প্রতিনিধি ৭ এপ্রিল ২০২০ , ৭:০৬:০০ প্রিন্ট সংস্করণ
জনপ্রতি ৩৫ কেজি চাল প্রদান, ১শ’ টাকা হারে উৎকোচ আদায়
তালাশ প্রতিবেদক ॥
বরিশাল সদর উপজেলাধীন ১০ নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়নে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণের অভিযোগ। ভিজিএফ চাল বিতরণে ৪০ কেজি নির্ধারিত বরাদ্দের বিপরীতে জনপ্রতি প্রদান করা হচ্ছে ৩৫ কেজি করে। আবার সেই চাল প্রদান করতে অসহায় জেলেদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১শ’ টাকা হারে উৎকোচ। যার মূলহোতা ১নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের মেম্বার ফোরকান হোসেন।
চাল বিতরণে এমন অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় একটি বিশ্বস্ত সূত্রের দেয়া তথ্য ও সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে দেখা যায় তার বাস্তব চিত্র। পাশাপাশি দূর্নীতির কার্যপরিচালনায় অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার ও পরিষদের সচিব এর দেয়া বক্তব্যে স্থানীয় চেয়ারম্যান এ কে এম আজিজ হাওলাদারের সক্রিয় যোগসাজেশ ও সম্পৃক্ততার তথ্য বেড়িয়ে আসে।
সূত্রে জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নে ১২শ’ জন জেলে তালিকা থাকলেও ভিজিএফ কার্ডধারী ৬৮০ জন জেলের বিপরীতে মাসে ৪০ কেজি হিসেবে ফ্রেব্রুয়ারি ও মার্চে মোট ৮০ কেজি করে ১০৮৮ বস্তায় ৫৪ টন ৪শ” কেজি বরাদ্দকৃত চাল বরিশাল খাদ্য গুদাম থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়।
সরাসরি চেয়ারম্যান কর্তৃক বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার নিয়ম থাকেলেও চাল ছাড়িয়ে আনা ও বিতরণের দায়িত্ব অর্পিত ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফোরকান হোসেনে উপর। যার পরিপেক্ষিতে মেম্বারের ম্যানেজ পক্রিয়ায় নির্ধারিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অসহায় কর্মহীন জেলেরা।
এদিকে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, ইউপি মেম্বার তাদের জন্য নির্ধারিত নিয়মে বরাদ্দকৃত চাল প্রদান করছেন না। প্রভাব খাটিয়ে জনপ্রতি ৩০-৩৫ কেজি করে চাল নিতে বাধ্য করছেন মেম্বার ফোরকান। শুধু তাই নয় এই চাল নিতে হলে দিতে হচ্ছে মাথাপিছু ১’শ টাকা করে উৎকোচ।
এ বিষয়ে জেলেদের অভিযোগ নিয়ে অভিযুক্ত ইউপি মেম্বারের সাথে আলাপকালে অকপটে তিনি এমন অভিযোগের কথা স্বীকার করে জানান, “আসলে লুকানো তো কিছু নাই, যেইভাবে হওয়ার কথা সেইভাবে হইতাছে”।
এসময় জনপ্রতি সরকারি বরাদ্দের নিয়মের বিপরীতে চাল কম দেয়া এবং ১’শ টাকা করে উত্তোলনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বিভিন্ন খাতের হিসাব দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দোষারোপ করে বলেন- “কম না দিয়ে উপায় আছে বলেন। গোড়া থেকেই (খাদ্য গুদাম) জোড় করে কম ধরিয়ে দেওয়া হয়”। চাল ছাড়ানো হতে শুরু করে আনার খরচ, লেবার খরচ, আনুসাঙ্গিক খরচ সহ তার ব্যাক্তিগত খরচের বরাত দিয়ে তিনি জানান- এইগুলা মেকাপ করতেই এই টাকা জেলেদের কাছ থেকে নেওয়া হয়।
পরে অবশ্য প্রথম পর্যায়ে পরিষদের সচিব সুবত চন্দ্র দাসের দেয়া এক বক্তব্যে জানা যায় উল্লেখিত খাতের খরচ নাকি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বহন করা হয়। এসময় পরিষদ কর্তৃক এমন খরচের সুনির্দিষ্ট হিসাবের তথ্য দেখাতে না পেরে পরবর্র্তীতে সচিব বলেন- সব চেয়ারম্যান স্যার জানে, খরচ তিনিই করেন।
শুধু তাই নয় তালিকাভূক্ত কার্ডধারী ৬৮০ জন জেলেদের জন্য বরাদ্ধকৃত চাল বিতরণে আরো অনিয়মের তথ্য বের হয়ে আসে অনুসন্ধানকালে। চাল গ্রহণে জেলেদের নাম ঠিকানা সম্বলিত টিপসহ ফরমে ৬৮০ জনের তালিকা থাকলেও গত ফেব্রুয়ারীতে ২৮৩ জনকে চাল প্রদান করার হিসেব দেখা যায় ।
বাকি জেলেদের চাল কোথায় আছে এমন প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য পরিষদের সচিব ও অভিযুক্ত মেম্বার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে বলেন- “ভাই আসছেন, গাড়ির তৈল খরচটা নিয়ে যান, কত লাগবে বলেন! সব জায়গায় দিতে হয়। আপনাদের মেহমানদারী করার সুযোগ দেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব ও তদারকির বিষয়ে গাফলতির কারন জানতে চেয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সাংবাদিকরা চেয়ারম্যানের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষমান থাকলেও তিনি উপস্থিত হতে পারেনি। পরে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করতে চেষ্টা করা হলে সংযোগ না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।