Uncategorized

ব্যথা ছাড়া কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই

  প্রতিনিধি ২৯ জানুয়ারি ২০২১ , ৮:০৩:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

শুধু টিকা দেওয়ার স্থানে সামান্য ব্যথা আছে-বিএসএমএমইউ উপাচার্য * কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি- অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা * যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের আপাতত টিকা না নেওয়াই ভালো- অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান

দেশে এ পর্যন্ত ৫৬৭ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে। এরপর কয়েকজনের ৩ দিন এবং বাকিদের দুদিন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে কারও মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তারা বলেন, টিকার স্থানে সামান্য ব্যথা ছাড়া আর কোনো সমস্যা তারা অনুভব করছেন না।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত এই টিকা পৃথিবীর ৫৪তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশে দেওয়া শুরু হয় গত ২৭ জানুয়ারি। ওই দিন মোট ২৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়। পরের দিন রাজধানীর আরও ৫টি হাসপাতালে দেওয়া হয় ৫৪১ জনকে। এরপর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগেরই পার হয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু কারও মাঝে তীব্র কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, টিকা নেওয়ার পর থেকে তিনি স্বাভাবিক আছেন। শুধু টিকা দেওয়ার স্থানে সামান্য ব্যথা আছে। সেটিও ওই স্থানে চাপ দিলেই অনুভূত হয়। এছাড়া আর কোনো ধরনের ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া তিনি অনুভব করছেন না। তিনি দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এই টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আশা করছি এতে কোনো সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না।

গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম যে ৫ জন প্রধানমন্ত্রীর সামনে টিকা দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক যুগান্তরকে বলেন, এ পর্যন্ত তার কোনো সমস্যা হয়নি। এমনকি টিকার স্থানে ব্যথাও হয়নি। শুধুমাত্র যখন ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিল তখন সামান্য ব্যথা লেগেছে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত জ্বর, শরীর ব্যথা বা কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।

গত ২৮ জনুয়ারি টিকা নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, তীব্র বা মাঝারি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমি অনুভব করিনি। বিশেষ করে টিকার স্থান ফুলে ওঠা, জ্বর জ্বর বোধ করা, শরীর ব্যথা বা বমিভাব, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই হয়নি। তবে টিকা দেওয়ার স্থানে সামান্য ব্যথা ছিল। এ কারণে রাতে তিনি একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খান। তারপর সেই ব্যথাও নেই।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, সেটি ডাস্ট্র বা ক্লোড বা কোল্ড অ্যালার্জিও হতে পারে। আপাতত এদের টিকাদান থেকে দূরে রাখতে হবে। এতে সামান্য কিছু মানুষ সাময়িকভাবে বঞ্চিত হবে। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু থাকবে না।

একই ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, সুঁই ঢোকানোর সময় মৃদু ব্যথা অনুভূত হয়। এছাড়া তার আর কোনো সমস্যা হয়নি। টিকা নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তিনি দাপ্তরিক কাজ করেছেন। এছাড়া শুক্রবার পরিবার নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো দূরের কথা, তিনি কিছুই অনুভব করছেন না।

বাংলাদেশে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে সেটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত। এটিকে অ্যাডেনো ভাইরাস ভ্যাকসিনও বলা হয়। এই ভ্যাকসিনের আরেক নাম এজেডডি-১২২২ (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকা ভ্যাকসিন)। সেরাম ইনস্টিটিউটের নাম দিয়েছে এজেডডি-১২২২-কোভিশিল্ড। যেসব উপাদান দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে- এল-হিস্টিডিন, এল-হিস্টিডিন হাইড্রোক্লোরাইড মনোহাইড্রেড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড হেক্সাহাইড্রেড, পলিসরবেড ৮০, ইথানল, সুক্রোজ, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ইডিটিএ এবং পানি।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যবেক্ষণে এটা শতকরা ৬২ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে কার্যকরী। ব্রিটেন, ভারত, মেক্সিকো এবং আরও কয়েকটি দেশে জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ট্রায়ালের ফলাফলের ভিত্তিতে এ পর্যায়ে শুধু ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের সুস্থ নারী-পুরুষ গ্রহণ করতে পারবেন।

তবে যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা এটি নিতে পারবে না। যারা ক্যান্সার জাতীয় দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত এবং যারা স্টেরয়েড ব্যবহার করছেন তারাও নিতে পারবেন না। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই টিকা ব্যবহার করা যাবে না। এই টিকা দুই ডোজ নিতে হবে। শূন্য দশমিক ৫ মিলি পরিমাণ প্রতিডোজ। প্রথম ডোজের ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর ২য় ডোজ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা রোধে যেহেতু এই টিকা শতভাগ নিরাপত্তা দেবে না। তাই স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে।

আরও খবর

Sponsered content