প্রতিনিধি ৭ এপ্রিল ২০২১ , ৩:৪৪:০০ প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুয়াকাটায় ইউ এন ও কর্তৃক গণমাধ্যম কর্মীকে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, ইউটিউব ও নিউজ পোর্টালে তোলপাড় চলছে। যাচাই করা হচ্ছে সত্য মিথ্যার গণমাধ্যম কর্মী কে কে। কলাপাড়া উপজেলার বেশ কিছু গণমাধ্যকর্মী ইউ এন ও’র পক্ষ নিয়ে বাস্তব ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যা জনসাধারণের মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত ৫ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের পুলিশ বক্সের সামনে মাস্ক না পড়ার অপরাধে স্থানীয় সাংবাদিক ইলিয়াসকে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক ও ট্যুরিষ্ট পুলিশ বেধরক মারধর করে।
প্রত্যক্ষদর্শী জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার কুয়াকাটা প্রতিনিধি ও কুয়াকাটা প্রেসকাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন আনু জানিয়েছেন, মাস্ক না থাকার অপরাধে যে ভাবে চারজন পুলিশে দুহাত ধরে রেখেছে আর একজন পুলিশ ও ইউ এন ও ওই স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ইলিয়াস শেখকে বেধরক লাঠি পেটা করে যা একে বারেই অমানবিক। গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ইউ এন ও যে ভাবে মারমুখী অবস্থায় ছিলো এবং অশ্লীল আচারণ করছে, তাতে তার কাছে যেতে তিনি সাহস করেননি।
ঘটনাটি মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়লে জাতীয় দৈনিক স্বাধীন সংবাদ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি ও মহিপুর প্রেসকাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ হাবিবুল্লাহ খান রাব্বী, দৈনিক আজকের তালাশ ও জাতীয় দৈনিক নবকন্ঠ পত্রিকার রির্পোটার শামীম ওসমান হীরা, দৈনিক দক্ষিনের কাগজ পত্রিকা ও আমাদের কুয়াকাটা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রুমি শরীফ সরেজমিনে গেলে দুজন ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক ইলিয়াসকে ধ্রীত অবস্থায় দেখতে পায়। পার্শ্বেই ইউ এন ও দাড়ানো ছিলো। শামীম ওসমান ইউ এন ও’র কাছে জানতে চাইলে ইউ এন ও বলেন, ভূয়া সাংবাদিক ওর সুপারিশে কেউ এখানে আসতে পারবেনা। তখন শামীম তার আজকের তালাশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার পরিচয় দিতেই কার্ড দেখতে চায়, শামীম পকেট থেকে কার্ড বেড় করতে না করতেই হাতের উপর ইউ এন ও থাবা দিয়ে কার্ড নেয়ার চেষ্টা করে। ইউ এন ও’র ভূমিকা ছিলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মতো।
করো কোনো কথাই শুনতে চায়নি ইউ এন ও । পরবর্তীতে সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ খান রাব্বী প্রশ্ন করেন ইউ এন ও’কে মাস্ক না থাকার অপরাধে মারধরের বিষয়টি আইনত কিনা? প্রশ্নে কোনো উত্তর না দিয়ে হুট হাট ঘোরাঘুরি করছে চৌরাস্তায়। ইলিয়াস কুয়াকাটার স্থানীয় বিধায় বেধরক মারধরের ঘটনাটি সহজভাবে স্থানীয়রা মেনে নিতে না পেরে সকলেই দলবদ্ধ হয়ে চড়াও হয় ইউ এনও’র দিকে। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গরা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চালায়। সাধারণ জনগনের তোপের মুখে পরে ইউ এন ও ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। ঘন্টা খানেক পরে মহিপুর থানা পুলিশ আসে এবং মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামান হ্যান্ড মাইকে ঘোষনা করেন, ইউ এন ও এবং সাংবাদিকদের মধ্যে মিসবিহ্যাব হয়েছে এটা তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হবে। আপনারা সকলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে যার যার বাসায় চলে যাওয়ার আহবান জানান।
এভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন হয়। কিন্তু ইউ এন ও কর্তৃক সুবিধাবাদী কিছু সংখ্যক গণমাধ্যমকর্মী সত্য ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে একতরফা ইউ এন ও’র পক্ষে রিপোর্ট করায় জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফলে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা মাটির গর্ভে বিলিন হতে চলছে। অপর দিকে নির্যাতিত সাংবাদিক ইলিয়াস শেখ অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন তাকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে বসতে বাধ্য করেন শালিস বৈঠকে। এ সময় মিমাংসার কথা বলে রাখা হয় মুচলেকা। পরে জানতে পারেন, তার বিরুদ্ধে মহিপুর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করা হয়েছে। এতে ইলিয়াসসহ তার পরিবার পুলিশি হয়রানীর ভীতির মধ্যে রয়েছেন।
বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ওই রাতেই সংবাদ কর্মীকে মারধরের ঘটনা ছিলো অনাকাঙ্খিত। এ জন্য অনুতপ্ত বলে জানালেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক। সোমবার গভীর রাতে কুয়াকাটার চৌ-রাস্তা পুলিশ বক্সে শালিস বৈঠকে ঘটনা মিমাংসার পর তিনি অনুতপ্ত বলে জানান। এ সময় বৈঠকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো: হুমায়ুন কবির. কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক. কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী, কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো: আনোয়ার হাওলাদারসহ স্থানীয় গন্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন. মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশসন ও স্থানীয়দের মাঝে সৃষ্ঠ ঘটনার মিমাংসা হয়েছে। এনিয়ে আর কোন ঝামেলার সূযোগ নেই। কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী জানান. ঘটনার পর সাংবাদিক ইলিয়াস শেখ ও ইউএনও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সম্মুখে এ ঘটনার বর্ননা দিয়েছেন। পরে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে উভয় পই সৌহার্দপূর্ন পরিবেশে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে।