প্রতিনিধি ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ , ২:৫০:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক :- বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের অধীন সাহেবেরহাট বন্দরের ঔষধ ব্যাবসায়ী রতন মেডিকেল হলের স্বত্বাধিকারী সুমন দেবনাথ । তার পিতা তপন দেবনাথ একই বাজারের কাপড় ব্যাবসায়ী। ভালো লোক হিসেবে সুনামও রয়েছে নিজ গ্রাম সোমরাজীর বাসিন্দাদের কাছে। হঠাৎ ঐপরিবারে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। গত ২৪ শে নভেম্বর সন্ধ্যার পরে সুমনকে তার দোকান থেকে র্যাব পরিচয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় ৬-৭ জন অজ্ঞাত ব্যাক্তি। সেই থেকে ২১ দিন পার হলেও আজও সন্ধান মেলেনি সুমনের। তবে, প্রশাসনের দাবি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা মডেল থানার একটি হত্যা মামলার আসামি সুমন দেবনাথ। তাই হয়তো তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব কিংবা অন্য কোন সংস্থা। এদিকে সুমনের অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় চরম হতাশা এবং উৎকন্ঠায় ভুগছে সুমনের স্ত্রী সংগীতা, ৩ বছরের শিশু কন্যা পূর্বা, পিতা তপন দেবনাথ সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। প্রতিবেদককে কান্না জড়িত কন্ঠে নিখোঁজ সুমনের পিতা তপন দেবনাথ বলেন, ঘটনার দিন আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে আমাদের বাড়িতে স্থানীয় ইউপি সদস্য অমলকে নিয়ে হাজির হন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা মডেল থানার ওসি আঃ খালেক ও সঙ্গীয় ফোর্স। তাদের সাথে বন্দর থানার পুলিশও ছিল। এসময় তারা আমাকে জানায় যে, সুমন দামুরহুদা থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। তখন হতবাক হয়ে পুলিশকে আমি জানিয়ে দেই যে, আমার ছেলেকে প্রায় ছয় ঘন্টা পুর্বেই অর্থাৎ ঐদিন সন্ধ্যার পরেই দোকান থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেছে। একথা শুনে ওই দলটি স্থান ত্যাগ করে। তবে ওই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার ছেলের কোন সন্ধান পাইনি। বন্দর থানায় জিডি করতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ইউপি সদস্য অমল বলেন, আমাকে সাথে নিয়েই দামুরহুদা মডেল থানার ওসি ২৪ শে নভেম্বর রাত ১২ টার দিকে সুমনদের বাড়িতে যায়। অত:পর সুমনকে খুজতে এসেছে জানালে আমিও তাদেরকে সুমনের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অবহিত করি। তিনি আরো বলেন, সুমন অপরাধী হলেও তার পরিবারের সদস্যদের অধিকার রয়েছে সেটা জানার এবং তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার। একই অভিব্যক্তি ব্যাক্ত করে টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহাউদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি বিষয়টা শুনেছি। সুমন যদি অপরাধী হয়েও থাকে তাহলে তার পরিবারকে জানানো হোক। একটি লোকতো আর হাওয়া হয়ে যেতে পারেনা। এদিকে সাহেবেরহাট বন্দর ব্যাবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি শামিম খান লিখন বলেন, আমি সুমনের পিতা তপন দেবনাথকে নিয়ে বন্দর থানায় গিয়েছিলাম সুমনের সন্ধান পেতে। এ বিষয়ে পুলিশ নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করে। এমনকি সুমনের বাবা তপন দেবনাথ একটি সাধারণ ডায়েরি করতে চাইলেও তা গ্রহণ করেনি বি এম পি বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তবে বিষয়টি নিয়ে ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গা দামুরহুদা মডেল থানার ওসি আমার কাছে এসেছিল এবং একজন হত্যা মামলার আসামি হিসেবে সুমনের গ্রেফতারের আইনগত সহয়তা চাইলে আমি তা প্রদান করি। কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে তা আমরা অবগত নয়। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে দামুরহুদা থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তবে একই বক্তব্য ব্যাক্ত করে চুয়াডাঙ্গা জেলাধীন দামুরহুদা মডেল থানার ওসি আঃ খালেক বলেন, চিকনগুনিয়া নিবাসী “মীম হত্যা মামলা” র আসামি সুমন দেবনাথ। তাই তাকে গ্রেফতার করতে আমি চুয়াডাঙ্গা থেকে বরিশাল তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েওতাকে পাইনি। শুনেছি কে বা কারা ওইদিন সন্ধ্যায় সুমনকে তার দোকান থেকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু কারা নিয়েছে তা আমি জানিনা। এদিকে পুলিশের দায়সারা বক্তব্যে বর্তমানে অজানা আতংকে দিন কাটাচ্ছে সুমনের পরিবার। এ বিষয়ে সুমনের স্ত্রী সংগীতা বলেন, আমার স্বামী অপরাধী হলেও তা আমাদের জানতে হবে। এটা আমার অধিকার। আমি আইনগতভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চাই। কান্না জড়িত কন্ঠে সংগীতা আরো বলেন, ৩ বছরের বাচ্চা নিয়ে বর্তমানে আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। এদিকে সংগীতার বক্তব্যে সহমত প্রকাশ করে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট ওবায়দুল হক সাজু বলেন, সুমন যদি অপরাধী হয়েও থাকে তাহলে তার পরিবারকে জানানো উচিত। এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এর ব্যত্যয় হলে ভুক্তভোগীরা আদালতের দারস্থ হতে পারেন। এ বিষয়ে সুমনের পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ সুমনের অবস্থান অবগত হওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।