Uncategorized

ধর্ষণ মামলায় নামে মিল থাকায় ২৭ দিন কারাভোগ , অবশেষে জামিনে মুক্তি !

  প্রতিনিধি ২৪ অক্টোবর ২০১৯ , ১:৪১:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

ধর্ষণ মামলায় নামে মিল থাকায় ২৭ দিন কারাভোগ , অবশেষে জামিনে মুক্তি !

 

হাফিজুর রহমান.টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি ॥

টাঙ্গাইলের সখীপুরে একটি ধর্ষণ মামলায় নামে মিল থাকায় বিনাদোষে ২৭ দিন ধরে কারাভোগ করার পর অবেশেষে কলেজছাত্র বাবুল হোসেন নয়ন জামিন পেয়ে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন।

বুধবার দুপুর ১টার দিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সখীপুর-নাগরপুর আমলী আদালতের বিচারক আকরামুল ইসলাম তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। বাবুল হোসেন নয়ন সখীপুর উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে। এদিকে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর নয়ন বলেন, মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য মেয়েটির চাচা আবু তালেব ৭ লাখ টাকা দাবী করেছিলেন।

টাঙ্গাইলের কোর্ট ইন্সপেক্টর তানবীর আহাম্মেদ বলেন, ‘আইনজীবীদের জামিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তার জামিন আবদেন মঞ্জুর করেন। জামিননামা কারাগারে পৌঁছানোর পর নয়ন মুক্তি পান।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেলার আবুল বাশার বলেন, ‘জামিন নামা আমাদের কাছে পৌঁছানোর পর প্রক্রিয়া শেষে বিকাল সাড়ে ৫টায় তিনি মুক্ত হন।

বাবুল হোসেন নয়ন সখীপুরের সরকারি মুজিব কলেজ থেকে চলমান ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার হন নয়ন। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়নি নয়নের।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর সখীপুর উপজেলার পঞ্চম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রী বাসাইলের চাপড়াবিল এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। চারদিন পর টাঙ্গাইল ডিসি লেকের পাশ থেকে পরিবারের লোকজন ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। পরিবারেরে চাপে মেয়েটি নয়ন নামের এক ছেলের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিল বলে জানায়। পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মেয়েটির মা বাদী হয়ে প্রতিবেশী শাহজাহান আলীর ছেলে বাবুল হোসেন নয়নকে আসামী করে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ নয়নকে গ্রেপ্তার করে মেয়েটির মুখোমুখি করলে মেয়েটি গ্রেপ্তার হওয়া বাবুল হোসেন নয়নকেই ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করে। এ সময় নয়ন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওই ছাত্রীকে চিনে না এবং কক্সবাজারে যায়নি বলে জোর দাবি করতে থাকে। মেয়েটির অনড় অবস্থানের কারণে নয়নকে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত পুলিশকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সখীপুর থানার এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, জেলগেটে জিজ্ঞাবাদের সময়ও নয়ন বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করছিল। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় অধিকতর গুরুত্বসহকারে তদন্ত শুরু করি। মেয়েটির কাছ থেকে পাওয়া কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ডের সূত্র ধরে চলে তদন্ত। পরে ওই হোটেলে দেওয়া মোবাইল নম্বর ও সিসি টিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে মামলার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৭ অক্টোবর ঘটনার আসল হোতা নয়ন মিয়াকে বাসাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে বাসাইল উপজেলার বাঘিল গ্রামের ফারুক ওরফে নূহু মিয়ার ছেলে। পরে গ্রেপ্তার হওয়া নয়ন মিয়া ওই ছাত্রীকে কক্সবাজারের একটি হোটেলে রেখে ধর্ষণ করেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে পরেই বের হয়ে আসে আসল ঘটনা।

এদিকে নামের ভুলে বিনা দোষে গ্রেপ্তার ও কারাভোগের কারণে নয়নের এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বাবুল হোসেন নয়নের বাবা শাহজাহান আলী বলেন, আমার নির্দোষ ছেলেটা জেল খেটেছে। মিথ্যা মামলার কারণে এবার পরীক্ষাটাও দিতে পারলো না। যাদের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তাদের বিচার চাই।

কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাবুল হোসেন নয়ন বলেন, বিনা দোষে ওরা আমাকে শাস্তি দিয়েছে। আমার জীবন থেকে এক বছর কেড়ে নিয়েছে। ওদের পরিবার পরিকল্পিতভাবে আমাকে বিপদে ফেলেছে। আমাকে যখন পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে তখন মেয়েটির চাচা আবু তালেব আমার ৭ লাখ টাকা দাবী করে বলেন, টাকা দিলে এই মামলা আমরা উঠিয়ে নেব। তখন আমি তাকে বলি আমি নির্দোষ তাই আইনগতভাবে লড়ব। যারা অন্যায়ভাবে আমাকে ফাঁসিয়েছে আমি তাদের শাস্তি চাই। মেয়ের পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নয়ন বলেন, এটি ২/১ দিনের মধ্যে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

আরও খবর

Sponsered content