প্রতিনিধি ২৬ জুলাই ২০১৯ , ৪:১৯:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল অফিস :-
বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলালের ওপর সন্ত্রাসী হামলার দায়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খালেদ হোসেন স্বপন সরদারের বহিস্কার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ৭ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত স্বপন সরদারকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা না হলে একযোগে দল থেকে গণপদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা। শুক্রবার সকালে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে কলেজ গেট ও স্টিল ব্রিজ এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। এসময় স্বপনবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। মিছিল শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলালের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা এবং অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক খালেদ হোসেন স্বপন সরদারের বহিস্কারের একদফা দাবিতে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহিনুল ইসলাম সিকদারের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আকতারুজ্জামান মিলন মৃধার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ওই প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ আজাদ, মাধবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন হাওলাদার, দেহেরগতি ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক শাহে আলম সিকদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শাহিনুর রহমান সিকদার, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ করিম লাবু, মাধবপাশা ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম ফিরোজ মোল্লা, চাঁদপাশা ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ ফারুকুল ইসলাম, জুয়েল তালুকদার, হানিফ খান, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আফরোজা হেলেন, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আরিফুর রহমান অপু প্রমুখ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতাকালে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, খালেদ হোসেন স্বপন সরদার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ২০০৯ সালে দলের সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটান। বিগত ২০১৪ সালে তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বাবুগঞ্জে দুর্নীতি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদার হিসেবে পরিচিতি পান। তার দুর্নীতি ও লুটপাটের দোসর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ৫ বছরে কাজ না করেই সরকারি বিভিন্ন তহবিলের কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এনিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়। তিনি হতদরিদ্রদের জন্য শুধু ৪০ দিনের কর্মসূচি থেকে প্রতি ইউনিয়নে ২ লাখ টাকা করে ৬ ইউনিয়নে মোট ১২ লাখ টাকা প্রতিবছর চাঁদা নিতেন। এভাবে প্রতিটি প্রকল্প থেকে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্বপন সরদার। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিফাত জাহান তাপসী গত ২৫ জুলাই বরিশাল জেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে ৭নং ওয়ার্ড (বাবুগঞ্জ) সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সমর্থন পেলেও তাকে প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাইনুল হোসেন পারভেজকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে স্বপন-তাপসী জুটির ৫ বছরের দুঃশাসনের জবাব দেয় আওয়ামী লীগের ভোটাররা। তাছাড়া জেলা পরিষদের ভোটার সব চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিনা অজুতে পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথ করতে বাধ্য করা হয়। এতে সবার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে নির্বাচনে ভরাডুবি হয় রিফাত জাহান তাপসীর। কিš‘ তাপসীর পরাজয়ের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলালকে দায়ী করে ফলাফল ঘোষণার পরপরই তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালান সাধারণ সম্পাদক খালেদ হোসেন স্বপন সরদার। কারণ, তিনি ছিলেন একসময়ের সর্বহারা কামরুল গ্রুপের আঞ্চলিক কমান্ডার এবং র্যাবের ক্রসফায়ারের তালিকাভুক্ত আসামী। তাই তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেও নিজের স্বভাব বদলাতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। এসময় বক্তারা আরো বলেন, সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কান্ডারি এক পরীক্ষিত মুজিব সৈনিক। ছাত্রলীগ থেকে আজ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবন-যৌবন বিসর্জন দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, মিল-কারখানা সব বিক্রি করে সেই অর্থ দলের পেছনে ঢেলেছেন। চরম দুঃসময়ে আওয়ামী লীগকে আগলে রেখে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। অথচ সেই মানুষকে আজ নব্য আওয়ামী লীগ নামধারী সন্ত্রাসী খালেদ হোসেন স্বপন সরদারের হাতে অপমান-অপদস্ত’ হতে হলে সেটা আওয়ামী লীগের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। তাই আগামী ৭ দিনের মধ্যে এর দৃষ্টান্তমূলক বিচারসহ খালেদ হোসেন স্বপন সরদারকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা না হলে সুস্থ স্বাভাবিক কোনো মানুষ আওয়ামী লীগ করবে না। এ ব্যাপারে দক্ষিণবঙ্গের রাজনৈতিক অভিভাবক পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক মন্ত্রী জননেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ কাছে নালিশ জানানো হয়েছে বলে জানান বক্তারা। এসময় খালেদ হোসেন স্বপন সরদারকে দল থেকে বহিস্কার করা না হলে বাবুগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা স্বে”ছায় গণপদত্যাগ করবেন বলে আল্টিমেটাম দেন।