প্রতিনিধি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৭:৪৭:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
যানবাহনে ব্যবহৃত এ জ্বালানির দাম কেন বরিশালে সবচেয়ে বেশি তার কোনো সঠিক উত্তর নেই এখানকার এলপিজি স্টেশনগুলোর মালিকদের কাছে। শুধু এলপিজিই নয়, যানবাহনে ব্যবহৃত অকটেন, পেট্রোল আর ডিজেলের দামও দেশের অন্য স্থানের তুলনায় বরিশালে বেশি। ভোক্তাদের অভিযোগ, ফিলিং স্টেশনের মালিকদের গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের অগাধ ক্ষমতার কারণে এ পরিস্থিতি হয়েছে। সব ধরনের জ্বালানি তেলে লিটারপ্রতি গড়ে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম নিয়ে তারা লুটে নিচ্ছে জনগণের শত শত কোটি টাকা। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দার বলেন, বিষয়টি আমারও নজরে এসেছে। অচিরেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এমনিতেই বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় নেই সিএনজির কোনো ব্যবস্থা। জ্বালানি তেলের ব্যয় সাশ্রয়ে তাই যানবাহন মালিকরা ঝুঁকতে শুরু করেছে এলপিজির দিকে।
দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠতে শুরু করেছে বহু এলপিজি স্টেশন। বরিশাল নগরেই বর্তমানে এলপিজি স্টেশনের সংখ্যা ৪। আরও বেশ কয়েকটি ফিলিং স্টেশনে চলছে এলপিজি সংযোজনের কাজ। বিভাগের অন্য জেলাগুলোতেও একের পর এক গড়ে উঠছে এলপিজি স্টেশন। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫টি যানবাহনে এলপিজি ব্যবহারের পদ্ধতি সংযোজন করছেন মালিকরা। আর এসব কিছুই করা হচ্ছে গ্যাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত বরিশালে যানবাহনের জ্বালানি ব্যয় প্রশ্নে খানিকটা হলেও সাশ্রয়ের আশায়। কিন্তু বেশি লাভের টার্গেটে এখানে চড়া দামে এলপিজি বিক্রি করছেন মালিকরা।
দেশে এলপিজি সরবরাহ প্রশ্নে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এলপিজির মোংলা প্ল্যান্টের সেলস বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সারা দেশে একই দামে আমরা এলপিজি সরবরাহ করি। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে দর নির্ধারণের পরও লিটার প্রতি এ মূল্য ৪২ থেকে ৪৩ টাকার বেশি পড়ে না। এ দরের ওপর আবার কমিশন পান ডিলাররা।
অর্ডার করার পর আমরা আমাদের নিজস্ব পরিবহণের মাধ্যমে এ এলপিজি পৌঁছে দেই সংশ্লিষ্ট ডিলারের পাম্পে। অর্থাৎ তার কোনো পরিবহণ খরচও লাগে না। রেট নির্ধারণ করা আছে লিটার প্রতি ৪৫ টাকা। এ রেটে এলপিজি বিক্রি করলে লিটার প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা লাভ থাকে ফিলিং স্টেশনের মালিকদের। এখানে ৪৮ টাকা লিটার দরে এলপিজি বিক্রি করা হয়।
শুধু এলপিজিই নয়, যানবাহনের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত অকটেন, পেট্রোল এবং ডিজেল প্রশ্নেও বরিশালের পাম্প মালিকরা অন্য যে কোনো জেলার চেয়ে বেশি রাখেন দাম। বরিশালের পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুরে যথাক্রম ৬৪, ৮৫ এবং ৮৯ টাকা দরে বিক্রি হয় প্রতি লিটার ডিজেল, পেট্রোল এবং অকটেন। সেখানে বরিশালের ফিলিং স্টেশনগুলোতে প্রতি লিটার ডিজেল, পেট্রোল এবং অকটেন বিক্রি হয় যথাক্রমে ৬৫ টাকা ১৫ পয়সা, ৮৬ টাকা ১৫ পয়সা এবং ৯০ টাকা ১৫ পয়সা।
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে ফরিদপুরের চেয়েও কম দামে বিক্রি হয় যানবাহনে ব্যবহৃত এসব জ্বালানি। ভাড়ার গাড়ি নিয়ে বরিশাল থেকে সারা দেশে ঘুরে বেড়ানো ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজারে এলপিজির সাপ্লাই যায় চট্টগ্রাম থেকে। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছায় এলপিজি। সেখানেও প্রতি লিটার এলপিজির দাম ৪৫ টাকা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওয়ালী মোহাম্মদ খান বলেন, পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেন আমরা সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি করি। এখানে কোনো অতিরিক্ত মূল্য নেয়া হয়নি। বরিশালে এলপিজির বিক্রি খুবই কম। ৫০ লাখ ১ কোটি টাকা খরচ করে একটি এলপিজি স্টেশন করার পর যদি খরচই না ওঠে তাহলে স্টেশন চালিয়ে রাখব কিভাবে?
যে কারণে বাধ্য হয়ে দাম কিছুটা বাড়িয়ে রাখতে হয়। বরিশাল মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের কথা বলে আসলে আমাদের ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। ২০-৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অন্য জেলায় গেলেই দেখি বরিশালের তুলনায় এলপিজিসহ জ্বালানি তেলের দাম অনেক কম।
অথচ বরিশালে যুগ যুগ ধরে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, একটা সময় ছিল যখন সড়ক ও নৌ যোগাযোগ প্রশ্নে বরিশাল ছিল বিচ্ছিন্ন এলাকা। তখন দুর্গম হিসাবে এখানে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ প্রশ্নে ফিলিং স্টেশনগুলোর প্রতি খানিকটা বেশি সদয় ছিল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এখন তো সেই পরিস্থিতি নেই। বরিশাল নগরেই রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির তেলের ডিপো। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, কিছুদিন হলো বরিশালে এসেছি। আসার পরপরই এ বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে বসব। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সূত্র :- যুগান্তর