প্রতিনিধি ২৯ এপ্রিল ২০২০ , ৯:২৪:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মারুফ হোসেন :-
বাংলায় একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’ হ্যা সম্প্রতি এমনই এক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন।
গত কয়েকদিন পূর্বে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সাথে গণভবণ থেকে ভিডিও কন্ফারেন্সে করোনা পরিস্থতি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারী নিয়মানুযায়ী বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমান। সেখানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার ইয়ামিন চৌধুরী, রেঞ্জ ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বিপিএম বার-পিপিএম, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার সহ প্রশাসনের উর্দ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য জায়গার মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুমতি প্রার্থণা করেন জেলা প্রশাসক, যে আপনি যার সাথে কথা বলতে চাইবেন আমি তার কাছেই দিবো। পরে প্রধানমন্ত্রী বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারের সাথে কথা বলে বরিশালের সার্বিক দিক সম্পর্কে জানেন। এই অনুষ্ঠান শেষে যুবরত্ন হিসেবে খ্যাত বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে উপস্থিত সকলের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং নগরীর খাবার সংকটে থাকা মানুষের মাঝে খাবার পৌঁছে দেয়া নিয়ে তার কার্যক্রম সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেন।
এই পুরো ঘটনাকে অন্যদিকে মোড় দিতে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক লাইভে আসেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করে বলেন যে বিসিসি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কোন ধরনের প্রশংসা করেন নি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এবং এই অভিযোগ করতে গিয়ে তিনি বরিশালের জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমানকে ‘আহাম্মক’ বলেও অবিহিত করেন। এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে। এতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুজনের প্রতি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, অতিরিক্ত তেলবাজি করা মোটেও ভালো লক্ষণ না, আমাদের অভিভাবক ভালো কাজ করছেন সেটা সবাই ই জানে, তার জন্যই বরিশালের খাবার সংকটে থাকা মানুষগুলোর ঘরে ঘরে আজ খাবার পৌঁছে যাচ্ছে কিন্তু সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সুজন মেয়র মহোদয়ের কাছে ভালো সাজতে গিয়ে একজন জেলা প্রশাসককে যেভাবে কটুক্তি করেছে তা সত্যি নিন্দনীয়। এ ঘটনায় অনেকেই ক্ষোপ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকেও স্ট্যাটাস দিয়েছেন এদের মধ্যে বিসিসির মেয়ররে অনুসারীরাও রয়েছেন।
সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সুজন কয়েকদিন পরপরই নানা ঘটনা জন্ম দিয়ে নিজেকে আলোচনায় রাখতে পছন্দ করেন। একের পর এক বিতর্কিত কাজ করে বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা হিসেবেও খেতাব পেয়েছেন তিনি। সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলায় একক অধিপত্য বিস্তার করে নানা অপকর্ম করে আসছেন সুজন। বরিশাল-ভোলা মহাসড়কেও রয়েছে তার চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই তাকে পরতে হয় রোষানলে।
সর্বশেষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সুজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। জানা যায়, গত শনিবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে সুজনের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ ওই সাবস্টেশন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখার কারন জানতে চান। এ সময় অফিসে উপস্থিত দায়িত্বরত লাইনম্যান জাফর ইকবাল এর ব্যাখ্যা দিলেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি সুজন। বরং উত্তেজিত হয়ে একর্যায়ে মারধর করেন। জাফর ইকবালকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে সহকর্মী মাহফুজুর রহমান, পরিতোষ চন্দ্র পাল এবং সুমন, তারাও রেহাই পায়নি সুজনের হাত থেকে। সন্ধ্যায় গুরুতর আহত জাফর ইকবালকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে দাপ্তরিক মিটিং এ সুজনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তারা বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন। অবশ্য এবিষয়ে সুজন সাংবাদিকদের জানান, রমজান মাসে সেহেরি, ইফতার, নামাজ কোন সময়ই তার এলাকার লোকজন বিদ্যুৎ পাচ্ছিলো না। এতে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার লোকজন বিদ্যুৎকেন্দ্রে গিয়ে এ ঘটনার কারণ জানতে চায়। তখন লাইনম্যান জাফর ইকবাল এলাকাবাসীদের সাথে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। তাকে কেউ মারধর করেনি বলে দাবি সুজনের। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে অবশ্য সুজনকে নির্দোষ সাজাতে তার ৪/৫ জন অনুসারী তাদের আইডিতে এঘটনা মিথ্যা দাবী করেন। প্রিয় পাঠক শুধু এই ঘটনাই নয়, সুজনের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও একাধিক অভিযোগ।
একটু পিছনে ফিরে তাকাতে চাই গত বছরের ২৪ নভেম্বর বেশ কিছু গণমাধ্যমের শিরোনাম ছিলো এমন ‘বরিশাল ছাত্রলীগ নেতা সুজনের প্রকাশ্য সন্ত্রাস, থানায় জিডি’ হ্যা সুজনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ছাত্রলীগ কর্মী সিদ্দিকও। ‘বরিশাল জুড়ে ছাত্রলীগ নেতা সুজনের ত্রাস, সহিষ্ণু শহরে শুরু হলো রাজনৈতিক সন্ত্রাস’ এটি চলিত বছরের জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহের কিছু গণমাধ্যমের শিরোনাম। এরকম বহু বার নানা কর্মকান্ড করে নিজেকে তথা ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করছেন সুজন।
এ বিষয়ে বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দৈনিক আজকের তালাশকে বলেন, দলের ভাবমূর্তি যারা নষ্ট করবে তারা ছাত্রলীগের হতে পারে না । কেনো সে এমন মন্তব্য করেছে তা আমার জানা নেই, সে এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারে না। কারন সেখানে আমি সহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাত দৈনিক আজকের তালাশকে জানান এ রকম অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেয়া হবে ।
এদিকে সুজনের এমন বিতর্কিত কর্মকান্ডে দক্ষিণ বাংলার রাজনৈতিক অভিভাবক মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও মেয়র যুবরত্ন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কাছে উপযুক্ত বিচারের দাবী জানিয়েছেন তৃণমূল ছাত্রলীগ।