প্রতিনিধি ২৫ এপ্রিল ২০২০ , ৬:০৭:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
এইচ আর হীরা :
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও ঝুঁকি বাড়লেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সচেতনতা বাড়েনি। গতকাল বরিশাল নগরীর উল্লেখযোগ্য এলাকায় ঘুরে অসচেতনভাবে লোকজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বাজার,পাড়া-মহল্লা ও গলিপথে লোকজন সামান্য প্রয়োজনেও বের হচ্ছে। ফুটপাতে নিরাপদ দূরত্ব মেনে না বসে মহল্লায় ঘুরে ফেরি করে অনেক বিক্রেতা সবজি বিক্রি করেছে। যেসব বাড়ি ও মহল্লা লকডাউন করা হয়েছে, সেগুলোর আশপাশেও দেখা গেছে একই রকম চিত্র। তবে এসব এলাকার অনেক বাসিন্দাই বলছেন, তাঁরা আতঙ্কিত। প্রতিটি এলাকায়ই পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সাধারণ মানুষকে সচেতনভাবে ঘরে ফেরাতে দেখা গেছে।গতকাল নথুল্লাবাদ,কাশিপুর,বাজার রোড,ফলপট্রি,চৌমাথা জিয়া সড়ক,কলেজ এভিনিউ, কাজি পাড়া,শিকদার পাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় আগের মতোই ফেরিওয়ালাদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। অলিগলিতে এসব ফেরিওয়ালা ও সবজি বিক্রেতার ভ্যানের অভাব নেই। তার পরও স্থানীয় বাজারগুলোতে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। সম্প্রতি বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মহানগর পুলিশ কাঁচাবাজার বন্ধ রেখে রাস্তায় এবং খোলা মাঠে দূরত্ব বজায় রেখে তরিতরকারি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রির নির্দেশ দেয়। কিন্তু ওই নির্দেশনা তেমন কোনো কাজেই আসছে না নথুল্লাবাদ ও বাজার রোড এলাকায়। গতকাল বাজার রোড এবং ফলপট্রি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট ওই বাজার ক্রেতায় ঠাসা। একজনের গা ঘেঁষে আরেকজন দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছে। দেখার যেনো কেউ নেই। এই বাজারের পাশের রাস্তাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান নিয়েও বিক্রি করা হচ্ছে তরিতরকারি। কিন্তু রাস্তার দোকানগুলোতে ভিড় কম। বাজার রোড,নথুল্লাবাদ,এবং রুপাতলি এলাকার সবখানে একই রকম ভিড় দেখা যায়। বাজারে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার কোনো চেষ্টাই কেউ করে না।তবে দুপুর ২টার পর এসব দোকান খোলা থাকে না। নথুল্ললাবাদ বাজারে কালাম নামের একজন ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘ভাই, কোথায় বাজার করব না করব তা বোঝাতে হবে না। সামনে রোজা আসছে। আমার বাজার কি আপনি বাসায় পৌঁছে দেবেন? যাঁর যাঁর কাজ করেন।এই বাজারের এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রশাসন জনগনের দূরত্ব বজায় রাখতে বাজার রাস্তার উপরে নিয়েছে,এমনকি রঙ করে দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষে ব্র্যাকেট করে দিয়েছে। তারপরেও জনগনের অসচেতনতার ফলে তারা নিজেরাই ভুক্তভূগি ,আমরা বললে কে শোনে কার কথা। নথুল্লাবাদ এলাকার ২৮ নং ওয়ার্ডের শের-ই বাংলা সড়কের গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির পাশে একটি গলি লকডাউন করে রাখা হলেও সেখানে লোকজনের চলাচল স্বাভাবিক ছিল। পাশেই খোলা দেখা যায় দোকানপাট।জানা গেছে, ১২ এপ্রিল দুইজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান এক গনবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই জেলাকে লকডাউন ঘোষনা করেন। লকডাউন ঘোষনার প্রথম দিক দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনার ভয়ে মানুষ ২/৩ দিন ঘরে থাকলেও পরে আবার সাবেক অবস্থায় ফিরে গেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই তারা প্রতিদিন ছুটছেন নগরীর বাজারগুলোতে। যতদিন যাচ্ছে ততই যেন ভীর বাড়ছে এই বাজারগুলোতে। অবশ্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ইতিমধ্যে নগরীর ৯টি গুরুত্বপূর্ন বাজারকে খোলা স্থানে সরিয়ে নেয়ার ঘোষনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবুও যেন ভীর কমছে না, ঠেকানো যাচ্ছে না জনসমাগম। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমের অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বরিশাল জেলাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪। এর মধ্যে নগরীতেই রয়েছেন ১১জন। যার মধ্যে বেশিরভাগই চিকিৎসক। তবে বিষয়টিকে তোয়াক্কা না করে সড়কে মানুষের ভীর বেড়েই চলছে।কতোয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিনই লোকজনকে নিরাপদে ঘরে থাকতে মাইকিং করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লকডাউন মানতেও বলা হচ্ছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।এমনকি প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থেনে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জরিমানা করার পরেও কিছু ব্যক্তি বাজারের অজুহাতে বের হয়ে জড়ো হয়। নিত্যপণ্য কেনা মানুষের নিত্যদিনের চাহিদা। এতে বাধাও দেওয়া যায় না।এয়ারপোর্ট থানাধীন এলাকার কাশিপুর,গড়িয়ার পাড়,নথুল্লাবাদ বাজারসহ বেশির ভাগ এলাকায় অসচেতন মানুষের ঘোরাঘুরি দেখা যায়।এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাহিদ বিন আলম বলেন, ‘আমাদের যতটুকু নির্দেশনা দেওয়া আছে, সে অনুযায়ী আমরা দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিদিন আমরা বিভিন্নভাবে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। বারবার বলছি ঘরে থাকার জন্য।গতকাল দুপুরে নথুল্লাবাদ বাজারে গিয়ে দেখা যায়,মানুষের ভিড় কমানোর জন্য সবজি বাজারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সড়কে বসা ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতাদের দোকানে ভিড় করছে মানুষ। মুদি দোকান, মুরগির দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে মানুষের ভিড়। একই রকম অবস্থা নগরীর বাজার রোড,নতুন বাজার,চৌমাথা,সোনা মিয়ার পোলসহ আশপাশের এলাকায়। শিরীন জামান নামে এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় নথুল্লাবাদে। তিনি বলেন, ‘জানি এভাবে বাজারে আসা উচিত হয়নি! কিন্তু রমজান চলে এসেছে, বাজার না করলে কিভাবে কী করব? তাই বাধ্য হয়েই এলাম। তবে এত মানুষের ভিড় হবে বুঝতে পারিনি।এদিকে গত (২২ এপ্রিল) বুধবার জিয়া সড়ক এলাকায় ১জন এবং পরের দিন পার্শ্ববর্তী এলাকা শের-ই বাংলা সড়কে আরো ১জন ব্যাক্তির করোনা শনাক্ত হওয়ার খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন,যে ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয়েছে তারা দুজন ঢাকা থেকে বরিশালে আসার পরেই অসচেতনতার কারনেই আক্রান্ত হয়েছেন তারা।সেই সাথে ঝুকিতে ফেলেছেন এলাকার অন্যান্য বাসিন্দাদের।তিনি আরো বলেন,যাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে তাদের বাড়ি থেকে কিছু লোক নিজেদের প্রয়োজনে বের হয়ে গলিতে ঘুরছে । এ কারণে আরো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, আমরা মানুষকে সচেতন করছি এবং যারা অযথা সড়কে বের হচ্ছেন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বলেন, কেউ যাতে অযথা বাইরে বের না হয় সেজন্য মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। টহল সহ জনসচেতনতায় প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়াও বাজারে জনসমাগম রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ।