প্রতিনিধি ৩০ জুলাই ২০২১ , ১২:৫১:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ করোনার সংক্রমন রোধে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। আর এই বিধিনিষেধের মধ্যেই প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবার মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৮ জুলাই রাতে নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নব-নির্বাচিত ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. সাইফুল আকন দলবল নিয়ে খেজুরতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় লোহার রড, হাতুড়ি ও লাঠিসোটা দিয়ে মিথুনের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর জখম করেন। হামলার একপর্যায় মেম্বার সাইফুল আকন তার বুকের ওপর উঠে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যার চেষ্টা চালান।
এ ঘটনায় মিথুন বাদি হয়ে গত ২০ জুলাই মেম্বার সাইফুল আকনসহ ১৩ জনকে আসামি করে নলছিটি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সংবাদকর্মী নির্যাতনের পরপই নিজকে বাঁচাতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন মেম্বার সাইফুল। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ৬নং ওয়ার্ডবাসীর ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় শতাধিক বিভিন্ন বয়সী মানুষ, যাদের মধ্যে সিংহভাগ মানুষের মুখেই ছিলোনা মাক্স। এছাড়া ছিলোনা কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি। এই মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন দুধারিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মোল্লা।
অবশ্য তিনি তার বক্তব্যে জানান, মামলা প্রত্যাহার না করা হলে বড় ধরনের আন্দোলনের আল্টিমেটাম দিবেন। স্বাস্থবিধি উপেক্ষা করে মানবন্ধনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,‘আমি মেয়রের বাসায় আছি, পরে কথা বলেন।’ পরে অবশ্য ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। মানবন্ধনে অংশ নেয় আরও দুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শেখেরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জসিম উদ্দিন মৃধার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,‘আমি একটি শালিসীতে আছি, পরে কথা বলবো।’ উত্তর জুরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলম হাওলাদার প্রথমে অবশ্য মানববন্ধনের কথা শিকার না করলেও পরে বলেন,‘আসলে গাঁও-গ্রামে বিধিনিষেধ বলতে কিছু নাই, অনেক মানুষ চলাচল করে।
আর এতে তেমন কোন সমস্যা হয় নাই।’ অন্যদিকে কয়েকজন সমর্থক ফেইসবুক আইডিতে দুটি গণমাধ্যমের আইডি কার্ডের ছবি আপলোড দিয়ে সাইফুলকে সাংবাদিক হিসেবে দাবী করেন। সাইফুল ওই কার্ডের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে আপলোড হওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ। স্থানীয় একাধিক সংবাদকর্মী দৈনিক আজকের তালাশকে জানান, ‘সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, একজন সংবাদকর্মীর উপর নির্মম নির্যাতনের পর নিজেকে বাঁচাতে সাইফুল সাংবাদিকতার তকমা লাগিয়েছে। যা সত্যি খুবই দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনার তিব্র নিন্দা জানাই ও সাইফুলকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাই।’
এদিকে ফেইসবুকে আপলোড দেওয়া ওই দুই কার্ডের একটি হলো ভূইফোড় অনলাইন পত্রিকা নিউজ বাংলাদেশ ২৪। আরেকটি বরিশালের স্থানীয় একটি দৈনিকের। তবে সেটির সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায়, এই নামের কোন কার্ড তিনি দেয় নি। অন্যদিকে নলছিটিতে সাংবাদিক অহিদুল ইসলাম মিথুনের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। সাংবাদিক অহিদুল ইসলাম মিথুন আঞ্চলিক দৈনিক দখিনের সময় পত্রিকার নলছিটি উপজেলা প্রতিনিধি। গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিজয় উল্লাস-৭১ চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে সাংবাদিকেরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক বিন-ই আমিন, কামাল হাসান, গোলাম মাওলা শান্ত, আমির হোসেন, হাসান আলম সুমন, সাইদুল কবির রানা, কায়কোবাদ তুফান, সাইদুল ইসলাম, এস.আর সোহেল প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাংবাদিক মিথুনের ওপর হামলাকারী এজাহারভুক্ত আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা নানাভাবে তাকে হুমকি দিচ্ছে। এতে সাংবাদিক মিথুনের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের ধরতে ব্যর্থ হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ ব্যাপারে নলছিটি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচ.এম মাহমুদ বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।