প্রতিনিধি ২৬ জুলাই ২০২১ , ২:৫৭:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মজিবর রহমান নাহিদ ॥ করোনার সংক্রমণ রোধে শুরু হওয়া ১৪ দিনের বিধিনিষেধ উপক্ষো করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কীর্তনখোলা নদীর পারাপার করছেন শত শত মানুষ। আর করোনাকে পুঁজি করে অধিক মুনফা লাভের আশায় এই কাজে সহযোগীতা করছেন এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী মানুষ। সরেজমিনে গতকাল বরিশাল শহরতলীয় বেলতলা ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কঠোর বিধিনিষেধের কারনে সরকারের নির্দেশনা মেনে ঘাটে খেয়া পারাপার বন্ধ রাখে ঘাট ইজারাদার।
এতে সকাল থেকেই সাধারন মানুষের উপচে পড়া ভীড় দেখা যায় বেলতলা খেয়াঘাটের দুই পাড়ে। তবে ঘাটের ট্রলার বন্ধের সুযোগে সকাল থেকেই ছোট্ট ছোট্ট মাছ ধরার নৌকা দিয়ে যাত্রীদের পারাপার শুরু করেন এক শ্রেণির অসাধু মানুষ। আর এতে নেতৃত্ব দেয় গীলাতলির স্বঘোসিত নেতা মাসুম বিল্লাহ ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক সুমন। তাদের সহযোগীতায় ঘাটের খেয়া বন্ধের সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়ার বিনিময়ে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে যাত্রীদের পারাপার করানো হয়।
আর পারাপারে প্রতি যাত্রীকে গুনতে হয় ৫০ থে ২শ’ টাকা পর্যন্ত। হালিমা খাতুন নামে এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন,‘ডাক্তার দেখাতে আমার জরুরীভাবে শহরে আশার প্রয়োজন ছিলো। এসে দেখি ঘাটে খেয়া পারাপার বন্ধ রয়েছে। গিলাতলী থেকেতো আর দপদপিয়া ব্রিজ ঘুরে শহরে যাওয়া সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে মাছের ট্রলারে ১২০ টাকা ভাড়া দিয়ে নদী পার হয়েছি।’ আরিফ উদ্দিন নামে আরেক যাত্রী বলেন,‘আমার অফিস খোলা, খেয়াঘাট এসে দেখি খেয়া বন্ধ, ছোট ছোট নৌকায় যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।
পরে ১৫০টাকা ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সেই ছোট নৌকায় বেলতলা ঘাটে এসেছি।’ এব্যাপারে মাসুম বিল্লাহ নামে ওই ব্যক্তির মুঠোফোন রিং দেওয়া হলে তিনি আজকের তালাশকে বলেন, ‘গ্যাঞ্জাম দেখে আমি ঘাটে গেছিলাম, আমি পীর সাহেব হুজুরের পরিবারের লোক, তার চাচতো ভাই। সে হিসেবে এলাকায় কোন গ্যাঞ্জাম হলে আমি সমাধান করি। আমি এমনিতেই ওখানে ছিলাম, খেয়া পারাপারে সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই। আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ দিছে তারা পাগল।’ শুরু থেকেই আপনার সেখানের সকল কাজের ভিডিও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আছে, আপনি কিভাবে সেটা অস্বিকার করবেন এমন প্রশ্নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা দাবীদার মাসুম বিল্লাহ বলেন,‘ ‘ঘাটে অনেক লোকই ছিলো শুধু আমি না, এখন শুধু আমারে ভিডিও কইরা কোন লাভ হবে?’
বেলতলা এলাকার স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন,‘করোনার মহামারীর মধ্যে ঘাট বন্ধ থাকলেও ওপারের মাসুম বিল্লাহ, সুমন সহ কয়েকজনের সহযোগীতায় ছোট ছোট নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করা হয়। এতে একদিকে ছিলো করোনার সংক্রম বাড়ার আশঙ্কা অন্যদিকে ছিলো জীবনের ঝুঁকি। কিন্তু এবারও কোষ্টগার্ড ঘাটে এসে কোন ব্যবস্থা নেয় নি।’ অন্যদিকে অসুস্থ ও জরুরী প্রয়োজনের যাত্রীদের দূর্ভোগ দেখে দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে বেলতলা খেয়া পারাপারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইজারাদার জানান,‘লকডাউনে বেলতলা ঘাট বন্ধ ঘোষণা করার এমনিতেই আমরা ইজারাদারা অনেক লোকসানের মুখে আছি। তারপরও আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমে পারাপার বন্ধ রাখি। কিন্তু এক শ্রেণির লোক অধিক মুনফা লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার করায়। পরে প্রশাসনের নির্দেশে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে অসুস্থ যাত্রীদের পারাপার করাই।’ উল্লেখ্য, গত ৪ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে বেলতলা সংলগ্ন এ নদীতে ছোট একটি নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পারাপারের সময় সেটি ডুবে যায়।
স্থানীয়রা জানান, কাঠের তৈরি ছোট ওই ট্রলারটি ১২ জন লোক নিয়ে চরমোনাই খেয়াঘাট থেকে বরিশালের বেলতলা খেয়াঘাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথে বেলতলা মাঝ নদীতে সেটি ডুবে যায়। ঘটনার সময় বেলতলা খেয়াঘাটে দায়িত্ব পালন করা কাউনিয়া থানা পুলিশ সদস্যরা ডুবে যাওয়া ট্রলারের ১২ যাত্রীকে উদ্ধার করেন।