প্রতিনিধি ২৮ অক্টোবর ২০২২ , ১২:৩৭:০১ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদকঃ ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল। নদী বেষ্টি বরিশাল বিভাগে রূপালী ইলিশ খুবই সুস্বাধু। তাই প্রতি বছর মা ইলিশের প্রজনন মৌশুমে সরকারি ভাবে মা ইলিশ আহরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সরাকারিভাবে ঘোষিত এই ২২ দিনে সারদেশে ইলিশ আহরন, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় দন্ডনিয় অপরাধ। এই আইন কেউ অমান্য করলে তাকে ১ বছর থেকে ২ বছর কারাদন্ড বা ৫ হাজার জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার আইন বলবৎ রয়েছে।
কিন্তু এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মা ইলিশ আহরন, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় চলছে।
এমনি অভিযোগের ভিত্তিতে, অনুসন্ধানে নামে আমাদের আজকের তালাশের অনুসন্ধানী মাধ্যম।
অনুসন্ধানে আমাদের গন্তব্য সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী গ্রামের পাস ঘেসা খোন্নারের চর। যেই চরটি চরবাড়ীয়া ইউনিয়নের খন্ড অংশ ।
আমাদের অনুসন্ধানী মাধ্যমের ৩ সদস্য ক্রেতা সেজে খোন্নারের চরে। চরে প্রবেশ করতেই ৭/৮ বছরের একটি মেয়ে সামনে এসে উপস্থিত । প্রশ্ন, আপনারা কারা? প্রশ্নের জবাব না দেয়ায় ভয়ঙ্কর এক শব্দ। সাথে সাথে উপস্থিত কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা। প্রশ্ন, আপনারা কারা? কোথায় জাবেন? আমরা ইলিশ মাছ কেনার জন্য এসেছিলাম এমন কথায় বললে কার কাছে, আমরা বললাম আমার চাচা এক লোকের কাছে পাঠিয়েছে তিনি ওই টাওয়ারের পাশে। তারা পথ দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো । আমরা টাওয়ারের কাছে পৌছাতে ৪৫/৬০ মিনিট সময় পার করেছি তবে তেমন কোনো লোক দেখিনি।
অনেক সময় পার করার পরে চরের মাঝা মাঝি এসে ঝোপের ভিতরে বসে আমরা অপেক্ষা করছি। এমন সময় কোষ্টগার্ড নৌকা আটক করে । আটকের পরে জেলেদের শব্দে জেগে ওঠে পুরো ক্ষোন্নারের চর। আমাদের দেখা চোখে ৩/৪ শ’ মহিলা, পুরুষ, তরুষ, তরুণীরা হাতে রামদা, দেশিয় পিস্তল, লাঠি, বৈঠা নিয়ে নদীর পারে অবস্থান নেয়। এদের ভিতরে শুধু একটি শব্দ শোনা গেলো, সুযোগ পেলে কোনো পুলিশ যেতে দিবিনা। কেটে উপরে নিয়ে আসবি চরেই দাফন করবি ওদের।
পাঠক এক্টু বিরতি নিতে চাই। এই বিরতিতে বলতে চাই এদের নেটেয়ার্কের কথা।
ডিসি ঘাট থেকে শুরু করে খোন্নারের চর পার হয়ে হুজুর বাড়ী পর্যন্ত ১০০ সোর্স কাজ করে এই অভিযানে। তাদের কাজ শুধু অভিজানিক দলের পদচারনার খবর দেয়া আর এর বিনিময়ে তারা পায় ৩০০ টাকা ফেলাক্সি লোড। এই নেটওয়ার্কের সাথে বেলতলা খেয়ার মাঝিরাও জরিত বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
দর্শক বিরতির পরে আবার ফিরে জেতে চাই সেই খোন্নারের চরে। এক লোমহর্শক রাতের অনুসন্ধানের কথা বলতে। এত সময় পার করার পরে বুঝতে পারলাম এখানে দস্যুতার অবস্থান রয়েছে। মুলতো এই চরটির উত্তর দিক থেকে একটি খাল ঢুকে পশ্চিম দিকে মূল নদীতে মিশে গেছে। আমরা অবস্থান পাল্টে চরের পূর্ব অংশে চলে গেলাম । সেখানে পুরো ২ /৩ কিলোমিটার খালে নৌকা এবং জালের হাট দেখতে পেলাম। যাদের বাচানোর জন্য প্রতি নৌকার পাহারায় ১০/১২ জন লোক। এসব দেখতে দেখতে চলে গেলাম নদীর উত্তর দিকে। সেখানেও ৫০/৬০ জন পুরুষ, মহিলা বসে আছে অভিযানীক দলের উপর হামলা করতে।
দর্শক আপনারা কি ভাবছেন এতক্ষন আমারা কিভাবে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেখলাম? সেটাও জানাবো আপনাদের, আমরা প্রথমেই খেয়াল করেছি তারা কিভাবে ঝোপে বসে থাকে। যেটা আমাদের পথ চলায় সহযোগিতা করেছে। তবে এর ভিতরেই আমাদের অনুসন্ধানী মাধ্যমের এক সদস্যকে রাম দা দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে জেটা তার বাম পায়ের অনেক্টা কেটে জায়। আমরা ঝোপ থেকে দারিয়ে গেলে ১৫/২০ জন দেশিয় অস্ত্র হাতে জলদুস্যুদের মতো একটা প্রশ্ন, কারা তোমরা? আমরা বললাম ইলিশ মাছ কিনতে এসেছি , নৌ পুলিশের আসার খবরে এখানে লুকিয়ে রয়েছি। তারা বললো রাস্তা এদিকে, চলে যা, না হয় কেটে নদীতে ফেলে দেবে। এমন সব পরিস্থিতির ভিতরে জানতে পারলাম ওখানে যারা অবস্থান করছে তাদের ভিতরে বেশিরভাগি অন্য জেলা থেকে আনা হয়েছে। আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্র-ছায়ায় এরা দস্যুতায় রুপ নিয়েছে।
এবিষয়ে সাধারন মানুষের এখন সময়ের দাবি খোন্নারের চরে চিরুনি অভিযান করা, এতে যেমন পাওয়া যাবে লক্ষাধিক অবৈধ কারেন্ট জাল। তেমন বিপুল পরিমানে অবৈধ অস্ত্র ও ফ্রিজ ভরা মা ইলিশ।
নৌ পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কাফিল উদ্দিন বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় কাজ করছে নৌ পুলিশ। নিষেধাজ্ঞার সময়ে সার্বক্ষনিক আমরা মনিটরিং করছি, আইন অমান্য করে যারা নদীতে মাছ ধরছেন তাদের আটক করা হচ্ছে পরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে।