় কে ন্যায় আর অন্যায় কে অন্যায় বলে বুকে সাহস নিয়ে এগিয়ে যাবেন।কোনটা করবেন, এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম প্রিয় পাঠক আপনাদের কাছে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনার, আমার, আমাদের সবার। কাউকে উপহাস করে, কাউকে হেয় করে কখনো দেশটা এগিয়ে নেয়া সম্ভব না।