প্রতিনিধি ৬ জুন ২০২২ , ১১:২৮:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেলেন বরিশালের কৃতি সন্তান বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি সালমা বেগম। গত ১১ মে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। বরিশাল বিভাগের কোন নারী এই প্রথম বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেলেন। তিনি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৩নং দাড়িয়াল ইউনিয়নের মাহমুদ নাছির গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট কমান্ডার আবদুল করিম খান (অব:) এর একমাত্র কণ্যা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল করিম খানের তিন সন্তানের মধ্যে ডিআইজি সালমা বেগম বড়। তার দুই ভাইয়ের মধ্যে মেঝ ভাই আবদুস সালাম খান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে ট্রাস্ট ব্যাংকে কর্মরত আছেন এবং ছোট ভাই আবদুস সামাদ খান একজন ব্যবসায়ী। ডিআইজি সালমা বেগমকে ১১ মাস বয়সের সময় তার বাবার কর্মস্থলে চট্টগ্রামে নিয়ে যান। সেখানেই শৈশব ও কৈশোর জীবন কাটান তিনি। বাংলাদেশ নৌবাহিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। এরপর ১৮তম বিসিএস এর মাধ্যমে তিনি ১৯৯৯ সালের জানুয়ারী মাসে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন।
জানা গেছে, দীর্ঘ ২৩ বছর চাকুরি জীবনে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, সিআইডি, রাজবাড়ী জেলা, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং এন্টি টেররিজম ইউনিটে দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও সুনামের সাথে করেছেন।
ডিআইজি সালমা বেগম রাজবাড়ী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে তার কর্মদক্ষতা ও জনসম্পৃক্ততার কারণে তিনি অন্যরকম এক পরিচিতি লাভ করেন। রাজবাড়ীবাসীর প্রাণের মানুষ ছিলেন সালমা বেগম। এছাড়া রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে তিনি মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। এছাড়া জাতিংসঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কসোভো ও সুদানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘ ৩ বছর সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সালমা বেগম “বার্ষিক পুলিশ সপ্তাহ প্যারেড” এবং এএসপি প্রবেশনারদের “ শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে” দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত ইংরেজী ও বাংলা ধারাভাষ্য প্রদান করে আসছেন।
বাংলাদেশ পুলিশে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য তিনি “রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক” এ ভূষিত হন। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসনীয় ও উল্লেখযোগ্য অবদানের তিনি ৭ বার “আইজিপি ব্যাজ” অর্জন করেন। যার ধারাবাহিকতায় চলতি বছর ১১ মে ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান তিনি।
পারিবারিক জীবনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম খায়রুল আলম চৌধুরী টুটুল এর সাথে ২০০১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। খায়রুল আলম চৌধুরী টুটুল একজন বিশিষ্ট অভিনেতা (নাটক ও সিনেমা)। তার প্রযোজনায় এবং ডিআইজি সালমা বেগমের তত্ত্বাবধানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র “আগামীকাল” গত ৩ জুন সারাদেশের ৩০টি সিনেমা হলে একযোগে মুক্তি পেয়েছে। বরিশালের অভিরুচি সিনেমা হলে ছবিটি এখন চলছে। এতে তিনি একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাদের একমাত্র সন্তান অন্তরীপ চৌধুরী পার্বণ উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য ডিআইজ সালমা বেগমের মা মহীয়সী নারী পুনুয়ারা বেগম চলতি বছর “বিশ^ মা দিস” এ “রতœগর্ভা মা” পদেক ভূষিত হয়েছেন।
ডিআইজি সালমা বেগম জানান, তিনি সব সময়ই নারীদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কাজ করেন। বিশেষ করে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ও নারী নির্যাতন বন্ধে তিনি সোচ্চার। এছাড়া নারী শিক্ষার ব্যাপারে তিনি কাজ করতে চান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাকরির মাধ্যমেই তিনি বৃহত্তর বরিশালের মানুষের সেবা দেয়ার জন্য কাজ করে যেতে চান।