Uncategorized

নাম সর্বস্ব পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রদান করা হবে না – তথ্যমন্ত্রী

  প্রতিনিধি ২১ জানুয়ারি ২০২১ , ১:৪১:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক ‍॥ দেশে অনেক পত্রিকা আছে নিয়মিত বের হয় না। যেদিন ক্রোড়পত্র বা বিজ্ঞাপন পায়, সেদিন বের হয়। অথচ এগুলো ‘দৈনিক’ পত্রিকা হিসেবে নিবন্ধিত। এই পত্রিকাগুলোর উপস্থিতির ফলে যে পত্রিকাগুলো নিয়মিত বের হয় তাদের স্বার্থের হানী হয়। অনিয়মিত বের হওয়া পত্রিকাতো দৈনিক পত্রিকা হতে পারে না। এটি নিয়ে আমি উদ্যোগ নিয়েছি, এজন্য অনেকেই আমার ওপর অসস্তুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে এ বিষয়ে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
সম্পাদাক ফোরামের পক্ষ থেকে এই দাবি ওঠায় এখন তা বাস্তবায়ন করা ‘সহজ হবে’ বলে মত দেন তথ্যমন্ত্রী।

বৈঠকের শুরুতে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের পক্ষে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে বক্তব্য দেন ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ও সংগঠনের উপদেষ্টা এবং সাবেক তথ্য উপদেষ্ঠা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

‘বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম’ গঠনকে স্বাগত জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রচার সংখ্যার দিক দিয়ে মাঝারি যে পত্রিকাগুলো, সেগুলোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, সেসব পত্রিকার সম্পাদকদের নিয়ে এই ফোরাম। এখানে উচ্চ প্রচার সংখ্যারও অনেক সম্পাদক এই কমিটিতে আছেন।

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ছাপানো সংবাদপত্রগুলো তাদের নথিপত্রে প্রচার সংখ্যার যে খতিয়ান দেয়, তার সঙ্গে ‘বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না’

তিনি বলছেন, সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপণে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) তদন্ত ছাড়াও সরকারি অন্যান্য সংস্থাকে নিয়ে তদন্ত করানো হবে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন যাওয়ার একটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হত, আমি অনেকটা সেটি কমাতে সক্ষম হয়েছি। আপনাদের দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে এটিকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা নিয়ে, যে প্রচার সংখ্যা আছে, যেভাবে লিপিবদ্ধ আছে, এটার সাথে বাস্তবতার আসলে মিল খুব কম। ডিএফপির তদন্তের বাইরেও সরকারি তদন্ত সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানোর কাজ হাতে নিয়েছি। ডিএফপির তালিকাভুক্ত প্রথম ১০০টি পত্রিকা প্রথম তদন্ত করা হবে, এরপর বাকি ১০০ করে, এভাবে তদন্ত করা হবে। এরপর বোঝা যাবে আসলে প্রচার সংখ্যা কত।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গতবছর ছাপনো পত্রিকাগুলোর প্রচার সংখ্যা তলানীতে নেমে যায়, বেশ কয়েকটি পত্রিকা ছাপানো বন্ধও রাখা হয়। এরপরেও অনেক পত্রিকা তাদের প্রচার সংখ্যা বেশি দেখাতে চাচ্ছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, করোনাকালে দুয়েকটি নতুন পত্রিকা বাদে সব পত্রিকার প্রচার সংখ্যা কমেছে। কিন্তু আমার কাছে দরখাস্ত আসে এই করোনাকালেও প্রচার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য, যেটি বাস্তবাতার সাথে আসলে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

সরকারের সমস্ত ক্রোড়পত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে হাছান বলেন, সরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও পদক্ষেপ নেবেন তিনি।

সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল বিজ্ঞাপন প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে পাওয়া উচিত বলে মত দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে, আমরাও তাগিদপত্র দিয়েছিলাম, আমরা আবারও এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করব।

সম্পাদক হতে হলে পূর্ণকালীন সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও ন্যূনতম স্নাতক পাসের সনদ থাকার নিয়ম করার দাবি তথ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম। তথ্যমন্ত্রী তাদের দুটি দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করলেও একটিতে দ্বিমত করেন।

তিনি বলেন, ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক হতেই হবে, সেটির সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ বাংলাদেশে বহু মানুষ আছে যারা মেট্রিক পাস কিন্তু এমএ পাস বা পিএইচডি ডিগ্রিধারীর চেয়েও ভালো লেখে এবং তাদের সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা আছে। রবি ঠাকুর তো মেট্রিক পাস করেননি, কাজী নজরুলও করেননি, বিল গেটসকে কিন্তু বিশ্ববিদ্যলয় থেকে পর পর ফেল করায় বের করে দেওয়া হয়েছিল।
আমাদের দেশেও এ ধরনের বহু সাংবাদিক আছেন, বহু লেখক আছেন যাদের বড় ডিগ্রি নেই কিংবা স্নাতক ডিগ্রি নেই। এজন্য ডিগ্রি পাস হতেই হবে সেটি বলে এখানে বার দিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।

সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়েও নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই সেটাও একটি বিবেচ্য বিষয়। কারণ শুধুমাত্র প্রচার সংখ্যা নয়, তারা ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করছে কিনা সেটিও বিবেচ্য বিষয়।

ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রেও কিন্তু নানা ধরনের ঘাপলা আছে, সেটা আমি খোলাসা করে বলতে চাই না। সেই ঘাপলা কি আছে এখানে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা জানেন।

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে নবম ওয়েজবোর্ড কোনো পত্রিকা বাস্তবায়ন করেনি। অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনেকে বাস্তবায়ন করেছে। সেখানে সঠিকভাবে কতটি পত্রিকা বাস্তবায়ন করেছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। তবে পত্রিকার প্রচার সংখ্যার সাথে সাথে পত্রিকাগুলোকে আপগ্রেড করার ক্ষেত্রে, বিজ্ঞাপন পাওয়ার ক্ষেত্রে ওয়েজবোর্ড অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকারের সঙ্গে এই বৈঠকে অংশ নেন- বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রতন এবং সদস্য সচিব ফারুক আহমেদ তালুকদার, উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ খবরের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূইয়া, ভোরের ডাক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, বাংলাদেশ পোস্টের সম্পাদক শরিফ সাহাবুদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক ও আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, সদস্য ও দৈনিক জনতার সম্পাদক আহসান উল্লাহ, ডেইলি ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক ড. এনায়েত করিম, খোলা কাগজের সম্পাদক আহসান হাবীব, মানবকণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দুলাল আহমেদ চৌধুরী, সংবাদ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রিমন মাহফুজ, শেয়ারবিজ সম্পাদক মীর মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশের আলো সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু, বাংলাদেশ বুলেটিন সম্পাদক আশরাফ আলী, ডেইলি সিটিজেন টাইমস সম্পাদক নাজমুল আলম তৌফিক, প্রতিদিনের সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এসএম মাহবুবুর রহমান, বরিশাল থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত আঞ্চলিক দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের সদস্য কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল প্রমুখ

বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের দাবিনামার মধ্যে রয়েছে-
১. সরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণ/সংখ্যা বাড়াতে হবে। ই-টেন্ডারিং এর পূর্না১⁄২ বিজ্ঞাপন সহ অন্যান্য সকল সরকারি বিজ্ঞাপন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে দুটি এবং জাতীয় পর্যায়ে ৬টি বাংলা দৈনিক ও ২টি ইংরেজি দৈনিক এ প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. নাম সর্বস্থ ও অনিয়মিত প্রকাশিত পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র প্রদান বন্ধ করতে হবে। তাদের মিডিয়া তালিকা ভুক্তি বাতিল করতে হবে।
৩. সব সরকারি ক্রোড়পত্র ডিএফপির মিডিয়া অনুসারে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত যেসব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ঢাকার দুই সংবাদপত্র হকার্স সমিতিতে বিতরণ ও বিকক্রির জন্য দেওয়া হয় সেগুলোর বাইরের পত্রিকায় সরকারের বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র প্রদান বন্ধ করতে হবে।
৪. বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ক্রোড়পত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বণ্টনের সাম্পধতিক সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এর বণ্টন বিষয়ে একটি ন্যায় ও নীতি ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বণ্টন করতে হবে এবং প্রতিটি ক্রোড়পত্র অন্তত ৫০টি পত্রিকায় প্রদান করতে হবে।
৫. সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা নির্ধারণে বর্তমান বব্যস্থাকে সংশোধন করে একটি সুষ্ঠু নীতিমালা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে এবং একটি কমিটির তদারকির মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই কমিটিতে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের একজন প্রতিনিধিকে যুক্ত করতে হবে।
৬. সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল, বিজ্ঞাপন প্রকাশের তিন মাসের মধ্যে পরিশোধের বব্যস্থা করতে হবে। ৭. দীর্ঘ দিনের বকেয়া বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধের জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।
৮. বিজ্ঞাপন ব্যবস্থপনা বিকেন্দধীকরণের বর্তমান ব্যবস্থা সংশোধন করে সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টনের সুষ্ঠু নীতিমালার আলোকে বিজ্ঞাপন বিতরণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৯. তথ্য মন্ত্রণালয় সংবাদপত্র বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন ̈ যখন কোনো কমিটি গঠন করবে সেখানে সম্পাদক ফোরামের প্রতিনিধি অর্ন্তভূক্ত করতে হবে। ১০. সম্পাদকের শিক্ষাগত যোগ্যতা (ন্যূনতম স্নাতক) ও ১৫ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার সনদ যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের পরেই পত্রিকার ডিকারেশন দিতে হবে। পত্রিকার সম্পাদক/ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে অবশ্যই পূর্ণকালীন সাংবাদিক হতে হবে। পত্রিকার প্রকৃত সার্কুলেশন যাচাই করে মিডিয়া তালিকাভুক্ত করতে হবে

আরও খবর

Sponsered content